|
---|
শুভ জন্মদিন লিওনেল আন্দ্রেস ‘মেসি’
নাজমুল হালদার : ফুটবল বিশ্বের এক নতুন বিস্ময় প্রতিভা তিনি। পায়ের জাদুতে সৃষ্টি করে চলেছেন একের পর এক বিস্ময়। তাক লাগিয়ে দিচ্ছেন গোটা পৃথিবীকে। যে ম্যাচে তাকে দেখা যায়, ফুটবল অনুরাগী মাত্রই নড়েচড়ে বসেন। শুধু তাই নয়, বিপক্ষ শিবিরেও তিনি এক আতঙ্কের নাম। তিনি লিওনেল আন্দ্রেস মেসি।
লিওনেল আন্দ্রেস মেসি মাত্র ২১ বছর বয়সেই মেসি বালোঁ দ’অর এবং ফিফা বর্ষসেরা খেলোয়াড় পুরস্কার দুটির জন্য মনোনীত হন। পরের বছর, তিনি প্রথমবারের মত বালোঁ দ’অর এবং ফিফা বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জেতেন।
২০১০ সাল থেকে বালোঁ দ’অর এবং ফিফা বর্ষসেরা খেলোয়াড় পুরস্কার দুটিকে এক করে নাম দেওয়া হয় ফিফা বালোঁ দ’অর। উদ্বোধনী বছরেই এই পুরস্কার জিতেন তিনি। এরপর ২০১১ এবং ২০১২ সালের পুরস্কারও জিতেন তিনি। ২০১১/১২ মৌসুমে তিনি ইউরোপের সেরা খেলোয়াড়ও নির্বাচিত হন।
২৪ বছর বয়সেই তিনি সব ধরণের অফিসিয়াল প্রতিযোগিতায় বার্সেলোনার সর্বোচ্চ গোলদাতায় পরিণত হন। ২৫ বছর বয়সে, তিনি লা লিগায় সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে ২০০ গোল করার কৃতিত্ব অর্জন করেন। অনেক ভাষ্যকার, ফুটবল বিশেষজ্ঞ, নামিদামি কোচ এবং খেলোয়াড় তাঁকে বর্তমান সময়ের সেরা এবং সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফুটবলার হিসেবে দাবী করে থাকেন।
ফুটবলের ইতিহাসে প্রথম এবং একমাত্র খেলোয়াড় মেসি, যিনি টানা চারটি ফিফা/বালোঁ দ’অর পুরস্কার জিতেছেন। এছাড়া প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে তিনি তিনটি ইউরোপীয়ান ‘গোল্ডেন সু’ পুরস্কারও জিতেছেন। বার্সেলোনার হয়ে মেসি ছয়টি লা লিগা, দুইটি কোপা দেল রে, পাঁচটি স্পেনীয় সুপার কোপা, তিনটি উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লীগ, দুটি উয়েফা সুপার কাপ এবং দুটি ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ শিরোপা জিতেছেন।
মেসি প্রথম এবং একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে টানা চারটি চ্যাম্পিয়নস লীগে সর্বোচ্চ গোল প্রদান করেছেন এবং প্রতিযোগিতায় তাঁর সর্বোচ্চ হ্যাট্রিকেরও রেকর্ড রয়েছে (৪টি)। ২০১২ সালের মার্চে, চ্যাম্পিয়নস লীগে বেয়ার লেভারকুজেনের বিপক্ষে পাঁচ গোল করে ইতিহাস গড়েন।
এছাড়া তিনি চ্যাম্পিয়নস লীগের এক মরশুমে হোসে আলতাফিনির করা ১৪ গোলের রেকর্ডও স্পর্শ করেন। ২০১১/১২ মৌসুমে সব ধরণের প্রতিযোগিতায় ৭৩ গোল করার মাধ্যমে ইউরোপীয় ফুটবলে এক মরশুমে সর্বোচ্চ গোল করার রেকর্ড গড়েন মেসি। ঐ একই মরশুমে, লা লিগায় ৫০ গোল করার মাধ্যমে লা লিগার এক ক্যালেন্ডারে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ডও গড়েন তিনি।
মেসি ফুটবল ইতিহাসের প্রথম খেলোয়াড় যিনি একই মরশুমে ছয়টি আলাদা অফিসিয়াল প্রতিযোগিতায় গোল এবং গোলে সহায়তা উভয়ই করেছেন।
