কালিয়াচক কলেজে আন্তর্জাতিক অনলাইন সেমিনার

নতুন গতি, মালদা: ইন্টারন্যাশনাল সেমিনার অনুষ্ঠিত হয় কালিয়াচক কলেজের উদ্যোগে এবং ইতিহাস বিভাগের পরিচালনায় বিষয় হিসাবে নির্বাচিত ছিল আনসাঙ্গ হিরোজ ইন কলোনিয়াল ইন্ডিয়া অর্থাৎ উপনিবেশিক ভারতবর্ষের অনালোচিত নায়ক বৃন্দ। অনলাইন এই সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন কালিয়াচক কলেজের অধ্যক্ষ নজিবর রহমান। সভাপতির ভাষণে ডক্টর নাজিবর রহমান বিষয়বস্তুর উপস্থাপনের সাথে সাথে জাতির প্রতি কালিয়াচক কলেজের অবদান তুলে ধরতে গিয়ে বলেন হাজার 1995 সালের এই কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয় এলাকার সাধারন খেটে খাওয়া মানুষের বিশেষ করে নারী সমাজের উচ্চ শিক্ষা অর্জনের প্রয়োজনে। আজকের দিনে আধুনিক টেকনোলজি ব্যবহার করে পাঁচটি স্মার্ট ক্লাসরুম, একটি ল্যাঙ্গুয়েজ ল্যাবরেটরী এর মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। শিক্ষক শিক্ষিকা ও শিক্ষা কর্মীদের আন্তরিক প্রয়াসের মাধ্যমে এবং ছাত্র-ছাত্রীদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে এই কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন বিভাগে স্ট্যান্ড করেছে, এনসিসি ক্যাডেট রাজ্যপালের মেডেল লাভ করেছে , এনএসএস ভলান্টিয়ার্স মুখ্যমন্ত্রীর 26 শে জানুয়ারি প্যারেডে অংশগ্রহণ করার চান্স পেয়েছে, ছাত্র-ছাত্রীরা টাটা সার্ভিসেস কনসালটেন্সি এবং অ্যামাজনের মত আন্তর্জাতিক কোম্পানিতে কর্মসংস্থানের সুযোগ করে নিয়েছে। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক গাজেন কুমার বরুই, ইতিহাস বিভাগের বিভাগীয় প্রধান রিতব্রত গোস্বামী এই বিভাগের ই শিক্ষক রাজেন হেমব্রম ।

    এই আন্তর্জাতিক আলোচনা সভার উদ্বোধনী ভাষণে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ এশিয়াটিক সোসাইটির প্রাক্তন কর্মকর্তা, মাওলানা আবুল কালাম আজাদ মহাবিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক ডক্টর শিব রঞ্জন চ্যাটার্জী উল্লেখ করেন স্বাধীনতা আন্দোলনের চর্চিত নেতা নেতৃত্ব যেমন গান্ধী , নেহেরু , নেতাজি সহ স্বাধীনতা সংগ্রামী ঢাকার হেমচন্দ্র এর কথা। প্রথম আলোচক বিশিষ্ট ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের পথিকৃৎ উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক আনন্দ গোপাল ঘোষ উল্লেখ করেন ভারতের সাবঅলটার্ন বা প্রান্তীয় নায়ক বৃন্দ দের স্বাধীনতা আন্দোলনে ও দেশ গঠনে যথার্থতা মূল্যায়ন করা হয়নি ইতিহাসে চর্চা হয় নি। বড় নায়কদের চর্চার গুরুত্ব হিসেবে তুলে ধরতে গিয়ে বলেন এমনকি আফগানিস্তানের কাবুল বিশ্ববিদ্যালয় প্লেটো কে পড়ানো হয় কিন্তু অন্য নায়ক দের তুলে ধরা হয় না। এমনকি দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের ত্যাগ ও কৃতিত্বকে সম্মান জানানো হয় না গান্ধীজী নিয়ে যত চর্চা হয়।
    দ্বিতীয় আলোচক বাংলাদেশের পাবনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর, আন্তর্জাতিক মানের ইতিহাসবিদ প্রফেসর আনোয়ারুল ইসলাম দুই বাংলার স্বাধীনতা আন্দোলন কারীদের আলোচনা করতে গিয়ে এপার বাংলা ওপার বাংলায় গান্ধীজীর সহযোগীদের নিয়ে আরও আলোচনার ও গবেষণার দাবি করেন। বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমানের আন্দোলনে ভারতবর্ষের জনগণের সমর্থন কে ধন্যবাদ জানান। হরিপ্রভা মল্লিক জাপানিদের সাথে এবং বাঙ্গালীদের একটা সম্পর্ক গড়ে তোলেন রাসবিহারী বসু জাপান ও বাঙালির যোগসুত্র গড়ে তোলার চেষ্টা করেন ফলে জাপানিরা ভারতীয় আন্দোলনের সমর্থনে বিভিন্ন ভাবে এগিয়ে আসে । তৃতীয় আলোচক , বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় এর অধ্যাপক ও বিশিষ্ট গবেষক শুভায়ু চট্টোপাধ্যায় তার টেকনিক্যাল সেশনের বক্তব্যে বিভিন্ন যোগ্য ব্যক্তিত্বের উল্লেখ করতে গিয়ে উদ্যগপতি হেমেন্দ্র মোহন বোস এর কৃতিত্ব তুলে ধরেন । স্বাধীনতা আন্দোলনে স্বরাজ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে স্বদেশী দ্রব্য উৎপাদনের অগ্রগণ্য ভূমিকা পালন করে যে অবদান রেখেছিলেন এই প্রজন্মের স্মরণযোগ্য।
    বিভিন্ন কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের দেড় শতাধিক শিক্ষক শিক্ষিকা ছাত্র-ছাত্রী গবেষক গবেষিকা ও সাংবাদিক অংশগ্রহণ করেন। প্রায় 10 জন অধ্যাপক অধ্যাপিকা পেপার প্রেজেন্ট বা প্রবন্ধ পাঠের মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয়ের উপর আলোকপাত করে আন্তর্জাতিক সেমিনার কে সমৃদ্ধ করেন।