|
---|
নতুন গতি নিউজ ডেস্ক:পড়শিরা বাড়িতে চিকিৎসককে ডাকা হলেও আসতে রাজি হলেন না তিনিও।উত্তর কলকাতার শ্যামপুকুর থানা এলাকার বৃন্দাবন মল্লিক লেনের এই ঘটনায় শেষ পর্যন্ত মারাই গেলেন ওই বৃদ্ধা।
অন্য দিকে, প্রবল জ্বর ও শ্বাসকষ্টে ধুঁকতে থাকা এক রোগীকে বনগাঁ হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে পাঠানোর সময় স্ট্রেচার বইতে এগিয়ে এলেন না কেউ। অ্যাম্বুল্যান্সে তোলার জন্যই পাওয়া গেল না কাউকে। ফলে নিজে থেকে অ্যাম্বুল্যান্সে উঠতে গিয়ে পড়ে মৃত্যু হল রোগীর।
কলকাতার ওই ঘটনায় প্রায় ছ’ঘণ্টা পর স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে পুলিশ। তারাই অ্যাম্বুল্যান্স জোগাড় করে আরজি কর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করে বছর সত্তরের ছায়া চট্টোপাধ্যায়কে। সেখানে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। পুলিশ ও চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, আরও আগে হাসপাতালে নিয়ে এলে হয়তো বেঁচেও যেতে পারতেন ছায়া। সবচেয়ে বড় কথা, ছায়া করোনায় আক্রান্ত ছিলেন কি না বা তাঁর কোনও উপসর্গ ছিল কি না, সে সম্পর্কে নিশ্চিত না-হয়েই শুধু ভয়ের বশে কেউ ছুঁয়ে দেখেননি তাঁকে।
বাড়ির একতলায় ভাড়া থাকতেন ছায়া। তাঁর স্বামী অনুপ চট্টোপাধ্যায় বেশ কয়েক বছর আগে মারা গিয়েছেন। একই বাড়িতে অন্য ঘরে ভাড়া থাকতেন বৃদ্ধার দেওর। স্থানীয়দের কাছ থেকে পুলিশ জানতে পেরেছে, এদিন সকাল ৯টা নাগাদ বৃদ্ধার দেওর দেখেন, নিজের ঘরের মেঝেতে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় পড়ে রয়েছেন ছায়া। দূর থেকে কয়েকবার ডাকাডাকি করলেও সাড়া দেননি। কিন্তু তাঁকে ছুঁয়ে দেখেননি তাঁর দেওর। শুধু পড়শিদের একজনকে গোটা বিষয়টি বলেন তিনি। তাঁরাও কেউ এসে বৃদ্ধাকে ছুঁয়ে দেখার সাহস করেননি। এমনকী, পুলিশকেও খবর দেননি কেউ। এ ভাবেই বেলা দেড়টা-দুটো পর্যন্ত পড়ে থাকেন ছায়া। পুলিশের দাবি, একটি বাড়িতে অনেকক্ষণ কেউ অচৈতন্য অবস্থায় পড়ে রয়েছেন জানতে পেরে শ্যামপুকুর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। অ্যাম্বুল্যান্স জোগাড় করতেও কিছুটা সময় লাগে। শেষমেশ বিকেল তিনটে নাগাদ বৃদ্ধাকে তোলা হয় অ্যাম্বুল্যান্সে। আরজি কর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। বৃদ্ধার মৃত্যুর কারণ জানতে ময়নাতদন্ত রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে।
বনগাঁর বাসিন্দা মাধবনারায়ণ দত্ত আবার শনিবার রাজ্যজুড়ে লকডাউনের দিনেই জ্বর এবং শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হন। শনিবার বিকেল ৫টা নাগাদ তাঁকে বনগাঁ হাসপাতালে নিয়ে আসেন তাঁর স্ত্রী আল্পনা দত্ত। তাঁকে ভর্তি করার পর রাত ৮টা নাগাদ হাসপাতালের তরফ থেকে তাঁকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় ব্যারাকপুরের কোভিড হাসপাতালে। আল্পনার অভিযোগ, ‘আমার স্বামীর শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। আমি বারবার অক্সিজেন দেওয়ার কথা বলেছিলাম। কিন্তু হাসপাতালের কেউ অক্সিজেন দেয়নি। চোখের সামনে ওঁর শ্বাসকষ্ট আরও বেড়ে গেল।’ এর পরের ঘটনা আরও মর্মান্তিক। মাধবের করোনা হয়েছে, এই সন্দেহে তাঁকে সামান্য স্ট্রেচারটুকু দিয়ে পর্যন্ত সাহায্য করেননি হাসপাতালের কোনও কর্মী। বাধ্য হয়ে আল্পনা একাই কোনও মতে স্বামীকে নীচে নামিয়ে আনেন। ততক্ষণে অ্যাম্বুল্যান্সও এসে গেছে। হাসপাতাল চত্বরে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের কাছে আল্পনা একটু সাহায্য চান জ্বরে ধুঁকতে থাকা স্বামীকে অ্যাম্বুল্যান্সে তোলার জন্য। কিন্তু কেউই এগিয়ে আসেননি। কেউ আসছে না দেখে নিজেই অ্যাম্বুল্যান্সে উঠতে গিয়ে পড়ে যান মাধব। আল্পনার অভিযোগ, ‘পড়ে যাওয়ার পরেও হাসপাতালের কেউ সাহায্য করতে এগিয়ে এল না। ওই ভাবেই আমার স্বামী হাসপাতালের মধ্যে পড়ে রইলেন আধ ঘণ্টা ধরে!’
এর মধ্যেই আল্পনার ফোন পেয়ে হাসপাতালে আসেন তাঁর ভাই জয়দেব দত্ত। তিনিই একজন চিকিৎসককে ডেকে নিয়ে আসেন। চিকিৎসক এসে অবশ্য মাধবকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। তাঁর পরিবারের অভিযোগ, পদে পদে হাসপাতালের গাফিলতি না-থাকলে এ ভাবে মৃত্যু হত না মাধবের। বনগাঁ হাসপাতালের সুপার শঙ্করপ্রসাদ মাহাতো অবশ্য বলছেন, ‘মৃতের পরিবারের কেউ অভিযোগ করেননি। তবে বিষয়টি আমি শুনেছি। এই ধরনের ঘটনা মোটেই কাম্য নয়। গত চার মাসে অনেক রোগীকেই রেফার করা হয়েছে। কিন্তু এমন ঘটনা এর আগে ঘটেনি কখনও। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। যদি এ ক্ষেত্রে ইচ্ছাকৃত গাফিলতি হয়ে থাকে, তা হলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’