ভুতুড়ে কান্ড দেখে ভীত ও সন্ত্রস্ত উত্তরপাড়ার মৈত্র পরিবার

নিজস্ব সংবাদদাতা : ভুতুড়ে কান্ড!কখনো নিজে থেকে চেয়ার সরে যাচ্ছে, আবার কখনো কাচের গ্লাস শূন্যে লাফিয়ে উঠে ফের মাটিতে আছড়ে পড়ছে৷ কখনো বা নিজে থেকেই ঘরের বিছানায় আগুন লেগে যায়। এই সব ভুতুড়ে কান্ড দেখে ভীত ও সন্ত্রস্ত উত্তরপাড়ার মৈত্র পরিবার। ভূতের ভয়ে এক সময় বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে গিয়েছিল ওই পরিবার। প্রায় সারে তিন মাস পর বাড়ি ফিরেও এসেও দেখেন একই কাণ্ড ঘটছে৷ ভয়ে বিজ্ঞান মঞ্চের দ্বারস্থ হন মৈত্র পরিবার। শনিবার উত্তরপাড়া বিজ্ঞান মঞ্চের সদস্যরা দীপঙ্কর মৈত্র ও তার পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে বাড়িতে যান। খতিয়ে দেখেন তাঁরা জানান, কোনও অলৌকিক ঘটনা নয়, পুরোটাই লৌকিক, এর পিছনে পরিবারেরই কারও হাত রয়েছে বলে মনে করছেন বিজ্ঞান মঞ্চের সদস্যরা। মোবাইলে ফোন এলেও নম্বর না দেখিয়ে স্টার দেখানো সহ গোটা বিষয়টি পুলিশকে জানানোর পরামর্শ দেন বিজ্ঞান মঞ্চের সদস্যরা।উত্তরপাড়া ৩৫ রামলাল দত্ত লেনের বাসিন্দা দীপঙ্কর মৈত্র। কলকাতায় কনসালটেন্সির কাজ করেন। তার স্ত্রী তনুশ্রী মৈত্র আঁকা শেখান। ছেলে দীপ্তাক্ষ উত্তরপাড়া অমরেন্দ্র বিদ্যাপিঠের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র। দীপঙ্করবাবু জানান, গত বছর ভাইফোঁটার পর থেকে তাঁর বাড়িতে অদ্ভুত সব কাণ্ডঘটতে থাকে। কখনো রাত্রে শুয়ে আছেন বিছানা জলে ভিজে গেল, কখনো আবার হঠাৎ করে আগুন লেগে গেল বিছানার চাদরে, চেয়ার নিজে থেকেই সরে যাওয়া, কাঁচের গ্লাস হঠাৎ করে উপরে লাফিয়ে উঠছে তো কখনো পাথরের টুকরো লেগে আলমারির কাঁচ ভেঙে যাচ্ছে। কখনো আবার ফোন করে কেউ বলছে আলমারি খুলে দেখ টাকা নেই।

    তিঁনি আরও জানান, দিন দশেক আগে তাঁর ছেলে দীপ্তাক্ষ বিকালে পড়তে বেড়িয়ে নিখোঁজ হয়ে যায়। কয়েক ঘন্টা খোঁজাখুঁজির পর নিজেই বাড়ি ফেরে এসে জানায় কোন্নগর শ্মশানে কেউ তাকে নিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু কীভাবে তা জানেনা সে। এমন সব আজব কাণ্ড ঘটতে থাকায় রীতিমত আতঙ্কিত হয়ে পড়েন মৈত্র দম্পতি। কোন্নগরে শ্বশুর বাড়ি থেকে আবার উত্তরপাড়ার বাড়িতে ফেরেন। কোন্নগরে থাকাকালীন কোনো সমস্যা নেই, উত্তরপাড়ার বাড়িতে ফিরতেই একই ঘটনা ঘটতে থাকে। তনুশ্রীর দাদা প্রণব আদক বোনের বাড়িতে প্রকৃত কী ঘটছে জানতে পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। বিজ্ঞান মঞ্চের সদস্যরা দীপঙ্কর বাবু ও তাঁর পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে বাড়িতে ঢোকেন। বাড়ির দোতালায় দুটি বেডরুম, একটা ডায়নিং ও একটি বৈঠকখানা রয়েছে। মেঝেতে ভাঙা কাঁচের টুকরো, লোহার কয়েকটি যন্ত্রপাতি ছড়ানো। দীপ্তাক্ষ মাটি দিয়ে ঠাকুর গড়ে। যে দুর্গা ঠাকুর তৈরী করে পুরষ্কার পেয়েছিল, তার হাত ভাঙা। চেয়ারের গদি আগুনে পোড়া সবকিছু দেখান দীপঙ্কর বাবু।। পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের হুগলি জেলা সম্পাদক অমিত মুখার্জী বলেন, যে সব ঘটনার কথা বলছেন সেটা বাইরে থেকে ঘটার কোনো জায়গা নেই৷ সামান্য পরিমাণে পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেটের সঙ্গে গ্লিসারিন মিশলেই আগুন জ্বলে ওঠে।। গদির স্পঞ্জে এখনো যে গন্ধ রয়েছে, তাছাড়া সেখানে গ্লিসারিনের উপস্থিতি পাওয়া গিয়েছে। এটা লৌকিক ঘটনা। ঘরের ভিতর থেকেই পাথর ছুঁড়ে কাঁচ ভাঙা হয়েছে। ভাঙাভাঙি সবটাই ভিতর থেকে হচ্ছে। আমাদের মনে হচ্ছে লৌকিক কোনো সূত্র এই ঘরের মধ্যেই লুকিয়ে আছে।