কিশোরীকে অপহরণ করে শারীরিকে নিগ্রহ, ১৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড অপরাধীর

নতুন গতি নিউজ ডেস্ক: গত বছরের ঘটনা। ১২ জুলাই মানিকতলা থানায় একটি গুরুতর অভিযোগ দায়ের করেন একজন মহিলা। জানান, তাঁর নাবালিকা মেয়েকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি ইকবালপুরের বাসিন্দা। মানিকতলায় তাঁর পৈতৃক বাড়ি। ১১ জুলাই, মানিকতলার বাড়িতে ঘুরতে যাবে বলে ইকবালপুরের বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল মেয়েটি। তারপর থেকেই সে নিখোঁজ।

    অভিযোগ পেয়ে দ্রুত তদন্তে নেমে পড়ে মানিকতলা থানার বিশেষ টিম। স্থানীয়দের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায়, মেয়েটিকে শেষ দেখা গেছে একজন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির সঙ্গে। মেয়েটির মা জানিয়েছিলেন, শেখ আজহারউদ্দিন নামে এক প্রতিবেশীর নজর ছিল কিশোরীটির ওপর। নানা ছুতোয় সে বারবার তাঁর মেয়ের সঙ্গে আলাপ জমানোর চেষ্টা করত। আজহারউদ্দিনের চেহারার যে বর্ণনা দিয়েছিলেন সেই মহিলা, তার সঙ্গে সেই অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির চেহারার বর্ণনাও হুবহু মিলে যাচ্ছিল।

    সেই দিনই, সাব ইনস্পেকটর সন্তোষ কুমার শা-এর নেতৃত্বে মানিকতলা থানার বিশেষ টিম তল্লাশি চালায় শেখ আজহারউদ্দিনের বাড়িতে। বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয় সেই কিশোরীকে। শেষ মুহূর্তে পিছনের দরজা দিয়ে পালায় আজহারউদ্দিন।

    মেয়েটি জানায়, আজহারউদ্দিন তাকে শারীরিকভাবে নিগ্রহ করেছে। বেশ কিছুদিন ধরেই তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছিল আজহারউদ্দিন। সেদিনও একা বেরোতে দেখে সে মেয়েটির পিছু নেয়। কথা বলার ফাঁকে মেয়েটিকে নানাকিছু কিনে দেওয়ারও লোভ দেখায় সে। বয়স কম, প্রলোভনে পা দিয়ে ফেলে মেয়েটিও। আজহারউদ্দিন তখন বাড়ি থেকে টাকা নেওয়ার অছিলায় তাকে নিয়ে আসে নিজের বাড়িতে। তারপর বলপূর্বক মেয়েটিকে শারীরিক নিগ্রহ করে সে। ভয় দেখিয়ে তাকে ঘরে আটকে রেখেছিল আজহারউদ্দিন। পুলিশ গিয়ে সেই দিনই উদ্ধার না করলে আরও বড় অনিষ্ট ঘটতে পারত।

    কিশোরীটির মেডিকেল রিপোর্টেও শারীরিক নিগ্রহের প্রমাণ মেলে। আজহারউদ্দিনের খোঁজ শুরু হয়। খবর দেওয়া হয় সোর্সদেরও।

    সুএ মারফত খবর পেয়েই গত ২০ মার্চ মানিকতলা থেকে আজহারউদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে মানিকতলা থানার বিশেষ টিম। তার বিরুদ্ধে অপহরণ ও পসকো (Protection of Children from Sexual Offences Act) আইনে মামলা রুজু হয়। উপযুক্ত সাক্ষ্যপ্রমাণ-সহ চার্জশিট জমা দেওয়া হয় দ্রুতই।

    সেই মামলারই রায় বেরিয়েছে। আজহারউদ্দিনের ১৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছেন মাননীয় বিচারক। সঙ্গে ৬০,০০০ টাকা জরিমানা। এই জরিমানার ৯০% টাকাই ক্ষতিপূরণ বাবদ যাবে কিশোরী মেয়েটির কাছে। জরিমানা অনাদায়ে কারাদণ্ডের মেয়াদ বাড়বে আরও ৬ মাস।

    নিষ্ঠাবান তদন্তে অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত করেছেন এই কেসের তদন্তকারী অফিসার মানিকতলা থানার তৎকালীন সাব ইনস্পেকটর সন্তোষ কুমার শা। সাব ইনস্পেকটর সন্তোষ কুমার শাহ বর্তমানে লেক থানায় কর্মরত।