|
---|
নতুন গতি নিউজ ডেস্ক: তৃণমূল কংগ্রেসের সদ্য সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সাংবাদিক বৈঠক করে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বুঝিয়ে দিলেন, দলের আসল সম্পদ দলীয় কর্মীরাই। তৃণমূলে সেকেন্ড ম্যান বলে কিছু নেই। তিনি বলেন, “আমার আজকের সাংবাদিক সম্মেলনে যারা উপস্থিত হয়েছেন, নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যারা মাঠে নেমে কাজ করেছেন, সকলকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে গত পরশুর ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে যে সিদ্ধান্ত হয়েছে তা সাংবাদিক বৈঠকে জানিয়ে দিয়েছেন দলের বর্ষীয়ান নেতারা। ২০১৪ সাল থেকে যুব তৃণমূলের দায়িত্বে ছিলাম। ৭ বছর যুব সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছি। দল আমাকে সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক পদে মনোনীত করেছে। আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও দলের বর্ষীয়ান নেতাদের কাছে কৃতজ্ঞ। সেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আন্দোলন এবং বর্ষীয়ান প্রবীণ নেতৃত্বের সুপরিকল্পিত চিন্তাধারাকে বাংলার মানুষের কাছে আমি পৌঁছে দিতে পেরেছি। আমি গতকাল ইতিমধ্যেই দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সি , দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়, প্রবীণ নেতা মন্ত্ৰী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করে তাঁদের পরামর্শ আশীর্বাদ নিয়েছি।” প্রবীণ নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, সৌগত রায়ের সঙ্গেও দেখা করে তাদের আশীর্বাদ নেবেন বলে তিনি এদিন জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, যে দায়িত্ব পেয়েছি, তাতে আগামী দিনে দলের বিস্তারে আরও কাজ করব। বর্ষীয়ান প্রবীণ নেতৃত্বের সুপরিকল্পিত নির্দেশ তৃণমূল কংগ্রেসকে ভারতবর্ষের প্রত্যেক রাজ্যে রাজ্যে কোনায় কোনায় ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করবে এ বিশ্বাস ও দৃঢ়তা আমার আছে। দলকে সর্বোচ্চ স্তরে নিয়ে যাব। লিখে রাখুন, আগামী কুড়ি বছর রাজ্য প্রশাসনের কোনও পদ আমি নেব না।”
সাংবাদিক সম্মেলনে প্রথম যে বাউন্সার অভিষেকের সামনে এল তা হচ্ছে, তাঁর সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হওয়া নিয়ে বিরোধী শিবিরের পরিবারতন্ত্রের অভিযোগ।
২১শে বিধানসভা নির্বাচনের আগে মোদি শাহ থেকে শুরু করে সমস্ত কেন্দ্রীয় নেতারা অভিষেককে “ভাইপো” শব্দবানে বিদ্ধ করেছিলেন। এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে থেকে তার জবাব দিয়েছেন। তিনি অমিত শাহের ছেলে জয় শাহকে কটাক্ষ করেছেন। তিনি বলেন, আমি তো আগেই বলেছি, এক পরিবার এক প্রতিনিধির পক্ষে সংসদে বিল আনুক কেন্দ্র। আমিই প্রথম যে নিজের পদ ছাড়বো। সেটা তো হচ্ছে না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ছেলে তো বিসিসিআইয়ের মাথায় বসে। তাহলে কীভাবে তাঁরা আমার দিকে আঙুল তোলেন?”
