বর্ধমান কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার বন্দীদের বিনা পারিশ্রমিকে এ নৃত্যশিল্পী প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন মেহেবুব

লুতুব আলি :
সংশোধনাগারে নাচ শিখিয়ে বর্ধমানের মেহেবুব হাসান নজর কেড়েছেন। প্রায় এক যুগ ধরে বর্ধমান কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার বন্দীদের বিনা পারিশ্রমিকে এ প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। সমাজের মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনার জন্য বন্দীদের প্রশিক্ষণ ও তাদের দিয়ে অনুষ্ঠান করানোই বন্দীদের সাজা কমে যাচ্ছে এবং অনেকে মুক্তিও পাচ্ছেন। নৃত্য পরিবেশন করে দুই বাংলায় সমাদৃত হয়েছেন তিনি। ১৯৭০ সালে বর্ধমান শহরের রাধানগর মুসলিম পাড়ায় মেহবুব এর জন্ম। কৈশোর বয়স থেকেই তিনি সৃজনশীল মনোভাবাপন্ন। রক্ষণশীল মুসলিম পরিবারের সমস্ত গোঁড়ামির ঊর্ধ্বে গিয়ে তিনি আজ একজন সফল নৃত্যশিল্পী। পিতা গোলাম মেহেবুব, মাতা আয়েশা। নাচের প্রতি ছেলের প্রতিভাকে বিকশিত হওয়ার ব্যাপারে তারা সমস্ত রকমের সহযোগিতা করেন। মেয়ে মুদ্রা দ্বাদশ শ্রেণীতে পাঠরত। মুদ্রা ও একজন নৃত্যশিল্পী পিতার কাছে তালিম নিয়েছেন। অনুষ্ঠান করতে পিতার সঙ্গে তাকে হামেশাই বাংলাদেশেও যেতে হয়। পুত্র নবম শ্রেণী সৃজন। সে আকাশবাণীর শিশু মহলের শিল্পী। বর্ধমান টাউন স্কুলের মেহেবুব এর শিক্ষা শুরু হলেও তাঁর স্কুলজীবন শেষ হয় বর্ধমান মিউনিসিপ্যাল হাই স্কুলে। বর্ধমান রাজ কলেজ থেকে স্নাতক এবং হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ থেকে বিএইচএমএস ডিগ্রী লাভ করেন। তিনি খেলাধুলাতেও পটু ছিলেন এবং সুনাম অর্জন করেন। কুড়ি বছর বয়সে যুবক মেহেবুব জাতীয় ক্রীড়া ও শক্তি সংঘের জাতীয় শিবিরে যোগ দিতে গিয়ে বিশিষ্ট নৃত্যশিল্পী অলকানন্দ সরকারের সঙ্গে তার পরিচয় ঘটে। মেহেবুব নাচ শেখার আগ্রহ দেখালে তিনি মঞ্জুশ্রী চাকি সরকার ও রঞ্জাবতী চাকি সরকারের কাছে নৃত্য শেখার ব্যবস্থা করে দেন। পরবর্তী সময়ে প্রখ্যাত নৃত্যশিল্পী আনন্দশঙ্কর, পৌষলি মুখোপাধ্যায়, ডক্টর মহুয়া মুখোপাধ্যায়, বটু পাল, আদিত্য মিত্র, অসিত চ্যাটার্জী, লাইলি বোস, গোবিন্দ কুট্টি প্রমুখ ওদের কাছে তার নাচের তালিম নেয়ার সুযোগ ঘটে। কলকাতার আইপিটি তে যোগদান করায় তাদের সঙ্গে যোগাযোগ আরো নিবিড় হয়। অমলা শঙ্কর ও শান্তি বসুর কাছে ও নিয়মিত যান। দেশ ও বিদেশের তিনি অনুষ্ঠান করে খ্যাতি অর্জন করেন। উল্লেখ্য, ১৯৯৬ সালে পশ্চিমবঙ্গের প্রতিনিধি হিসেবে আনন্দশঙ্কর পরিচালিত নৃত্যানুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। নটো শেখর রাখাল সিংহ পরিচালিত যাত্রাপালায় মেহবুব হাসান নির্দেশনা দিতেন। ছন্দম নামে তাঁর একটি নাচের স্কুল আছে। ছন্দম মুকুটে আজ গৌরবের অনেক পালক সংযোজিত হয়েছে। ১৯৯৭ সালে রাধারানী স্টেডিয়ামে রাজু স্কুল ফুটবল প্রতিযোগিতার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। এছাড়াও চুরুলিয়ার নজরুল মেলা, মৌলিক নাট্য সংস্থার ২৫ বছর পূর্তি, ছাত্র যুব উৎসব নজরুল শতবর্ষের অনুষ্ঠান, হাওড়া গ্রামীণ মেলায় যোগদান, নেতাজি ইন্ডোরে বিশ্ব বঙ্গ সম্মেলন, বর্ধমান ড্রামা কলেজের ২০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠান, জাতীয় ক্রীড়া ও শক্তি সংঘের ৫০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠান, সল্টলেক স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠান, বর্ধমান উৎসব, ইটিভিতে অনুষ্ঠান, রাজ্য সংগীত একাডেমী নৃত্য নাট্য উৎসবে অনুষ্ঠান, সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে ছন্দমের ছাত্র-ছাত্রীরা প্রথম স্থান লাভ করে। পাতিয়ালা, বেরিলি বিভিন্ন জায়গায় সর্বভারতীয় উৎসবে লোকনৃত্যে প্রথম স্থান অধিকার করে। সম্প্রতি কটক থেকে নৃত্য সম্মানে ভূষিত হন। এছাড়াও ২০০৭ সাল থেকে বাংলাদেশে নিয়মিত যান। কখনো অতিথি, কখনো নৃত্য পরিবেশন করতে আবার কখনো আলোচক হিসাবে। বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ সাংস্কৃতিক সংগঠন বুলবুল একাডেমি অফ ফাইন আর্টস থেকে বাফা সম্মানে ভূষিত হন মেহেবুব হাসান।