সিনেমার সিদ্ধার্থ সিংহ

সনৎ চট্টোপাধ্যায় : এক রাতের মধ্যেই একশো‌ চৌষট্টিটি শেয়ার! কবি, লেখক, নাট্যকার, উপন্যাসিক, প্রাব‌ন্ধিক বা শিশু সাহিত্যিক হিসেবে নয়, বাংলা চলচ্চিত্রে সিদ্ধার্থ সিংহের অবদান নিয়ে গত কাল এক আলোচনাচক্রের আয়োজন করেছিল ‘কলকাতা স্বপ্নরাগ পরিবার’। তাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজের ‘স্বপ্ন সেতু বন্ধন’ লাইভ অনুষ্ঠানের বিশেষ পর্বে। এ দিন উপস্থিত ছিলেন সিদ্ধার্থ সিংহের গল্প নিয়ে যাঁরা ইতিমধ্যেই ছায়াছবি বানিয়েছেন, এমন দু’জন চিত্রপরিচালক— রাজেন্দ্র সিং এবং অভিরণ চট্টোপাধ্যায়। ছিলেন শম্পা দে। যাঁর গল্পের উপর সিনেমার জন্য ডায়ালগ লিখেছেন সিদ্ধার্থ সিংহ। আলোচনা করতে‌ গিয়ে রাজেন্দ্র সিং জানালেন, আনন্দ পাবলিশার্স থেকে সিদ্ধার্থ সিংহের ‘পঞ্চাশটি গল্প’ বইটি নিয়ে আমি প্রথমেই ‘ছাতা’ গল্পটি পড়ি। গল্পটি পড়ে আমার এত ভাল লেগে যায় যে, আমি তখনই ঠিক করে ফেলি, আমার স্পটলাইট মিডিয়া থেকে এই গল্পটি নিয়েই আমি সিনেমা বানাব। তরুণ চিত্রপরিচালক অভিরণ চট্টোপাধ্যায় বললেন, আমি সিদ্ধার্থ সিংহের সঙ্গে প্রথমে যোগাযোগ করেছিলেন ২৬-২৭ বছর আগে হইচই ফেলে দেওয়া তাঁর ‘বাঁ হাতের বুড়ো আঙুল’ গল্পটি নিয়ে সিনেমা করার জন্য। কারণ, এই গল্পটি সানন্দা পত্রিকায় বেরোনোর সঙ্গে সঙ্গেই রাজনৈতিক মহলে তোলপাড় শুরু হয়। লেখকের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা হয় পাঁচ কোটি টাকার। এই গল্প নিয়ে শিশির মঞ্চে যে নাটকটি হয়েছিল, আমি সেটাও দেখেছিলাম। তখনই ঠিক করেছিলাম, এটা নিয়ে আমি সিনেমা বানাব। কিন্তু সে সময় অনুমতি না মেলায় সিদ্ধার্থদা আমাকে ‘চা গল্পটি’ বেছে দেন ছায়াছবি করার জন্য। শ্রীমা ফিল্ম প্রোডাকশন হাউস অ্যান্ড অভিরণ ফিল্ম প্রেজেন্ট-এর পঞ্চম ছবি, এই চা সিনেমাটি রাজভবনের হট্টমেলায় রিলিজ হয়। ক্রিয়েটিভ এফেক্ট অ্যাওয়ার্ডও পায়। কানাডাতেও দেখানো হয়েছে এটা। ‌ ২০২১-এর ফিল্ম ফেস্টিভ্যালেও যাচ্ছে।শম্পা দে জানালেন, সিনেমা করার জন্য ‘সিক্রেট ক্যামেরা’ গল্পটি লেখার পর আমার প্রথমেই মনে হয়েছিল, এটার ডায়লগ একজনই লিখতে পারেন, আর তাঁর নাম হল— সিদ্ধার্থ সিংহ। তাই তাঁকেই এই দায়িত্ব দিয়েছিলাম।এ দিন মূলত সিদ্ধার্থ সিংহের যে সব গল্প নিয়ে চলচ্চিত্রায়িত হয়েছে, শুধুমাত্র সেগুলো নিয়েই আলোচনা হয়েছে। উনি যে সব ছবিতে মিউজিক ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করেছেন কিংবা যে সব বাংলা এবং ইংরেজি ছায়াছবির জন্য গান লিখেছেন, অথবা যে সব সিনেমায় তাঁর কবিতা অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, সে সব প্রসঙ্গ উহ্যই ছিল।সিদ্ধার্থ সিংহ এ দিন জানালেন, এই মুহূর্তে আমার বেশ কয়েকটা স্ক্রিপ্ট রেডি হয়ে পড়ে আছে। শুভঙ্কর সিংহ তো আমার ‘আত্মসম্মান’ উপন্যাসটির চিত্রনাট্যও তৈরি করে বসে আছেন। কাস্টিংও হয়ে গেছে। সাড়ে তিন কোটি টাকার বাজেট। তবে সেই ছবিটির নামকরণ আত্মসম্মান নয়, করা হয়েছে— নমো।’তৃতীয় চোখ’ উপন্যাসটির শ্যুটিং লকডাউন কাটলেই হয়তো শুরু হবে। তবে আমি তো সিনেমার কথা ভেবে উপন্যাস বা গল্প লিখি না। আমি আমার মতো লিখি। যাঁরা এর মধ্যে ছায়াছবির উপাদান খুঁজে পান, তাঁরা ছবি করার জন্য যোগাযোগ করেন। এবং আমি সব সময়ই তাঁদের সঙ্গে কো-অর্ডিনেশন করার চেষ্টা করি।এই অনুষ্ঠানের দর্শক-সংখ্যা ছিল চোখে পড়ার মতো। তাই এক রাতেই এটা শেয়ার রয়েছে একশো চৌষট্টিটি। যা ফেসবুক লাইভের ক্ষেত্রে একটি অত্যন্ত বিরল ঘটনা।