অজয় নদে দেদার বালিলুটে ‘আশ্রয়হীন’ উজানীমেলা

মোল্লা জসিমউদ্দিন : মেলা বলতে সাধারণত মিলনক্ষেত্র কে বোঝায় তবে মকর স্নান ঘিরে যেসব মেলা শতাব্দীকাল ধরে চলে আসছে নদ – নদীর চরে  সেগুলির মধ্যে পূর্ব বর্ধমান এবং বীরভূমের জেলার সীমানা নির্ধারণ করা অজয় নদের উজানীর মেলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ দুই জেলাবাসীর কাছে।বিভিন্ন ধর্মীয় বই গুলি থেকে জানা যায় , -‘রাধাগোবিন্দ এর অন্যতম ভক্ত জয়দেব গোস্বামী প্রতি মকর স্নান করতে কাটোয়ার গঙ্গায় ( ভাগীরথী)  যেতেন। একবার তাঁর  শারীরিক অসুস্থতার জন্য যাওয়া হয়নি গঙ্গায়।সেসময় গঙ্গা দেবী উজান বেয়ে বীরভূমের অজয় নদ হয়ে জয়দেব গোস্বামীর বাড়ির কাছে এসেছিল।সেইথেকে অজয় নদে বীরভূমের জয়দেব – কেন্দুলীর মেলা এবং মঙ্গলকোটের উজানীনগরে ( বর্তমান নাম কোগ্রাম) উজানী মেলা শুরু হয়।’  দশ বছর আগে অবধি পূর্ব বর্ধমান জেলার মঙ্গলকোট এবং বীরভূমের নানুর এলাকার মধ্যবর্তী অজয় নদের চরে হত জমজমাট উজানীর মেলা। এই মকর মেলায় দুই জেলার বিশেষত মঙ্গলকোট ও নানুর এলাকার বাসিন্দারা আসত সামিল হতে।মুম্বাই – কেরালা – সুরাট – দিল্লিতে কাজ করা পরিযায়ী শ্রমিকদের কাছে উজানীর মেলা যেন ভিটের টানে সবাই কে একজায়গায় আনতে বাধ্য করতো।  মেলার কয়েকদিন আগেই তারা চলে আসতো নিজ নিজ গ্রামে।তবে গত বারো – তেরো বছর ধরে পুলিশ – প্রশাসনের নাকের ডগায় যেভাবে স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাবশালীরা জেসিবি – যন্ত্রচালিত পাইপের মাধ্যমে দিনের দিন বালি লুট করছে,তাতে এই অজয় নদে চোরাবালি তৈরি হয়েছে অনেক জায়গায়। আগে মঙ্গলকোটের নুতনহাট থেকে নানুরের পালিতপুর এলাকা গুলিতে অনেক মানুষ জল কম থাকায় হেঁটে যাতায়াত করতেন। এমনকি গাঁয়ের রাখালরা গরু – মহিষ নিয়ে মাঠে চরাট করতে যেত।তবে বেশ কয়েকজন মানুষ সহ গরু মহিষদের চোরাবালিতে প্রাণহানি ঘটায় এই নদের চরের পথ এখন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে।তার উপর অবৈধ বালিঘাট দখল – বেদখল ঘিরে নদের চরে গোপন জায়গায় বোমা মজুত করেও রাখে দুস্কৃতিরা।প্রায়শই বোমাবাজির আওয়াজ শুনতে পান অজয় নদের উপকূলে থাকা বাসিন্দারা।এমনকি দেদার বালিলুটের ফলে অজয় নদের লোচনদাস সেতুর পিলার গুলিতে চিড় ধরেছে, এর পাশাপাশি সেতুর পিলারে নীচেকার মাটি – বালি সরে যাচ্ছে। দু বছর আগে ৮৪ লক্ষ টাকা সংস্কারের জন্য এলেও তা সমগ্র অর্থ লুট করা হয়েছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। ঠিক এইরকম পরিস্থিতিতে উজানীর মেলা নদের চরে আশ্রয়হীন হয়ে নদের পাড়ে জায়গা পেয়েছে। তবে আগেকার সেই আবেগ আর নেই এই মেলা ঘিরে। এমনকি হাজার হাজার পুনার্থীদের অজয় নদে স্নানঘাটের কোন পরিকাঠামো নেই বললেই চলে এখানে।গঙ্গাসাগর মেলাতে  রাজ্য প্রশাসনের যে তৎপরতা দেখা যায়, তার সিকিভাগ দেখা মিলেনা ‘মনসা মঙ্গল’ কাব্যে বর্ণিত ধনপতি সওদাগরের এই উজানীনগরের উজানী মেলায়। সতীপীঠের একটি পীঠ রয়েছে এখানে। সোমবার সকালে পুনার্থীরা অজয় নদে জলে মকর স্নান করে মা মঙ্গলচণ্ডীর মন্দিরে পুজো দেন।এদিন দুপুর থেকে সন্ধে অবধি মেলা চলে।দশ বছর এক হিংসাত্মক ঘটনার জেরে পুলিশি তৎপরতা বেড়েছে বহুগুণ।