২০১৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি, মেসি বার্সেলোনার হয়ে তার ৩০০তম পূর্ণ গোল করেন। ২০১৩ সালের ৩০ মার্চ, মেসি লা লিগায় টানা ১৯ গোল করার কৃতিত্ব অর্জন করেন। এ’সবের মাধ্যমে ইতিহাসের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে লীগের সবকটি দলের বিপক্ষে টানা গোল করার রেকর্ড গড়েন তিনি। অবশ্য, তিনি টানা ২১টি ম্যাচে গোল করেছিলেন।
মেসি আর্জেন্টিনাকে ২০০৫ ফিফা অনুর্ধ্ব ২০ বিশ্বকাপ জয়ে সাহায্য করেন। প্রতিযোগিতায় তিনি সর্বোচ্চ ছয়টি গোল করেন এবং সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন। ২০০৬ সালে আর্জেন্টিনার সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে তিনি বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করেন। ২০০৭ সালে, কোপা আমেরিকায় আর্জেন্টিনা রানার-আপ হয় এবং তিনি প্রতিযোগিতার কনিষ্ঠ সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন।
২০০৮ সালে, বেইজিং অলিম্পিকে আর্জেন্টিনা অলিম্পিক ফুটবল দলের হয়ে মেসি স্বর্ণপদক জিতেন। এটিই ছিল তার প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মাননা। খেলার ধরণ এবং দৈহিক গঠনের কারণে তাঁকে তারই স্বদেশী দিয়েগো মারাদোনার সাথে তুলনা করা হয়— যিনি নিজেই মেসিকে তার ‘উত্তরসূরি’ হিসেবে ঘোষণা করেছেন।
মেসির বাবা হোর্হে হোরাসিও মেসি স্টিল কারখানায় কাজ করতেন এবং মা সেলিয়া মারিয়া কুচ্চিত্তিনি ছিলেন একজন পার্ট-টাইম ক্লিনার। তাঁর পৈতৃক পরিবারের আদি বাসস্থান ছিল ইতালির আকোনা শহরে। তার পূর্বপুরুষদের একজন অ্যাঞ্জেলো মেসি, ১৮৮৩ সালে সেখান থেকে আর্জেন্টিনায় চলে আসেন। পাঁচ বছর বয়সে, মেসি স্থানীয় ক্লাব গ্রান্দোলির হয়ে ফুটবল খেলা শুরু করেন, যেখানে কোচ ছিলেন তাঁর বাবা হোর্হে।
১১ বছর বয়সে, মেসির গ্রোথ হরমোনের সমস্যা ধরা পড়ে। স্থানীয় ক্লাব রিভার প্লেট মেসির প্রতি তাদের আগ্রহ দেখালেও, সেসময় তারা মেসির চিকিৎসার খরচ বহন করতে অপারগ ছিল। যার পরিমাণ ছিল প্রতি মাসে প্রায় ৯০০ মার্কিন ডলার। বার্সেলোনার তৎকালীন ক্রীড়া পরিচালক কার্লেস রেক্সাচ মেসির প্রতিভা সম্পর্কে জানতে পারেন। তিনি মেসির খেলা দেখে মুগ্ধ হন। হাতের কাছে কোনো কাগজ না পেয়ে একটি ন্যাপকিন পেপারে তিনি মেসির বাবার সাথে চুক্তি সাক্ষর করেন। বার্সেলোনা মেসির চিকিৎসার সমস্ত ব্যয়ভার বহন করতে রাজি হয়। এরপর মেসি এবং তাঁর বাবা বার্সেলোনায় পাড়ি জমান। সেখানে মেসিকে বার্সেলোনার যুব একাডেমী লা মাসিয়াতে নথিভুক্ত করা হয়।
মেসি অন্যান্য খেলোয়াড়দের তুলনায় অধিক ক্ষিপ্র এবং তিনি অতি দ্রুত গতিপথ পরিবর্তন করতে পারেন। এছাড়াও তিনি কৌশলে ট্যাকল এড়িয়ে যেতে পারেন। তাঁর ছোট ও শক্তিশালী পায়ের কারণে অতি অল্প সময়ে তিনি অধিক গতি অর্জন করতে পারেন। তাঁর দ্রুতগতির পা তাঁকে গতিশীল অবস্থায়ও ড্রিবলিং করার সক্ষমতা প্রদান করে।
লিওনেল আন্দ্রেস মেসি ১৯৮৭ সালের আজকের দিনে (২৪ জুন) আর্জেন্টিনার রোজারিওতে জন্মগ্রহণ করেন।