বাংলা নিয়ে এবিপি নিয়েলসনের সমীক্ষার গরু যে গাছে থেকে বহুতলের ছাদে উঠে যাবে, জানাই ছিল

    বাংলা নিয়ে এবিপি নিয়েলসনের সমীক্ষার গরু যে গাছে থেকে বহুতলের ছাদে উঠে যাবে, জানাই ছিল

    দ্বিতীয় পর্ব
    জাকির হোসেন সেখ

    আগের পর্বেই লিখেছি, এবিপি নিয়েলসনের ওপিনিয়ন পোলে বাংলা থেকে বিজেপির জন্য যে ৮ টা কেন্দ্রে সম্ভাব্য জয় ধরা হয়েছে তার প্রথম কেন্দ্রটি হল আলিপুরদুয়ার লোকসভা কেন্দ্র।
    আর কয়েকদিন পরে ১১ এপ্রিল পশ্চিমবঙ্গে প্রথম দফায় যে ২টি কেন্দ্রে ভোট হতে চলেছে, তারমধ্যে এই কেন্দ্রটির সাথে আছে কোচবিহার লোকসভা কেন্দ্র।

    বাংলার ৮টা লোকসভা কেন্দ্রে
    বিজেপির সম্ভাব্য জয় নিয়ে এবিপি নিয়েলসনের ২৮-২৯ মার্চ সমীক্ষা প্রকাশ হওয়ার পর, তাকে নস্যাৎ করার জন্য ৮টা কেন্দ্রের প্রত্যেকটাকে নিয়ে আলাদা আলাদা ভাবে চুলচেরা বিশ্লেষণে নতুন গতি পত্রিকার অনলাইন নিউজ পোর্টালে যেই না কলম ধরেছি, দশদিনের ব্যবধানে ((আমার প্রথম কিস্তি লেখা প্রকাশের দিনেই)) গত ৪ এপ্রিল এবিপি নিয়েলসন‌ও তাদের প্রথম দফার সমীক্ষায় বেশকিছু অদলবদল ঘটিয়ে আচমকা দ্বিতীয় দফার ওপিনিয়ন পোল প্রকাশ করে।

    লক্ষ্য করার মতো বিষয় হল, তথাকথিত প্রথম দফার সমীক্ষায় তারা বিজেপির সম্ভাব্য জয় হিসেবে যে ৮টা কেন্দ্রকে চিহ্নিত করেছিল, তথাকথিত দ্বিতীয় দফার সমীক্ষায় সেখানে কৌশলী সংযোজন বিয়োজনের মাধ্যমে বিজেপিকে ৭টা আসনে নামিয়ে আনলেও তৃনমূল কংগ্রেসের ক্ষেত্রে আগের সমীক্ষার ৩১ টা আসন‌ই বহাল রেখেছে।

    আমি আগের পর্বে বলেছি, এবিপি নিয়েলসনের বিজেপির হয়ে করা বিজ্ঞাপনী সমীক্ষায় যে ৮ টি কেন্দ্রকে বিজেপির সম্ভাব্য জয় হিসেবে দেখানো হয়েছিল তার মধ্যে ২টো মাত্র আসনে বিজেপি টক্কর দিতে পারলেও বাকি ৬টা আসনে তৃনমূলের জয়ের সম্ভাবনা ৯০ শতাংশ। আমার লেখা প্রকাশের পরে পরেই কিন্তু কাকতালীয় ভাবে হলেও ওদের সমীক্ষায় বিজেপির সম্ভাব্য জয় ৮ থেকে ৭টা আসনে ‌নেমেছে। প্রথম দফায় বিজেপির সম্ভাব্য জয়ের তালিকায় ছিলঃ
    ১)) আলিপুরদুয়ার
    ২)) দার্জিলিং
    ৩)) রায়গঞ্জ
    ৪)) বালুরঘাট
    ৫)) কৃষ্ণনগর
    ৬)) বনগাঁ
    ৭)) বারাকপুর এবং
    ৮)) আসানসোল।

