“আমার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে”, ধীরে ধীরে নিথর নিস্তব্ধ হয়ে গেছেন।

“আমার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে”

    নতুন গতি ওয়েব ডেস্ক:

    জর্জ ফ্লয়েড বাধা দেন নি, নয় মিনিট ধরে শুধু বলার চেষ্টা করেছেন, “আমার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে”, ধীরে ধীরে নিথর নিস্তব্ধ হয়ে গেছেন। কিন্তু আমেরিকাকে আরেকবার জাগিয়ে দিয়েছেন তিনি। তাঁর হত্যাকারী পুলিস অফিসারকে ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং খুনের ধারায় অভিযুক্ত করা হয়েছে, কিন্তু চার দিন পেরিয়েও বিক্ষোভ প্রদর্শন থেমে যায় নি, ক্রমাগত ছড়িয়ে পড়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একের পর এক শহরে। আমেরিকার তরুণ প্রজন্ম বুঝেছে যে কেবল তাদের সামনে নয়, গোটা দুনিয়ার সামনেই তাদের দেশের বাস্তবতা ও গণতন্ত্রের স্বরূপ প্রকাশ করে দিয়েছে জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যু। তারা একথা বুঝেছে এবং পৃথিবীর আরও সবাইকে তা বোঝাতে রাস্তার লড়াইয়ে নেমে পড়েছে। সর্বশেষ রিপোর্ট বলছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কোভিড১৯ মৃত্যুর সংখ্যা এক লক্ষ পাঁচ হাজার পাঁচশ সাতান্ন। “করোনা ভাইরাসের রঙ” শীর্ষক সমীক্ষা থেকে দেখা যাচ্ছে জনসংখ্যা পিছু মৃত্যুর হার আফ্রো-আমেরিকানদের ক্ষেত্রে অনেক বেশি। সাদা মানুষদের তুলনায় প্রায় তিনগুণ বেশি মারা গেছেন কালো মানুষেরা। অন্যদিকে, ২০১৫ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত পুলিশ যত মানুষ মেরেছে তার হিসেবেও কালো মানুষের মৃত্যুর হার স্বেতবর্ণদের তুলনায় প্রায় তিনগুণ। সমস্ত ধরণের পুলিশি হিংস্রতার শিকারের ক্ষেত্রেও বর্ণবৈষম্যের হিসেবটা অনুরূপ। করোনা সংক্রমণের এই সময়ে মার্কিন জনগণের খাদ্য ও অন্যান্য সরবরাহের কাজ থেকে শুরু করে সমস্ত ঝুঁকিপূর্ণ কাজ মূলত আফ্রো-আমেরিকানদের দিয়েই করানো হয়েছে। চিকিৎসার সুযোগ পাওয়ার নিরিখেও বৈষম্যের পরিমাণ পুলিশি হত্যার পূর্বোক্ত হিসেবের মতই। এই বাস্তব সত্যকে আড়াল করে ট্রাম্প প্রশাসন উল্টে কালো মানুষদেরই সংক্রমণের জন্য দোষারোপ করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্তর্গত এই বর্ণবৈষম্য, পুলিশের ট্রেনিং ও কালচারে গণতন্ত্রের চরম শূন্যতা এবং জর্জ ফ্লয়েড হত্যার শীতলতা বর্তমান মার্কিনী গণতন্ত্রের ফুরিয়ে যাওয়া দশাকেই প্রকাশ করে দিয়েছে। যুবসমাজ বাঁচার ও বাঁচানোর রাস্তা খুঁজতে পথে নেমেছে। শ্রমিকেরা তাদের পাশে দাঁড়াতে শুরু করেছে। মিনিয়াপলিসের বাস ড্রাইভাররা পুলিশের গ্রেপ্তার করা প্রতিবাদীদের হাজতে নিয়ে যেতে অস্বীকার করে। ম্যাসাচুসেটস ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসের ‘ইউনাইটেড অটো ওয়ার্কার্স’-এর পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে পুলিশ বিভাগের সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করার দাবি তোলা হয়েছে এবং বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “করোনা মহামারির সাথে লড়াইয়ে আমরা যখন দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার আতঙ্কে আছি ঠিক তখনই জর্জ ফ্লয়েডের নির্মম হত্যা আমাদের আরেকবার স্মরণ করিয়ে দিল যে এই স্বেত-আধিপত্যবাদী ও বর্ণবিদ্বেষী কাঠামো বজায় থাকলে কালো মানুষের নিশ্বাস নেওয়ার অধিকারটুকুও থাকবে না। এই ক্ষমতার প্লেগকে খতম করতে হবে”। ‘অ্যামালগামেটেড ট্রানজিট ইউনিয়ন’-এর বিবৃতিতে বলা হয়, “আমাদের কর্মীরাও প্রতিদিন এই বর্ণবিদ্বেষের শিকার হয়… করোনা ভাইরাস ও অর্থনৈতিক সংকটে শ্রমিক শ্রেণির সকলকেই নিমজ্জিত করেছে এই ব্যবস্থা, কিন্তু এই ব্যবস্থার সবচেয়ে নির্মম শিকার কালো মানুষেরা… শ্রমিক আন্দোলনের সাথে জোটবদ্ধ নতুন নাগরিক আন্দোলন দরকার যা কর্পোরেট পৃষ্ঠপোষকতার রাজনৈতিক দলগুলিকে বর্জন করে স্বাধীন পথে চলবে, যেখানে সমস্ত ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সকল শ্রমিক ঐক্যবদ্ধ হতে পারবে এবং অর্থনৈতিক ও জাতিবাদী অবিচার ও ঘৃণাবিদ্বেষের অবসান ঘটিয়ে সমস্ত শ্রমজীবি মানুষের সম্মিলিত মুক্তি অর্জন করবে”।■