|
---|
বিয়ের কয়েক ঘণ্টা আগে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে পঙ্গু হয়ে যায় কনে! তাঁকেই বিয়ে করে ভালবাসার নজির গড়ল পাত্র
নতুন গতি ওয়েব ডেস্ক : সিনেমা আর বাস্তব এক নয়। আমরা তো এই দাবি করে থাকি। কিন্তু কখনো কখনো সিনেমার প্লটের সঙ্গে বাস্তবের পটভূমি মিলে যায়। শাহিদ কাপুর-অমৃতা রাও অভিনীত বিবাহ সিনেমার কথা আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে! সেখানে বিয়ের আগে আগুনে পুড়ে যান নায়িকা। তার পর হাসপাতালে গিয়ে তাঁকে বিয়ে করেন নায়ক। বাস্তবে এমন ঘটনা আর কটা শোনা যায়! বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পণের জন্য বধূর উপর নির্যাতন, মদ্যপ স্বামীর অত্যাচারে স্ত্রীর জীবন নাজেহালের মতো খবরের সংখ্যা বেশি।
উত্তর প্রদেশের প্রতাপগড়ে এমন এক ঘটনা ঘটল, যা সারা দেশের সামনে নজির হয়ে থাকবে। বিয়ের কয়েক ঘণ্টা আগে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে কনে পঙ্গু হওয়ার পরও পাত্র ভালবাসার নজির গড়ে দিল। নিজের সিদ্ধান্তে অনড় থেকে জীবনসঙ্গীনী হিসাবে সেই কনেকেই বেছে নিল পাত্র। শুধু তাই নয়, দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত কনের দিন-রাত সেবা করল হাসপাতালে থেকে।
প্রতাপগড়ের কুন্ডা এলাকার বাসিন্দা আরতি মৌর্যের বিয়ে ঠিক হয়েছিল পাশের গ্রামের অবধেশের সঙ্গে। ৮ তারিখ তাঁদের বিয়ের কথা ছিল। সেদিনই বেলা একটা নাগাদ একটি শিশুকে বাঁচানোর চেষ্টা করে ছাদ থেকে পড়ে যান আরতি। ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায় তাঁর শিরদাঁড়া। কোমর, পা সমেত শরীরের অন্যান্য অঙ্গপ্রতঙ্গও ভয়াবহ চোট পায়। সানাইয়ের শব্দ ডুবে যায় কান্নায়, আরতিকে ভর্তি করা হয় প্রয়াগরাজের এক হাসপাতালে।
চিকিৎসকরা জানান, আরতি পঙ্গু হয়ে গিয়েছেন, বেশ কয়েক মাস বিছানা থেকে নড়তে পারবেন না। এমনকী চিকিৎসার পরেও তাঁর পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা কম। এই পরিস্থিতিতে বিয়ে
ভেঙে যায় সাধারণত। সে কথা ভেবে আরতির বাড়ির লােকেরা আরতির বোনকে বিয়ে করার জন্য অবধেশের কাছে প্রস্তাব দেন। কিন্তু অবধেশ
অন্য ধাতুতে গড়া। সাধারণ পরিবারের অতি সাধারণ চেহারার এই যুবক চলে যান হাসপাতালে, ভাবী স্ত্রীর পরিচর্যায় হাত লাগান তিনি। অবধেশ জানিয়ে দেন, তিনি আরতিকেই বিয়ে করবেন। বিয়ের যে লগ্ন ঠিক ছিল, সে সময়েই
হবে অনুষ্ঠান। যদি হাসপাতালে গিয়ে
অক্সিজেনের সাহায্যে শ্বাসপ্রশ্বাস নেওয়া
আরতিকেই বিয়ে করতে হয়, তাহলেও পিছপা হবেন না তিনি। তাঁর জেদে চিকিৎসকরা ঘণ্টাদুয়েক পর অ্যাম্বুলেন্সে আরতিকে বাড়ি পাঠিয়ে দেন। আরতি তখন স্ট্রেচারে শুয়ে, অক্সিজেন, স্যালাইন চলছে। সেই অবস্থাতেই তাকে সিঁদুর পরান অবধেশ। হয় যাবতীয় অনুষ্ঠান। শুধু শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার বদলে
আরতিকে আবার নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। পরের দিন তাঁর অপারেশন হওয়ার কথা ছিল, ফর্মে সই করেন স্বয়ং অবধেশ। বিয়ের পর এক সপ্তাহের বেশি কেটে গিয়েছে। হাসপাতালে স্ত্রীর পাশ থেকে সরেননি অবধেশ। স্ত্রীর সেবা করে চলেছেন তিনি, দ্রুত সেরে ওঠার আশ্বাস দিচ্ছেন। চিকিৎসকরা বলেছেন, এখনও অন্তত ২সপ্তাহ আরতিকে হাসপাতালে থাকতে হবে, আগামী বেশ কয়েক মাস বিছানা ছেড়ে উঠতে পারবেন না। কিন্তু কোনও কষ্টই গায়ে লাগছে না আরতির। স্বামীর হাত শক্ত করে ধরে জীবনের এই তিক্ত-মধুর সময় হাসিমুখ কাটিয়ে দিচ্ছেন তিনি।