আগামীদিনে কী পরিকল্পনা রয়েছে তৃণমূলের? জাতীয় রাজনীতিতে তৃণমূলের ভূমিকা কী হতে চলেছে? এদিন তার কিছুটা আভাস দিলেন সদ্য দায়িত্বে আসা সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক। অভিষেকের কথায়, ‘মাত্র ৪৮ ঘণ্টা হল সবে নতুন দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। আগামী ২-৩ সপ্তাহ অথবা এক মাসের মধ্যেই তৃণমূলের পরবর্তী পরিকল্পনা আমরা জানাব। ঢেলে সাজানো হবে দলের কর্মসূচি। আগে যা ছিল, সেই তৃণমূলের থেকে অনেকটাই নতুন রূপে আসবে দল।’
সেই সঙ্গে তিনি বিজেপির উদ্দেশ্যে বলেন, বাংলার বাইরে তৃণমূলের সংগঠন না থাকলে, এত ভয় কেন বিজেপির? লড়াইটা মমতা বনাম মোদি সরকারের। আমরা যখন অন্য রাজ্যে পা দেব তখন শুধু একটা দুটো বিধায়ক পদ জিততে যাব না, ভোট বাড়াতে যাব না, যখন অন্য রাজ্যে যাব সেটা জিততেই যাব।
বিধানসভার বিরোধী দলনেতা তথা প্রাক্তন তৃণমূল নেতা শুভেন্দু অধিকারী কিছুদিন আগে অভিষেককে নাবালক বলে কটাক্ষ করেছিলেন । এদিন সেই কটাক্ষের পরিণত জবাব দেন অভিষেক। তিনি বলেন , বিরোধী দলনেতাকে আরও দায়িত্বশীল হতে হবে। কেন্দ্রীয় নেতাদের তল্পিবাহক হবেন না। গঠনমূলক মন্তব্য করতে শিখতে হবে। গঠনমূলক আলোচনা করলে তবেই গণতন্ত্রের ভিত মজবুত হবে। একই সঙ্গে এদিন রাজ্যের রাজ্যপাল জগদীপ ধনকরের উদ্দেশ্যে বললেন, ‘যারা বিজেপি–কে ভোট দিয়েছে শুধু তারা নয় যারা তৃণমূলকে ভোট দিয়েছে আপনি তাদেরও রাজ্যপাল। তাদের ও দেখতে যান। প্রকৃত রাজ্যপালের ভূমিকা পালন করুন’।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন ২০২৪ এ লোকসভা ভোট কে মাথায় রেখেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের পদ দেওয়া হয়েছে। মমতার পাখির চোখ ‘২৪এর লোকসভা ভোট। তাঁকে কেন্দ্র করেই তিনি ঘুঁটি সাজাচ্ছেন। মোদি শাহ কে দিল্লী থেকে সমূলে উৎখাত করার জন্য মরিয়া চেষ্টা চালাবেন তিনি। সাংবাদিক সম্মেলনে অভিষেক বললেন, ‘ বিজেপি অবিজেপি শাসিত বিভিন্ন রাজ্য থেকে যোগাযোগ করা হচ্ছে আমাদের সঙ্গে। দেশ জুড়ে বিজেপি বিরোধী মঞ্চ তৈরির কাজ শুরু করব আমরা। এক–একটি রাজ্য ধরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তখনই ঠিক করা হবে নির্দিষ্ট রাজ্যে আমাদের দল কারও হাত ধরবে কিনা অথবা কার হাত ধরবে’।
এদিন অভিষেক বলেন, ‘শুধু যারা তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি বিধায়করাই নয়, অনেক BJP-র বিধায়করাও আমাদের দলে আসার জন্য যোগাযোগ রাখছেন। কিন্তু, সেটা দলের ওয়ার্কিং কমিটি সিদ্ধান্ত নেবে।’
নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়েও অভিষেক অভিযোগ করেছেন। তিনি নির্বাচন কমিশনেরও রাজনীতিকরণ হয়েছে বলে দাবি করেন। তামিলনাড়ুর মতো রাজ্যে একদফায় ভোট হয়েছে, অসমে ৩ দফায় ভোট হয়েছে। সেখানে বাংলায় ভোট হয়েছে ৮ দফায়। উদ্দেশ্য, একটা রাজনৈতিক দলকে সুবিধে পাইয়ে দেওয়া। এতে কী হল! কোভিডের সেকেন্ড ওয়েভ।
বিজেপি হার বরদাস্ত করতে পারছে না বলেই আমাদের ক্রমাগত আক্রমণ করে চলেছে। বাংলা বহিরাগতদের কাছে বশ্যতা স্বীকার করেনি, করবেও না বলে এদিন দৃঢ়তার সাথে অভিষেক জানিয়ে দিলেন। তরুণ অভিষেকের স্বপ্ন এখন দেশব্যাপী তৃণমূলের বিস্তার বলে রাজনৈতিক মহলে ধারণা।