|
---|
নিজস্ব প্রতিবেদক:- হকার সমস্যার নিয়ন্ত্রণে এবং বর্ধমান শহরকে যানজটমুক্ত করতে শনিবার অভিযান চালাল জেলা প্রশাসন। দিন কয়েক আগে জেলাশাসকের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছিল। এ দিন অভিযানে হাজির ছিলেন জেলাশাসক প্রিয়াঙ্কা সিংলা, পুলিশ সুপার কামনাশিস সেন, বিধায়ক খোকন দাস, বর্ধমান পুরসভার চেয়ারম্যান পরেশ সরকার-সহ অন্য কাউন্সিলরেরা।শনিবার সকাল ৯টা। বিসি রোড (কার্জন গেট থেকে উত্তর ফটক) যানজটমুক্ত করার অভিযান তখন সবে শুরু হয়েছে। এমন সময় এক কাউন্সিলর বললেন, “এ তো আসলের চেয়ে নকল দামি! আসল দোকানদারেরা তো হকারদের ভিড়ে চাপা পড়ে গিয়েছেন।’’ ওই রাস্তার হকার ইউনিয়নের সভাপতি তথা জেলা তৃণমূলের মুখপাত্র প্রসেনজিৎ দাসকে বলতে শোনা গেল, “হকারদের জ্বালা কী বুঝবে। কী ভাবে ইউনিয়ন করতে হয়েছে, তোমরা জান?” ‘তর্ক’ থামাতে এগিয়ে আসতে হয় জেলাশাসক, পুলিশ সুপার ও বিধায়ককে। পরিস্থিতি সামলে অভিযান এগিয়ে নিয়ে যান তাঁরা।হকারদের উদ্দেশে বিধায়ককে বলতে শোনা যায়, ‘‘নর্দমা বন্ধ করে দোকান করেছ। এ সব তুলে দাও। না হলে, রবিবার থেকে প্রশাসন সব ভেঙে দেবে।’’ দোকানদারদের উদ্দেশে তাঁর বার্তা, ‘‘রাস্তার উপরে ব্যবসা করবে, আর তোমার বাড়ির সামনে ফাঁকা থাকবে, তা হবে না। রাস্তা পরিষ্কার না করলে, দরজার সামনে গুমটি বসিয়ে দেব। তখন জ্বালা বুঝবে!”বর্ধমান শহরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা বিসি রোডের একাংশ এ ভাবে ‘বেদখল’ হয়ে গিয়েছে দেখে অভিযান চলাকালীন বিস্ময় প্রকাশ করেন জেলাশাসক ও পুলিশ সুপার। বর্ধমান থানার সামনে থেকে ‘দখলদার’ সরানোর জন্য আইসি সুখময় চক্রবর্তীকে নির্দেশ দেন পুলিশ সুপার। তাঁকে বলতে শোনা যায়, “চৈত্র সেল চলে গিয়েছে, অথচ, কাঠামো এখনও পড়ে রয়েছে!” তাঁরা দেখেন, ট্রান্সফর্মারের নীচেও বিপজ্জনক ভাবে ব্যবসা করছেন হকাররা। তাঁদের সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। জেলাশাসক বলেন, “কারও থেকে কোনও আপত্তি আসেনি। আশা করছি, প্রশাসনের সিদ্ধান্ত মেনে সকলে রাস্তা ছেড়ে ব্যবসা করবেন। ব্যবসায়ী সংগঠনগুলিকে চিঠি পাঠিয়ে ফুটপাত ও রাস্তা দখল করে ব্যবসা করা যাবে না বলে জানিয়ে দেবে বর্ধমান পুরসভা।’’কয়েক দিন আগে জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারের উপস্থিতিতে ঠিক হয়, ‘বেদখল’ হওয়া রাস্তা দখলমুক্ত করতে হবে। অভিযোগ, বিসি রোডের যানজট ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে।জবরদখলকারীদের’ জন্য চওড়া রাস্তা সরু হয়ে গিয়েছে। ওই রাস্তা দিয়ে বর্ধমানের ডাক্তার পাড়া, খোসবাগান, বর্ধমান থানা, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন যেতে কালঘাম ছোটে মানুষের। একটি গাড়ি ঢুকলে, পাশ দিয়ে সাইকেল যাওয়ার জায়গা থাকে না। সে কারণে প্রশাসন সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, শনিবার সকালে ওই রাস্তায় অভিযান চালানো হবে।বিধায়ক বলেন, “অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন, বর্ধমান শহরে বলার কেউ নেই। আজ দেখেছেন, প্রশাসন-পুরসভা—সবাই রাস্তায় নেমেছে। দোকানকে গুদাম ঘর করে রাস্তা দখল করে ব্যবসা করবে! পথচারী, গাড়ি যেতে পারবে না, এটা হবে না। যানজটমুক্ত শহর গড়ে তুলতেই হবে।’’এর আগেও বিসি রোডকে যানজটমুক্ত করতে বারবার অভিযান হয়েছে। নাগরিকদের অতীত অভিজ্ঞতা বলছে, অভিযানের কয়েক দিন পরেই, রাস্তা ফের হকারদের দখলে চলে গিয়েছে। রাস্তার ‘নো পার্কিং জ়োন’-এ মোটরবাইক রাখা কার্যত নিয়মে পরিণত হয়েছে। পুরপ্রধান পরেশ সরকার বলেন, “শনিবার থেকে নতুন দিন শুরু হল। সবাই আমাদের আবেদন শুনবেন বলে আশা করছি। কয়েকদিন সতর্ক করা হবে, অনুরোধ জানানো হবে। তার পরেও, কেউ না শুনলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’প্রশাসনের উদ্যোগে সাড়া দিয়ে ‘বর্ধমান জেলা ব্যবসায়ী সুরক্ষা সমিতি’র সম্পাদক অনিরুদ্ধ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “যানজট নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের উদ্যোগ প্রশংসনীয়।’’ হকার প্রদীপ চক্রবর্তী, দুর্গা সোনকারদের কথায়, “আমরাও যাতে সুষ্ঠু ভাবে ব্যবসা করতে পারি, প্রশাসনের সেটা দেখা উচিত।’’ রাস্তা ছেড়ে হকারেরা আবার ফুটপাত ‘দখল’ করবেন না তো? প্রসেনজিতের দাবি, “ফুটপাত যাতে দখল না হয়, সেটা আমরা দেখব।’’