|
---|
নিজস্ব প্রতিবেদক:- ভোর চারটে,সেভাবে আলো ফোটেনি এলাকায়। প্রতিবেশীদের বেশিরভাগই ঘুমোচ্ছিলেন। হঠাৎই কানে এসেছিল চিৎকারটা। মাস্টারমশাইয়ের বাড়ি ততক্ষণে গ্রাস করেছে আগুনে। কালো ধোঁয়ার গোটা এলাকা ঢেকেছে। তারই মধ্যে দোতলার পূর্ব দিকের জানলার পাল্লাটা খুলে কোনওক্রমে চিৎকার করে প্রতিবেশীদের ডেকেছিলেন ওঁরা। বাড়ির একতলা পুরোটাই জ্বলছে দাউ দাউ করে। দৃশ্য দেখে প্রথমে ঘাবড়ে যান প্রতিবেশীরা। মুহূর্তেই আকস্মিকতার রেশ কাটিয়ে তাঁরা নেমে পড়েন ‘অপারেশনে’। প্রথমে পাশের বাড়ির ছাদ টপকে সানসেটে ওঠেন। লোহার শিক দিয়ে জানলার রড বেকিয়ে সেই গ্রিলকেই ল্যাডার হিসাবে ব্যবহার করেন। তারপর সেই ফাঁক দিয়েই এক-এক জন করে নামিয়ে আনেন বাড়ির সক্কলকে। একেবারে ফিল্মি কায়দায় চরম সাহসিকতার সঙ্গে দোতলার জানালার গ্রিল ভেঙে প্রতিবেশীরা উদ্ধার করলেন দুর্গতদের। ঘটনাটি ঘটেছে বিষ্ণুপুরের শালবাগান এলাকায়। পরে দমকলের দুটি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বিষ্ণুপুর শহরের শালবাগান এলাকার বাসিন্দা গুইরাম প্রতিহার তাঁর ছেলে, পুত্রবধূদের নিয়ে থাকেন। তাঁর দুই ছেলেই প্রাথমিক শিক্ষক। তাই ওই বাড়িকে মাস্টারমশাইয়ের বাড়ি বলেই ডাকেন প্রতিবেশীরা। রবিবার ভোরে আচমকাই সেই বাড়িতেই আগুন ধরে যায়। ভোর রাতে আগুন লাগে। কিন্তু বাড়ির সদস্যরা যখন আগুন দেখতে পান, তখন একতলা পুরোটাই আগুনের গ্রাসে। সিঁড়ি দিয়ে কুণ্ডলীকৃত ধোঁয়া ওপরে উঠে এসেছে। জানলা খুলেই তাঁরা প্রতিবেশীদের ডেকেছিলেন।প্রাথমিক ভাবে পরিবারের ধারণা, বাড়িতে চার্জে বসানো ইলেকট্রিক বাইক থেকেই কোনওভাবে আগুন লেগে যায়। বাড়িতে আগুন লেগেছে বুঝতে পেরেই বেরোনোর চেষ্টা করেন পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু কালো ধোঁয়া আর আগুনের হলকায় তা আর সম্ভব হয়নি। শেষ অবধি দোতলার একটি ঘরে উঠে সাহায্যের জন্য চিৎকার করতে শুরু করেন পরিবারের সদস্যরা। প্রতিবেশীরা পাশের বাড়ির ছাদ থেকে জানালার গ্রিল ভেঙে দুর্গতদের পাশের বাড়ির ছাদে উদ্ধার করে নিয়ে আসে। পরিবারের দাবি, প্রতিবেশীরা ওই বাড়ি থেকে শিশু ও মহিলা-সহ মোট ১১ জনকে উদ্ধার করেছেন। পরে দমকলের দুটি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নেভায়। প্রতিবেশীদের সাহসিকতাকে প্রশংসা করলেন দমকলকর্মীরাও।