    দ্বিতীয় দফার প্রকাশিত সমীক্ষায় দেখা গেল কিছু অদলবদল ঘটিয়ে বিজেপির সম্ভাব্য জয় দেখানো হয়েছে ৭টি আসনে। আগের বলা (১))আলিপুরদুয়ার,
    (২))দার্জিলিং,
    (৩))কৃষ্ণনগর,
    (৪))ব্যারাকপুর,
    (৫))আসানসোল, এবং (৬))বালুরঘাট, এই ৬টা আসনে সম্ভাব্য জয় বহাল রেখে রায়গঞ্জ কেন্দ্রকে কংগ্রেসের সম্ভাব্য জয় এবং বনগাঁ কেন্দ্রকে তৃনমূলের সম্ভাব্য জয় হিসেবে দেখিয়ে তৃনমূলের থেকে আবার ছিনিয়ে নিয়ে (৭))কোচবিহারের মতন আসনটিতে বিজেপির সম্ভাব্য জয় দেখানো হয়েছে। তারমানে
    কোচবিহারকে প্রথমে তৃনমূলের ধরে তারপর বিজেপির ধরা হল।
    বনগাঁকে প্রথমে বিজেপির ধরা হয়ে তারপর তা আবার তৃনমূলের ধরা হল। এবং রায়গঞ্জ কেন্দ্রকে প্রথমে বিজেপির ধরে তারপর সেটা ধরা হল কংগ্রেসের। এবং এতগুলো পরিবর্তন হল মাত্র ১০ দিনের ব্যবধানে ! আগামী কয়েকদিনে না জানি আরো কত পরিবর্তন হবে ?

    যাইহোক, বঙ্গে ৮ এর স্থলে ৭টা কেন্দ্রেই বিজেপির সম্ভাব্য জয়ের অসারতা প্রমাণের যৌক্তিকতা নিয়ে ফিরে আসি।
    শুরু করেছিলাম আলিপুরদুয়ার লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপির সম্ভাব্য জয়ের অসারতা দিয়ে।
    আগের পর্বে বলেছি ২০১৪ সালের ষষ্ঠদশ লোকসভায় এই কেন্দ্রে জয়ী হয়েছিলেন তৃনমূল কংগ্রেস প্রার্থী দশরথ তিরকে। তিনি তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আর‌এসপি প্রার্থী মনোহর তিরকেকে ২১ হাজার ৩৯৭ ভোটে পরাজিত করলেও তৃতীয় স্থানে থাকা বিজেপির প্রার্থী বিরেন্দ্র বারা ওঁরাও এর থেকে কিন্তু ২৬ হাজার ৫৯৬ টা ভোটে এগিয়ে ছিলেন।
    একথা ঠিক যে, ২০০৯ সালের পঞ্চদশ লোকসভা নির্বাচনের থেকে ৫.৯০ শতাংশ ভোট বেশি পেয়েছিল বিজেপি। কিন্তু ভোটের অঙ্কে তখন‌ও প্রায় ২৭০০০ ভোটে তৃনমূল কংগ্রেসের থেকে পিছিয়ে ছিল।
    তার‌ও দু’বছর পর ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে সাতটা বিধানসভা কেন্দ্রের সামগ্রিক ফলাফলে তো বিজেপির থেকে তৃনমূল কংগ্রেস এগিয়ে ছিল ২ লক্ষ ২ হাজার ৩৮২ ভোটে।
    সব থেকে বড় কথা, সারা ভারতে বিজেপির এই পড়তি বাজারে উত্তর বঙ্গের বিজেপি শরিকরা যেখানে দ্বিধা বিভক্ত।গত ৪ এপ্রিল বৃহস্পতিবার জটেশ্বরের কর্মীসভা থেকে আদিবাসী বিকাশ পরিষদ যেখানে আলিপুরদুয়ার লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী দশরথ তিরকেকে পূর্ণ সমর্থন জানাচ্ছে। সংগঠনের রাজ্য সভাপতি বীরসা তিরকে আলিপুরদুয়ারের জেলা ও ব্লক নেতৃত্বকে সঙ্গে নিয়েই যেখানে এই ঘোষণা দিয়েছেন। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির থেকে ২ লক্ষেরও বেশি ভোটে এগিয়ে থাকা সেই তৃনমূলকে সম্ভাব্য পরাজিত হিসেবে দেখানোটা এবিপি নিয়েলসনের হয় আকাশ কুসুম কল্পনা নয়তো সমীক্ষার নামে বিজেপির বড় বাজেটের বিজ্ঞাপন ছাড়া আর কিছুই নয়।

    চলবে……….