অধীর গড়ে বিজেপি! হাত কী পদ্মে কাঁটা? কংগ্রেস শিবিরে উঠছে প্রশ্ন?

জৈদুল সেখ, বহরমপুর: সারাবাংলা জুড়েই এক সময় অধীর রঞ্জন চৌধুরীর পরিচিত ছিল মুর্শিদাবাদের রবীনহুড নামে। আর সেই ররবীনহুড কংগ্রেস যুগের অবসান নাকি গভীর চক্রান্ত! ভোট মিটলেও, বহরমপুর শহর জুড়ে সোমবার সকাল থেকে শুরু হয়েছে জোর গুঞ্জন। বিধানসভা নির্বাচনে মুর্শিদাবাদে শূন্য পেয়েছে কংগ্রেস জোট। জেলার ২০ টি সিটে হয় নির্বাচন। ১৮ টি সিট গিয়েছে তৃণমূলের দখলে; ২ টি সিট পেয়েছে বিজেপি।

    বেশিরভাগ সিটেই মুখোমুখি লড়াই হয়েছে তৃনমূল কংগ্রেস এবং বিজেপি’র। দীর্ঘদিনের অধীর গড় খোদ বহরমপুরেই জিতেছে বিজেপি। বিজেপি জিতেছে কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি মুর্শিদাবাদেও। তাছাড়া কান্দি, বড়ুয়ায় কংগ্রেস সঙ্গে তৃণমূলের লড়াই হওয়ার কথা থাকলেও চমকদিয়ে বিজেপি দ্বিতীয় স্থানে, কংগ্রেস যেন কোন ফ্যাক্টর নয়। এখানে অধীরের নেতৃত্ব নিয়ে উঠছে প্রশ্ন?

    পদ্মফুলের কাটা পড়লো কংগ্রেসের ‘হাত’ নাকি হাতে পদ্মে কাঁটা? যাতে ভেঙে চুরমার হয়ে গেল অধীরের খাসতালুক বহরমপুর। ঘাসফুলকে সরিয়ে রেকর্ড পরিমাণ ভোটে হাত চিহ্নের প্রার্থীকে হারিয়ে কমল ফুটল বহরমপুরে। এরপর থেকেই সন্ধ্যে থেকে পুরো সদর শহর জুড়ে একটাই চর্চা একটাই আলোচনা কি করে সম্ভব হল এই ঘটনা। শেষ পর্যন্ত অধীরের নিজের খাস তালুকে তার সেনাপতি মনোজ চক্রবর্তী এমন ধরাশায়ী অবস্থা কিভাবে হল, যেখানে তাকে বিজেপি প্রার্থী সুব্রত মৈত্র ওরফে কাঞ্চন এর কাছে দ্বিগুণেরও বেশি ভোটে হারতে হলো চূড়ান্ত ফলাফলে। যেখানে অধীর এর সেনাপতি বলে পরিচিত মনোজ চক্রবর্তী সর্বসাকুল্যে পেয়েছেন ৩৯,৩৭৭টি ভোট । আর গেরুয়া শিবিরের জয়ী দ্বিগুণ ভোটে সুব্রত মৈত্র পেয়েছেন ৮৭,৭৫৯ ভোট। এর পরেই রীতিমতো কংগ্রেস কার্যালয়ে নেমে এসেছে অন্ধকারের ছায়া ।
    উল্লেখ্য ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্রে কংগ্রেস প্রার্থী মনোজ চক্রবর্তী জিতেছিলেন৷ তাঁর প্রাপ্ত ভোট ছিল ১ লক্ষ ২৭ হাজার ৭৬২৷ দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন তৃণমূল প্রার্থী ড.‌ সুজাতা বন্দোপাধ্যায়। তাঁর প্রাপ্ত ভোট সংখ্যা ছিল ৩৫ হাজার ৪৮৯৷ কংগ্রেস প্রার্থী মনোজ চক্রবর্তী তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূল প্রার্থী ড.‌ সুজাতা বন্দোপাধ্যায়কে ৯২ হাজার ২৭৩ ভোটে পরাজিত করেছিলেন। কিন্তু একুশের নির্বাচনে কেন এই ফল ? চিন্তায় কংগ্রেস শিবির।

    দলের অধিকাংশ নেতা কর্মী তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেওয়াকেই হারের কারণ হিসেবে চিহ্নির করছে, তাছাড়া কংগ্রেসের বক্তব্য গ্রাম স্তরে আমাদের পুরোনো নেতাদের বেশিরভাগই তৃণমূল কংগ্রেসে নাম লিখিয়েছে। হাতে নেই কোন নির্বচিত গ্রাম পঞ্চায়েতও। ফলে, কংগ্রেসের কাছে আসছেন না কোন মানুষই।

    রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা অনেকেই মনে করছেন, এনআরসি-সিএএ নিয়ে চিন্তায় আছেন জেলার অধিকাংশ মানুষ। এর ফলের ধর্মীয় সংখ্যালঘু মানুষের ভোটের বড়ো অংশ এককাট্টা ভাবেই গিয়েছে তৃণমূলের ঝুলিতে। আর সেই বুঝেই, তৃণমূল বিরোধী ভোটের দখল নিয়েজে রাজ্যে সরকার গঠনের দাবি করে ভোটে লড়া বিজেপি। কংগ্রেস, জোটকে গ্রহণযোগ্য বিকল্প মনে করেননি জেলার মানুষ। তৃণমূল কংগ্রেসের সরকারের বিভিন্ন ভাতা এবং রেশন ব্যবস্থায় সংস্কারকেও জয়ের বড়ো কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এক বাম সমর্থকের বক্তব্য যদি তাই হয় তাহলে বিজেপি কেন তৃণমূল জয়ী হওয়ার কথা ছিল! এখানে বিজেপির সঙ্গে অধীরের কোনো গভীর আতাত রয়েছে মনে হয়!

    অভূতপূর্ব জয় পেয়ে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে সুব্রত বাবু বলেন,’ এই জয় নরেন্দ্র মোদীর জয়।মুর্শিদাবাদের মানুষ তথা বহরমপুর এর মানুষ ইতিহাস রচনা করলো আগামী দিনে তা মাইলফলক হয়ে থাকবে।’ পাল্টা পরাজিত মনোজ চক্রবর্তী অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদদের মত খানিকটা সংরক্ষণ শীল বক্তব্য দিয়ে বলেন,”জয় পরাজয় তো আছেই এটা নতুন আর কি জিত যেমন আছে তেমনই হারটা কেউ আমাকে মেনে নিতে হবে।’

    চায়ের আড্ডায় কান পাতলেই প্রশ্ন উঠছে অধীর চৌধুরীর রাজনৈতিক ক্যারিশমার দিকেই। নবাবের দেশে, নবাবীর দিন শেষ! তৃণমূল বিজেপি’র নেতারা টীপন্নি কেটে বলছেন মুর্শিদাবাদে কংগ্রেস তথা রবীনহুড যুগের অবসান হিসেবেই দেখতে চাইছে।