|
---|
নতুন গতি নিউজ ডেস্ক: প্রত্যন্ত এলাকার গরিব পরিবারের ছেলে পড়াশোনা করেছিলেন অনেক দূর। স্কুল কলেজ পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়। তারপর টেট। কিন্তু, চাকরি পাননি। তাই লকডাউনের বাজারে খুলে ফেলেছেন চপের দোকান। আলুর চপ, পেঁয়াজি, স্যান্ডউইচ চপ, মাংসের চপের পাশাপাশি পাওয়া যায় রুটি ঘুগনি, ডিম ভাজা— সবই। গত কয়েক মাসে ভালই চলছে ব্যবসা, জানাচ্ছেন পুরুলিয়ার বান্দোয়ানের যুবক।
সেই কবে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, চপের ব্যবসা করে কর্মসংস্থানের কথা। তা নিয়ে উত্তাল হয়েছিল রাজ্য রাজনীতি। কলকাতা শহরে একের পর এক বিক্ষোভ অবস্থান করেছেন টেট উত্তীর্ণ চাকরিপ্রার্থীরা। কিন্তু, প্রায় সাড়ে ৩০০ কিলোমিটার দূরের বাসিন্দা বিশ্বজিৎ কর মোদক সেই চপ ভেজেই সংসারের সুরাহা করতে চাইছেন। বান্দোয়ান বন বিভাগের কার্যালয়ের সামনে তাঁর গুমটি দোকানের নামও ‘চপ শিল্প’।
পুরুলিয়া জেলার বান্দোয়ানের বাসিন্দা বিশ্বজিতের ছিল দুই ভাই চার বোনের পরিবার। বাবা অরুণকুমার কর মোদক সামান্য চায়ের দোকান চালিয়ে বড় করেছেন ছয় সন্তানকে। তারই মধ্যে খুব কষ্ট করে লেখাপড়া করে বড় হওয়ার স্বপ্ন ছিল বিশ্বজিতের। মানবাজার মানভূম মহাবিদ্যালয় থেকে ২০০৮ সালে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতক হয়েছিলেন তিনি। সেখান থেকে চলে যান বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়। ২০১০ সালে সেখান থেকে স্নাতকোত্তর সম্পূর্ণ করেন। তারপর নানা ভাবে চাকরির চেষ্টা করেছেন। সঙ্গে চলত গৃহশিক্ষকতা। টেট পাশ করেও স্কুলের চাকরি পাননি। তবে ২০১৬ সালে পান গ্রামীণ সম্পদ কর্মীর চাকরি। দৈনিক ১৭৫ টাকা বেতন। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির বাজারে এই বেতনে সংসার চালানো দায়। তাই বান্দোয়ান বন বিভাগে অফিসের সামনেই গুমটি দোকানে চপ বিক্রি করতে শুরু করেছেন তিনি। যতক্ষণ গ্রামীণ সম্পদ কর্মী হিসাবে ব্লক অফিসে তাঁর ডাক না পড়ছে, ততক্ষণ ব্যবসার কাজ করে চলেন তিনি।
ব্যবসা ভালই চলছে জানিয়ে বিশ্বজিৎ জানান, সম্প্রতি বিয়ে করে আলাদা সংসার পেতেছেন। গ্রামীণ সম্পদ কর্মী হিসাবে প্রতিমাসে বেতন পেতে সমস্যা হয়। তার উপর করোনা অতিমারীর আবহে গৃহশিক্ষকতার কাজও তেমন আর পাচ্ছেন না। ফলে সংসার চালানো দায় হয়ে উঠছিল। তাই উদ্বৃত্ত সময়ে ব্যবসা করার কথা ভাবছিলেন।বিশ্বজিৎ বলেন, ‘অনেক দিন ধরেই শুনছি চাকরি নেই তাই চপ ভাজার কথা। মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন। তা নিয়ে অনেক আন্দোলনও হয়েছে। কিন্তু,হাতে কলমে করে বুঝতে পারছি খুব ভুল বলেননি মুখ্যমন্ত্রী। দিন হাজার দুয়েক টাকার বিক্রি হয়। সব খরচ খরচা তুলে হাতে থাকে শ’পাঁচেক টাকা। মন্দ কী?’ হাসেন MA পাশ ‘চপ শিল্পী’।
সংসারে থাকতে থাকতে নিজেই শিখে নিয়েছেন চপ ভাজা। স্ত্রী সিরাজী কর মোদকও নানা ভাবে সাহায্য করেন। উচ্চ শিক্ষিত যুবকের চপের দোকান খোলা নিয়ে কোনও কুণ্ঠা নেই দু’জনের কারও। এমনকী প্রতিবেশীরাও খুশি। বিশ্বজিতের প্রতিবেশী নমিতা হালদার বলেন, ‘বিশ্বজিৎ সৎ, শিক্ষিত ছেলে। নিজের সংসারের জন্য কাজ করছে, এতে খারাপ কী! আর ওর দোকানের খাবারও খুব ভাল। আমাদের তো ভালই লাগে।’বিশ্বজিৎও চান, তাঁর ব্যবসা চলুক। নিজের মতো করে রোজগার করার স্বাধীনতা ভোগ করতে চান সাহিত্যের ছাত্র।