|
---|
জাকির হোসেন সেখ, ১১ এপ্রিল, নতুন গতি আজকের আমার লেখার বিষয় হলঃ এবিপি নিয়েলসনের সমীক্ষা মতে কোচবিহার লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপির সম্ভাব্য জয়ের তত্ত্বকে খারিজ করে তৃনমুল কংগ্রেসের জয়ের পক্ষে নিজস্ব অভিমত প্রকাশ করা। এর আগে আমি আলিপুরদুয়ার কেন্দ্র নিয়েও একই কথা বলেছি। আজকে থাকছে কোচবিহার লোকসভা কেন্দ্র।
এবিপি নিয়েলসন তাদের সমীক্ষার নামে বিজেপির বড় বাজেটের বিজ্ঞাপনে পশ্চিমবঙ্গের ৪২ টা লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে যে যে কেন্দ্র গুলোকে বিজেপির সম্ভাব্য জয় হবে বলে উল্লেখ করেছে, পরিসংখ্যান আর যুক্তি দিয়ে তাকে নস্যাৎ করাই হল এ লেখার উদ্দেশ্য।
আপনারা জানেন যে, ১নং কোচবিহার লোকসভা কেন্দ্র হল, ভারতের ৫৪৩ টা লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে এবং পশ্চিমবঙ্গের ৪২ টা লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে কোচবিহার জেলার তফসিলি জাতির জন্য সংরক্ষিত একটা মাত্র লোকসভা কেন্দ্র। ২০০৯ সালের ডিলিমিটেশনের পর
২ নং মাথাভাঙা (তফসিলি জাতি) বিধানসভা কেন্দ্র
৩ নং কোচবিহার উত্তর বিধানসভা কেন্দ্র
৪ নং কোচবিহার দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্র
৫ নং শীতলকুচি (তফসিলি জাতি) বিধানসভা কেন্দ্র
৬ নং সিতাই (তফসিলি জাতি) বিধানসভা কেন্দ্র
৭ নং দিনহাটা বিধানসভা কেন্দ্র এবং
৮ নং নাটাবাড়ি বিধানসভা কেন্দ্র- এই ৭টা বিধানসভা কেন্দ্র নিয়ে গঠিত কোচবিহার লোকসভা কেন্দ্র।
নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী ২০১৪ সালের ষষ্ঠদশ লোকসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্রের মোট ভোটার ছিল ১৬ লক্ষ ১৩ হাজার ৪১৭ জন।
তারমধ্যে পোল হয়েছিল ৮২.৫৮ শতাংশে মোট ১৩ লক্ষ ৩২ হাজার ৪০৯ টা ভোট। তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী রেনুকা সিনহা ৩৯.৫১ শতাংশের মোট ৫ লক্ষ ২৬ হাজার ৪৯৯ টা ভোট পেয়ে, তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ফরওয়ার্ড ব্লকের দীপক কুমার রায়কে ৮৭ হাজার ১০৬ টি ভোটে পরাজিত করে নির্বাচিত হয়েছিলেন। ফরওয়ার্ড ব্লকের দীপক কুমার রায় পেয়েছিলেন ৩২.৯৮ শতাংশের মোট ৪ লক্ষ ৩৯ হাজার ৩৯৩ টা ভোট। যা ছিল ২০০৯ সালের পঞ্চদশ লোকসভা নির্বাচনের থেকে -১১.৬৮ শতাংশ কম।
একথা ঠিক যে ২০১৪ সালের ষষ্ঠদশ লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী রেনুকা সিনহা জয়ী হয়েছিলেন বটে কিন্তু ২০০৯ সালের পঞ্চদশ লোকসভা নির্বাচনের থেকে ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে -২.১৪ শতাংশ ভোট কম পেয়েছিল।
আর ২০১৪ সালে এই লোকসভা কেন্দ্র থেকে বিজেপি প্রার্থী হেমচন্দ্র বর্মণ ১৬.৩৪ শতাংশের মোট ২ লক্ষ ১৭ হাজার ৬৫৩ টা ভোট পেয়ে ফরওয়ার্ড ব্লকের প্রার্থী দীপক কুমার রায়ের থেকে ২ লক্ষ ২১ হাজার ৭৪০ টা ভোটে এবং তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী রেনুকা সিনহার থেকে ৩ লক্ষ ৮ হাজার ৮৪৬ ভোটে পিছিয়ে ছিলেন। যদিও এবিপি নিয়েলসনের সমীক্ষার রসদ সরবরাহ করতেই হয়তো ২০০৯ সালের পঞ্চদশ লোকসভা নির্বাচনের থেকে +১০.৫১ শতাংশ ভোট বেশি পেয়েছিলেন।
নির্বাচিত তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ রেনুকা সিনহা ২০১৬ সালে অকালে প্রয়াত হলে অর্থাৎ ২০১৬ সালে তাঁর হঠাৎ মৃত্যু হলে ২০১৬ সালে এই কেন্দ্রে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
এবং সেই উপনির্বাচনেও তৃনমূল কংগ্রেস প্রার্থী পার্থ প্রতিম রায় বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছিলেন।
২০১৪ সালের পরে ২০১৬ সালের উপনির্বাচনে তৃনমূল কংগ্রেস ভোট পেল কত ???
তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী পার্থ প্রতিম রায় উপনির্বাচনে ভোট পেয়েছিলেন – ৭ লক্ষ ৯৪ হাজার ৩৭৫ টা।
আর তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপির – হেমচন্দ্র বর্মণ, যিনি কিনা ২০১৪ সালের ষষ্ঠদশ লোকসভা নির্বাচনেও বিজেপির প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেছিলেন, তিনি সেই উপনির্বাচনে ভোট পেয়েছিলেন – ৩ লক্ষ ৮১ হাজার ১৩৪ টা ভোট। অর্থাৎ ২০১৪ সালের ষষ্ঠদশ লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের থেকে যে বিজেপি ৩ লক্ষ ৮ হাজার ৮৪৬ ভোটে পিছিয়ে ছিল, দু’বছর পর ২০১৬ সালের লোকসভার উপনির্বাচনেও সেই বিজেপি তৃনমূল কংগ্রেসের থেকে আরো আরো বেশি ভোটে, অর্থাৎ ৪ লক্ষ ১৩ হাজার ২৪১ টা ভোটে পিছিয়ে রইলো।
তারপর ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনেও তৃনমূল কংগ্রেস বিজেপির থেকে অনেক ভোটে এগিয়ে রইলো। বা বলা যায় তৃনমূল কংগ্রেস একই ভাবে জয়ের ধারা অব্যাহত রাখলো।
সুতরাং ২০১৪ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত এই ৫ বছরে অতি সহজ সরল ভোটের অঙ্কে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে,
২০১৪ সালের সাধারণ ষষ্ঠদশ লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস বিজেপির থেকে এগিয়ে রইলো ৩ লক্ষ ৮ হাজার ৮৪৬ ভোটে।
তারপর ২০১৬ সালের লোকসভার উপনির্বাচনেও তৃণমূল কংগ্রেস বিজেপির থেকে এগিয়ে রইলো ৪ লক্ষ ১৩ হাজার ২৪১ টা ভোটে।
এবং তারপর ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনেও ৭টা বিধানসভা কেন্দ্রের সামগ্রিক ফলাফলে তৃণমূল কংগ্রেস বিজেপির থেকে এগিয়ে রইলো অনেক অনেক ভোটে। তারপরও
নাকি সেই বিজেপি এবিপি নিয়েলসনের সমীক্ষা অনুযায়ী ২০১৯ সালের এই সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনে তৃনমূলের থেকে সম্ভাব্য জয় ছিনিয়ে নেবে।
কোচবিহার লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপির সম্ভাব্য জয় দেখানোর এবিপি নিয়েলসনের এই অবাস্তব, অযৌক্তিক, হাস্যকর এবং আকাশ কুসুম কল্পনা যে নেহাতই আকাশ কুসুম কল্পনা নয়, বরং বিজেপির পক্ষে আসলে জনমতকে প্রভাবিত করার যে এটা একটা সুপরিকল্পিত বিজ্ঞাপন,
আমি সেটাই আপনাদের বোঝাতে চাইছি।
এবং বলতে চাইছি যে, কোচবিহার লোকসভা কেন্দ্রে ২০১৪ সালের ষষ্ঠদশ লোকসভায় তৃনমূল কংগ্রেস যেভাবে জয়ী হয়েছে।
২০১৬ সালের উপনির্বাচনে যেভাবে জয়ী হয়েছে।
২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে যেভাবে বিজেপির থেকে অনেক অনেক ভোটে এগিয়ে আছে। এগিয়ে থাকার সেই তত্ত্বেই এবার এই ২০১৯ সালের সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনেও তৃনমূল কংগ্রেস তথা তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী পরেশ চন্দ্র অধিকারী নিশ্চিত ভাবেই জয়ী হবেন। আমার অন্তত নিজস্ব অভিমত এটাই।