ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষ্যে যা বললেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

নিজস্ব প্রতিনিধি: আজ তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষ্যে গান্ধী মূর্তির পাদদেশে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাত্র-ছাত্রীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন

    ছাত্র ছাত্রীদের উদ্বুদ্ধ করে তিনি বলেন, সব বাধাকে অতিক্রম করে এগিয়ে যেতে। বিজেপির অত্যাচার ও সন্ত্রাসের সামনে মাথা নত না করার পরামর্শ দেন তিনি।

    মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সদস্যদের সঙ্গে দুদিন ব্যাপী আলোচনার কথা বলেন। এই আলোচনায় সমস্ত জেলা থেকে সদস্যরা আসবে। আগামী ১৪ ও ১৫ই নভেম্বর এই আলোচনা হবে। এখান থেকেই পরবর্তী স্তরের নেতা বাছাই করা হবে।

    তাঁর বক্তব্যের কিছু অংশঃ

    ছাত্রদের উদ্দেশ্যেঃ
    ছাত্ররা সমাজের মেরুদন্ড। এরা আগামী দিন দেশ গড়বে, সমাজ গড়বে। এদের সকলকে স্যালুট জানাই।স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য যেসকল ছাত্রছাত্রী বলিদান দিয়েছেন, তাদের শ্রদ্ধা জানাই

    ছাত্র ছাত্রীদের সব থেকে বড় কাজ প্রতিবাদ, প্রতিরোধ করা ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভুয়ো খবরের প্রতিবাদ করুন। মেয়েদেরও লড়তে হবে সব জায়গায়

    কন্যাশ্রী সারা পৃথিবীতে এক নম্বর। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েরা পায় কন্যাশ্রী। সব মেয়েরাই এখন কন্যাশ্রী, কেউ বাদ নেই

    সংখ্যালঘু ছেলে-মেয়েদের জন্য ঐক্যশ্রী স্কলারশিপ আছে। তপসিলি, আদিবাসী, ওবিসিদের জন্য শিক্ষাশ্রী, ঐক্যশ্রী স্কলারশিপ আছে। সাধারণের জন্য স্বামী বিবেকানন্দ স্কলারশিপ আছে

    স্বাধীনতার পর থেকে ২০১১ পর্যন্ত ১২টা বিশ্ববিদ্যালয় ছিল বাংলায়। আমরা ৮ বছরে আরও ২৮ টি বিশ্ববিদ্যালয় ও ৫০ টি কলেজ তৈরি করেছি

    সারা ভারতবর্ষে ৪৫ বছরে সর্বোচ্চ বেকারের সংখ্যা এখন। বাংলা একমাত্র জায়গা যেখানে আমরা এই ৮ বছরে ৪০% বেকারত্ব কমিয়েছি। আগামীদিন আরও করব। বানতলায় লেদার হাব হচ্ছে, ৫ লক্ষ ছেলেমেয়ের চাকরি হবে। হাওড়ায় এমএসএমই ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক হচ্ছে সেখানে প্রায় ২ লক্ষ ছেলেমেয়ের চাকরি হবে

    বিজেপির বিরুদ্ধেঃ
    বাংলার মাটি সভ্যতা সংস্কৃতির মাটি। বাংলার মানুষ ভয় পায় না, লড়াই করে এগোতে পারে।নতুন করে যারা ক্ষমতা পেয়েছেন, তারা চমকাতে চাইছে। আমরা সারা জীবন বন্দুকের সামনে লড়াই করে এসেছি

    আমার বিধায়কদের এজেন্সি ডেকে দলের কার্যকলাপ জানতে চাইছে

    তৃণমূল কংগ্রেসে দেশের অন্যান্য দলের মধ্যে সব থেকে কম খরচে কষ্ট করে নির্বাচনে লড়ে

    আমি চাই নির্বাচনী সংস্কার হোক। আমরা স্টেট ফান্ডিং চাই। ১৯৯৫ সাল থেকে আমি এটা নিয়ে লড়ছি। কেন টাকা তুলে নির্বাচন লড়তে হবে? এটা দেশের সবথেকে বড় পাপ বলে মনে করি

    সবাই কাটমানি নিয়ে লিখছে, কিন্তু, কালো টাকা নিয়ে লিখছে না। কান ধরে উপদেষ্টা পাঠাচ্ছে। পুরো মিডিয়াকে কিনে নিয়েছে। তখন মিডিয়া টুঁ শব্দ করে না। দেশটা কোন পর্যায়ে চলে গেছে

