বিষ্ণুপুরের রথযাত্রায় ভক্তদের ঢল ২ বছর পর

নিজিস্ব সংবাদদাতা: বিষ্ণুপুরের রথযাত্রায় ভক্তদের ঢল ২ বছর পর। এ যেন শহরে জনসমুদ্র। ৩৫০ বছরের প্রাচীন রথ উৎসবে মাতোয়ারা বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরও রথের দড়িতে টান দিয়ে সাতসকালে উৎসবে মাতল আট থেকে আশি।

    চৈতন্যদেবের শিষ্য শ্রীনিবাস আচার্যর হাত ধরে বৈষ্ণব ধর্ম রাজ ধর্ম হিসাবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল মল্লভূমে। এর কিছু বছর পর রাজা বীরমল্ল রানি শিরোমণির ইচ্ছানুসারে মল্ল রাজধানী বিষ্ণুপুরের মাধবগঞ্জে রথের আদলে প্রতিষ্ঠা করেন সুবিশাল রাধা মদনগোপাল জিউর মন্দির। সে সময় থেকেই বিষ্ণুপুরে শুরু হয় রথ উৎসবের। ৩৫০ বছরের সেই রথ উৎসবকে ঘিরে একইভাবে আবর্তিত হয় বিষ্ণুপুরের মানুষের আবেগ। আজ সকালে যা আছড়ে পড়ল মন্দির লাগোয়া ময়দানে। রথের রশিতে টান দিতে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি হাত লাগালেন পর্যটকরাও।

    বিষ্ণুপুর মানেই ইতিহাস। এ শহরের স্থাপত্য থেকে উৎসব সবেতেই রয়েছে ইতিহাসের ছোঁয়া। সেই ইতিহাসেরই এক অনন্য নিদর্শন মাধবগঞ্জের রথ উৎসব। এই রথের আরাধ্য দেবতা জগন্নাথ, বলরাম সুভদ্রা নন, এখানে রথে সওয়াব হন রাধা মদন গোপাল জিউ। রীতি মেনে এদিন সাত সকালে রাধা মদন গোপাল জিউর বিগ্রহ পার্শ্ববর্তী মন্দির থেকে এনে চাপানো হয় সুবিশাল পিতলের রথে। রথে চাপিয়ে দীর্ঘক্ষণ ধরে চলে পুজো অর্চনা ও আরতি। এরপর উপস্থিত মানুষ প্রথমে একটি ছোট রথ ও পরে বিশাল পিতলের রথের রশিতে টান দেন। সেই টানে গড়াতে শুরু করে রাধা মদন গোপাল জিউ-র রথের চাকা।

    প্রাচীন রীতি মেনে কীর্তন ও বিভিন্ন বাদ্য বাজনায় জমে ওঠে রথ উৎসবের আবহ। বিষ্ণুপুরের রথ উৎসব একদিনের নয়। এখানে সোজা রথ থেকে উলটো রথ পর্যন্ত আট দিন ধরে চলে উৎসব। করোনার আবহে গত দুবছর সেই উৎসবের চেহারা ছিল বেশ ম্লান। তবে এবার করোনার খরা কাটিয়ে নিউ নর্মালে নতুন করে রথ উৎসবে মেতে উঠল মল্লভূমের অগনিত মানুষ। স্থানীয়দের দাবি, রথের এই দিনগুলির জন্য সারা বছর থাকে অধীর অপেক্ষায়।