|
---|
নিজস্ব প্রতিবেদক:- বাঙ্গালীদের বারো মাসে তেরো পার্বণ। এই সকল পার্বণের মধ্যে একটি হলো চড়ক উৎসব বা গাজন। বাঙ্গালীদের মধ্যে যেমন চড়ক উৎসব বা গাজন রয়েছে ঠিক সেই রকমই একটি উৎসব রয়েছে আদিবাসীদের মধ্যে। সেই উৎসবের নাম হল পাতা পরব। যাকে তাঁরা চরক পুজোও বলে থাকেন।তাঁদের এই পরব মূলত পাথর পুজোকে কেন্দ্র৷পাথরকে শিব রূপে পুজো করে থাকেন। বাঙ্গালীদের চড়ক উৎসব আমরা দেখে অভ্যস্ত হলেও আদিবাসী সম্প্রদায়ের এই পাতা পরব সচরাচর দেখা যায় না। তবে অনেকটাই সাদৃশ্য রয়েছে বাঙ্গালীদের চড়ক পুজোর সঙ্গে। সামঞ্জস্য বা সাদৃশ্য থাকলেও আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষের দাবি,তাদের উৎসবই প্রাচীন এবং তাদের থেকেই নেওয়া হয়েছে চড়কউৎসব এবং এখন তা অনেক উন্নত হয়েছে। আদিবাসীরা এই পাতা পরব করে থাকেন স্থান বিশেষ বিভিন্ন সময়৷কোথাও চৈত্র মাসের শেষ দিন, আবার কোথাও বৈশাখের শুরুতে। আবার কোন কোন জায়গায় বৈশাখ মাসের যেকোনো দিন এই পাতা পরবের আয়োজন করা হয়। এই পাতা পরব অনুষ্ঠানকে ঘিরে আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষদের মধ্যে দিনভর চলে নাচ-গান। পাতা পরব বীরভূমের বেশ কিছু জায়গায় হয়ে থাকে। সে সবজায়গার মধ্যে রয়েছে মুরারই ব্লকের অন্তর্গত বহড়া গাছি সহ বিভিন্ন জায়গায়। এছাড়াও হয়ে থাকে ঝাড়খণ্ড এবং ঝাড়খন্ড লাগোয়া এলাকায়। এছাড়াও বীরভূমের বিভিন্ন জায়গা যে সকল এলাকায় আদিবাসীরা বসবাস,সেই সবএলাকাতেও এই পাতা পরবের আয়োজন করা হয়৷ মুরই পঞ্চায়েত সমিতির শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ রসিক হাঁসদা জানিয়েছেন, \”আদিবাসী মতে আমরা একে পাতা পরব বলে থাকি। বাঙালি মতে একে বলা হয় চড়ক পূজা। তবে এই পুজোর সঙ্গে অন্য কোন পুজোর কোনরকম তুলনা নেই। আমরা আদিবাসীরা প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে শিবের পুজো করে থাকি। তবে বর্তমানে এই পুজো ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে বসেছে। তবেযে সবজায়গায় এই পুজোর আয়োজন করা হয়ে থাকে, সেখানে আট থেকে আশি আদিবাসীদের অংশগ্রহণলক্ষ্য করা যায়। দিনভর তারা নাচ-গান সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজনের মাধ্যমে পরবটি হয়ে থাকে। কোথাও চৈত্র মাসের শেষ দিনে, আবার কোথাও বৈশাখ মাসের প্রথম দিনে, আবার কোথাও কোথাও বৈশাখ মাসের যেকোনো একটি দিন বেছে নেওয়া হয় এই পাতা পরব অনুষ্ঠানের জন্য।\” আদিবাসীদের পাতা পরব এবং বাঙ্গালীদের চড়ক পূজার মধ্যে বেশকিছু সামঞ্জস্য রয়েছে। যার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো শিবের উপাসনা করা। এছাড়াও চরক পুজোয় যেমন চড়কগাছ তৈরি করে তাতে উপাসকদের ঝোলানো হয়ে থাকে বা ঘোড়ানো হয়ে থাকে, ঠিক তেমনি আদিবাসীদের এই পাতা পরবের সময় একটি বাঁশের মাচা তৈরি করা হয় এবং তার পাশে রাখা হয় একটি শাল কাঠের চড়কগাছ। তাতে উপাসকদের দড়ি দিয়ে বেঁধে ঘোরানো হয়।