    এরা কাউকে খেতে দেবে না, চাকরি দেবে না শুধু দেবে ধর্মের বাজার। ধর্মের নামে ভেজাল ধর্মের দোকান চলছে ভারতের বুকে

    ওরা দেশ বিদেশ ঘুরে বেড়াচ্ছে। কিছু অবসরপ্রাপ্ত লোককে সব সংস্থার মাথায় বসিয়ে দেওয়া হচ্ছে। জনগণের ১.৭৬ লক্ষ কোটি টাকা দিয়ে দেওয়া হল। রিজার্ভ ব্যাঙ্কে দেশের এমার্জেন্সির সময়ের জন্য টাকা রাখতে হয়, আজ সেটাও নেই

    কারোর কথা বলার অধিকার নেই। কাশ্মীর নিয়ে কেউ কথা বলতে পারেননি। কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। বন্দুকের নল দিয়ে চেপে রাখা হয়েছে

    সিপিএমের হার্মাদরা এখন বিজেপির জল্লাদ হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলিকে প্রতিদিন এজেন্সির নামে ডাকছে। এইভাবে কতদিন দেশ চলতে পারে?

    ২০১৯ সালে যারা জিতেছে তাদের চিঠি পাঠাচ্ছে এই বলে যে অ্যাকাউন্ট মিলছে না। এদের উদ্দেশ্য রাজনৈতিক দল তুলে দেওয়া, সব নেতাকে কিনে নাও, দেশ দখল করে নাও

    আমার আশঙ্কা ভারতবর্ষ রাষ্ট্রপতি শাসনের দিকে এগোচ্ছে। আমি অনুমান করছি, ওয়ান ইলেকশন, ওয়ান লিডার, ওয়ান পার্টি, ওয়ান এমার্জেন্সি। এর জন্যই কি স্বাধীনতা সংগ্রামীরা প্রাণ দিয়েছিল?

    গবেষণার টাকা বন্ধ করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। আমাদের যে স্বামী বিবেকানন্দ স্কিম আছে সেখান থেকে গবেষণা করে যারা তাদের টাকা আমরা রাজ্য সরকার থেকে দিই। বাংলায় একমাত্র যেখানে সরকারি কর্মচারীরা এখনও পেনশন পায়। অন্য রাজ্য বন্ধ করে দিয়েছে

    বিজেপি আজ দেশটাকে পুরো দখল করবে বলে সব পার্টিকে কাউকে টাকা দিয়ে, কাউকে এজেন্সির ভয় দেখিয়ে কিনে নিচ্ছে। কর্ণাটকে সরকার পড়ে গেল, হর্স ট্রেডিং করে সরকার পড়ে গেল, কেউ কিছু বলল না, বলবার কোনও ক্ষমতা নেই
    বাংলা ওদের চাই, তার কারণ বাংলায় আমরা লড়াই করি, আমরা প্রতিবাদ করি, আমাদের কণ্ঠকে স্তব্ধ করে দেওয়া যায় না। আমরা এজেন্সিকে ভয় পাই না

    আমি জেলে যেতে তৈরি কিন্তু বিজেপির সাম্প্রদায়িক রাজনীতির কাছে মাথা নত করতে তৈরী নই। জেলে গেলে ভাববো আমি স্বাধীনতা সংগ্রাম করছি, স্বাধীন দেশ আবার পরাধীন হয়ে গেছে

    আগামী দুবছর লড়াই করতে করতে আমরা কিন্তু দিল্লীটাও বদলে দেওয়ার পথে এগিয়ে যাব। আমরা কাশ্মীরের পাশে দাঁড়াব। ওদের উচিত সকলের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া, কিন্তু ওরা বন্দুকের নল ঠেকিয়ে, গায়ের জোরে সবাইকে চুপ করিয়ে রেখেছে। কেউ কথা বলতে পারছে না

    আমরা সব ধর্মকে ভালোবাসি , শ্রদ্ধা করি। সব পুজো করি

    এই প্রথম আইপিএস দের গায়ে হাত পড়েছে, অনেক আইএএস’রা চাকরি ছেড়ে দিয়ে চলে যাচ্ছে, অত্যাচারের ফলে মানুষ শান্তিতে নেই, মানুষ খুব কষ্টে আছে।

