ইয়েমেনে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে বললেন রাষ্ট্রসংঘের রিপোর্ট

নতুন গতি ওয়েব ডেস্ক: বিগত কয়েক দশকে কোথাও যা ঘটেনি, তেমনই ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের মুখে রয়েছে ইয়েমেন। আরব বিশ্বের সবথেকে গরিব এই দেশটিতে সাড়ে ৫ বছর ধরে অবিরাম যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে সউদির নেতৃত্বে আরবজোট। পরিণামে গরিব দেশটিতে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। অনাহারে, অর্ধাহারে বা না খেতে পেয়ে প্রতিদিন মারা যাচ্ছে শয়ে শয়ে শিশু ও মানুষ। এই অবস্থায় জরুরি ভিত্তিতে খাদ্য সহায়তা পৌঁছতে না পারলে উজাড় হয়ে যাবে ইয়েমেন। এমনই আশঙ্কাজনক পরিস্থিতির কথা জানিয়ে ত্রাণ ও মানবিক সহায়তার আহ্বান জানালেন রাষ্ট্রসংঘের প্রধান অ্যান্টনিও গুটেরেস। পাশাপাশি সার্বিক পরিস্থিতি যাতে আরও অবনতি না হয়, সেজন্য সবপক্ষকেই সংযত হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। রাষ্ট্রসংঘের রিপোর্ট বলছে, ৮০ শতাংশ ইয়েমেনি নাগরিকের বেঁচে থাকার জন্য ন্যূনতম খাদ্য ও মানবিক সহায়তা ভীষণ জরুরি হয়ে পড়েছে।

     

    উল্লেখ্য, বিদ্রোহী শিয়া হুথি গোষ্ঠীকে অজুহাত করে নিরীহ মানুষগুলোকে জীবজন্তুর মতো অকাতরে হত্যা করে চলেছে আরবজোট। ফলে খাদ্য, পানি, ওষুধ সবকিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় এবং জীবনদায়ী সামগ্রী অপ্রতুল হয়ে গিয়েছে। অনাহার, অপুষ্টির মাত্রা এতটাই নীচে নেমে গিয়েছে যে, সেই দেশের মানুষ গাছের লতা-পাতা চিবিয়ে খাচ্ছেন, খেজুরদানা বেটে গুঁড়িয়ে সিদ্ধ করে খাচ্ছেন। এসব ছবি দু-আড়াই বছর আগেই ভাইরাল হয়েছে।

     

    এ দিকে মাত্র ক’দিন আগেই ইয়েমেন ইস্যুতে ইরানকে তোপ দেগে হুথিগোষ্ঠীকে কালো তালিকাভুক্ত করার হুমকি দিয়েছে আমেরিকা। কিন্তু লক্ষ লক্ষ মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করে দেশটিকে ধ্বংসস্ত‍ুপে পরিণত করার জন্য যে আরবজোট দায়ী, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া তো দূরের কথা, উলটে তাদেরকে অর্থ ও অস্ত্র সাহায্য দিয়ে চলেছে আমেরিকা ও পশ্চিমারা। এই হল তাদের ইনসাফের নমুনা। উগান্ডা, রোয়ান্ডা, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রের থেকেও হাড়হাভাতে অবস্থা ইয়েমেনের। মিডিয়া ও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া কঙ্কালসার চেহারার শিশু ও মানুষের ছবি দেখেও চোখে ঠুলি পরে রয়েছে পশ্চিমা ও আরবরা।

     

    ২০১৫ সালের প্রথম দিকে ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট মানসুর হাদিকে উৎখাত করে রাজধানী সানা শহরের দখল নেয় বিদ্রোহী হুথিরা। তখন প্রাণ বাঁচাতে অভিভাবক দেশ সউদি আরবে চলে যান প্রেসিডেন্ট হাদি। ওই বছর মার্চের মাঝামাঝি হাদি সরকারকে ক্ষমতায় ফেরানোর লক্ষ্যে হুথিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে আরবজোট। আবার হুথিদের বাড়বাড়ন্তের জন্য ইরানকে দায়ী করে তারা।

     

    অন্যদিকে, ইয়েমেন প্রসঙ্গে লেবানন ভিত্তিক হিজবুল্লাহর বক্তব্য হল, আরবদের দেখানো পথে হেঁটেই মিশর-মডেল অনুসরণ করে প্রেসিডেন্ট মানসুর হাদিকে উৎখাত করে হুথিরা। আরব ও পশ্চিমারা ষড়যন্ত্র করেই মিশরে সেনা অভু্যত্থান ঘটিয়ে একমাত্র নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মুরসিকে ক্ষমতাচ্য‍ুত করে ২০১৩ সালে। হিজবুল্লাহর মতে, সব ব্যাপারেই নিজেদের অকর্মণ্যতা ও ব্যর্থতা ঢাকতে ইরান-জুজু দেখায় আরবরা।