|
---|
নিজস্ব প্রতিনিধি : ১৩ আগস্ট দিব্যাঙ্গদের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বিশ্বকাপ জেতে ভারত। সেই দলের অন্যতম সৈনিক হিসেবে চিহ্নিত হন মালদার তুষার পাল। বিশ্বজয় করে আজ বাড়ি ফিরলেন তিনি কিন্তু স্বাগত জানাতে এলনা প্রশাসনের কেউ। এল না কোনও সংবর্ধনা বা অভিনন্দন বার্তাও। পরিবার ও হাতে গোনা কয়েকজন ছাড়া সে খবর কেউ তেরও পেলনা। শুধু উপস্থিত ছিলেন তুষারের স্ত্রী মুক্তি হাজরা পাল, একমাত্র ছেলে হর্ষ, দুই আত্মীয়, এবং মালদা শহরের জেনিথ এফ সি অ্যান্ড লাইব্রেরির কয়েকজন সদস্য। তাঁরাই সংবর্ধনা জানান তুষারকে।
পুরাতন মালদার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের আদর্শপল্লির বাসিন্দা তুষার পাল ৷ গাজলের রানিগঞ্জ হাইস্কুলে ইংরেজির শিক্ষক। বছর আটেক আগে দুর্ঘটনায় ডান পায়ের নিচের অংশ কাটা পড়লেও তা তাঁর ক্রিকেট প্রেমে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। জেদ আর অধ্যাবসায়ের উপর ভর করে আজ তিনি বিশ্বজয়ী।
মনে হয়েছিল, সকালে গৌড় এক্সপ্রেসে মালদা স্টেশনে পা রাখার সঙ্গে সঙ্গে জেলা ক্রীড়া সংস্থা ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও সংবর্ধনা জানানো হবে তুষারকে কিন্তু কোনও সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা ছিল না। ছিল না সেলফির তোলার হিড়িকও। শুধু উপস্থিত ছিলেন তুষারের স্ত্রী মুক্তি হাজরা পাল, একমাত্র ছেলে হর্ষ, দুই আত্মীয়, এবং মালদা শহরের জেনিথ এফ সি অ্যান্ড লাইব্রেরির কয়েকজন সদস্য। তাঁরাই সংবর্ধনা জানান তুষারকে৷
অভিনন্দন জানিয়েছে ভারতীয় ক্রিকেট নিয়ামক সংস্থা BCCI । বেঙ্গল ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনও দেশের এই সাফল্য এনে দেওয়া সবাইকে অভিনন্দন জানিয়েছে। এই সাফল্যের জন্য তারা তুষারকে সংবর্ধনা দেওয়ার আয়োজন করছে। কিন্তু তাতেও ভ্রুক্ষেপ নেই প্রশাসনের।
এবার বিশ্বকাপের আসর বসেছিল ইংল্যান্ডে। প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিল ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও ইংল্যান্ড। ১৩ অগাস্ট ওয়েবচেস্টার নিউ রোড স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয় প্রতিযোগিতার ফাইনাল। ফাইনালে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ভারত ১৮২ রান করে। জবাবে ১৪৬ রানে শেষ হয়ে যায় ইংল্যান্ডের ইনিংস। পুরো টুর্নামেন্টে তুষারের উইকেট কিপিং ও ব্যাটিং নজর কেড়েছে দর্শকদের।
তুষার বলেন, “প্রথমদিকে খানিকটা হোম সিকনেসে ভুগছিলাম। কিন্তু, যখন প্রায় একমাস মুম্বইয়ে প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর ইংল্যান্ডে গেলাম, তখন মনের মধ্যে খেলা ছাড়া আর কিছু ছিলনা। শুধু একটাই চিন্তা ছিল সবার, কবে বিশ্বকাপ জিতে বাড়ি ফিরব। দুর্ঘটনায় পা হারিয়েও খেলা থেকে পিছিয়ে আসিনি। আমার মনের জোর এবং পরিবারের সাহায্যেই এটা সম্ভব হয়েছে। আমার স্কুল ও বন্ধুরাও এক্ষেত্রে আমাকে খুব সাহায্য করেছে। তার কাছে জানতে চাওয়া হয়, আজ মালদায় ফেরার পরও স্টেশনে জেলা ক্রীড়া সংস্থা বা জেলা প্রশাসনের পক্ষে কেউ আসেনি, এ বিষয়ে কী বলবেন ? তুষার বলেন, “তাঁদের কাছে বিশ্বকাপ জয়ের খবরটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ, সেটা তাঁরাই বলতে পারবে। আর মালদার ছেলেমেয়েদের প্রতি আমার একটাই বক্তব্য, যদি কেউ মনে করে সামনের দিকে এগিয়ে যাবে, তবে কোনও বাধা-বিপত্তি মানুষকে আটকে রাখতে পারে না।”
জেনিথ এফসি অ্যান্ড লাইব্রেরির তরফে আজ স্টেশনে উপস্থিত ছিলেন মালদা জেলা ক্রীড়া সংস্থার প্রাক্তন সম্পাদক শুভাশিস সরকার জানান, “মালদার একটি ছেলে বিশ্বকাপ ক্রিকেট খেলছে। সে বিশ্বকাপজয়ী দলের অন্যতম সদস্য। এটা দারুণ ব্যাপার। আজ মালদার কাছে খুশির দিন। তুষারকে দেখে মালদার ছেলেরা ক্রিকেট খেলায় আরও এগিয়ে আসুক, এটাই আমাদের কামনা। জেলা প্রশাসন কিংবা জেলা ক্রীড়া সংস্থার পক্ষ থেকে তুষারকে সংবর্ধনা দেওয়া উচিত ছিল কিন্তু তারা কেউ আসেনি। এনিয়ে আমার আর কিছু বলার নেই ।”
পারেননি ধোনি-বিরাট-রোহিতরাও, পেরেছেন তুষাররা। শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে লক্ষ্যে অবিচল থেকেছেন৷ কিন্তু এই রকম একটি বিষয় অজানাই থেকে গেল প্রশাসনের। জেলা প্রশাসনের তরফে এখনও কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি বলে জানাযায়।