    যখন তখন ঐতিহাসিক জায়গার নাম বদলে দেওয়া হছে। শুধু মাত্র বিজেপির নেতারা নাকি দেশ স্বাধীন করেছে, আর কেউ ছিল না! অথচ স্বাধীনতার সময় টিকি পর্যন্ত সেদিন দেখা যায়নি, তাঁরা সেদিন ইংরেজদের দালালি করেছিল। ওরা আজকে দেশের ইতিহাস ভুলিয়ে দিচ্ছে, এটা চলতে পারে না

    ৪৫ টি প্রাইভেট সেক্টর বন্ধ করে দিচ্ছে, রেল, বি এস এন এল, অর্ডিন্যান্স ফ্যাক্টরি, এয়ার ইন্ডিয়া, বেঙ্গল কেমিক্যাল, বার্ন স্ট্যান্ডার্ড প্রাভেটাইজেশন হচ্ছে। লক্ষ লক্ষ – কোটি কোটি ছেলে মেয়ের চাকরি চলে যাচ্ছে। তার প্রতিবাদে তৃণমূল ট্রেড ইউনিয়ন আজ ১৩ দিন ধরে গান্ধী মূর্তির পাদদেশে অনশন করছে। এই অনশন চলবে। যখন কেউ কারো পাশে দাঁড়ায় না তখন তৃণমূল কংগ্রেস মানুষের পাশে থাকে। এয়ার ইন্ডিয়া, রেল, বি এস এন এল, বেঙ্গল কেমিক্যাল কর্মীদের পাশে আমরা আছি

    ডানলপ কোম্পানির কারখানা আমাকে চালানোর অনুমতি দেওয়ার জন্য ৩ বছর ধরে অনুরোধ করছি, এখনো ও অনুমতি দেয়নি কেন্দ্র। নিজেরা কাজ করবে না, অন্যকেও করতে দেবে না

    বাংলা রাজ্যের নামটা পরিবর্তন করে দিচ্ছে না কেন্দ্র। বাংলার নামের প্রতি ওদের ভীষণ অ্যালার্জি, কারণ ওরা বাংলার মেধাকে সহ্য করতে পারে না

    ওরা ইচ্ছাকৃতভাবে রাজনৈতিক কুৎসা করে বেড়ায়, কত সাহস। আমাদের দলের স্বচ্ছতা আছে

    কাটমানি নিয়ে লিখছো, রাফালের ব্ল্যাকমানি নিয়ে কেন নিচ্ছনা? প্নেন কিনতে গিয়ে কত হাজার কোটি টাকা ব্ল্যাকমানি নিয়েছে সেই কথা কেউ লেখেন কেউ বলে না কারণ ওরা আলুর নয় হীরের কারবারি

    নির্বাচনের আগে ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্টে লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি টাকা, কোথা থেকে এলো? জবাব চাই। রাতের অন্ধকারে এজেন্সিগুলোকে গিয়ে টাকা দিয়ে এসেছে, এক একটা ভোট কিনেছে ৫০০০ টাকা দিয়ে

    ভারতবর্ষে রাফেল থেকে আপেল চলছে, দেশ বিক্রি করে দিচ্ছে আর বড় বড় ভাষণ দিচ্ছে। কিন্তু মানুষকে রেশন দিচ্ছে না। এভাবে চলতে পারে না

    বাংলা আমাদের গর্ব করার জায়গা

    আগামী কর্মসূচীঃ
    আগামী ১৪ ও ১৫ই নভেম্বর নেতাজি ইনডোরে আমাদের প্রোগ্রাম হবে, এই ৪৮ ঘন্টা কর্মীদের কলকাতায় থাকার ব্যবস্থা করবে দল – এই দায়িত্ব থাকবে একটি কোর গ্রূপের ওপর। কর্মীদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলবো, তাদের সবকথা শুনবো, যাদের গুণ আছে তাদের নিয়ে লিস্ট তৈরী করা হবে। এমন নেতৃত্ব তৈরী করব ৫০ বছরেও বাংলার দিকে তাকানোর সাহস পাবে না সিপিএম বিজেপি

    নভেম্বর মাসেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সাথেও একদিন কথা বলবো

    জালিয়ানয়ালা বাগের শতবর্ষ, ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগরের ২০০ বছর পূর্তি, গান্ধীজির ১৫০ বছর পূর্তি ইত্যাদি অনুষ্ঠান পালন করা হবে