|
---|
মহঃ নাজিম আক্তার, হরিশ্চন্দ্রপুর। মালদা,১ আগস্ট হরিশ্চন্দ্রপুর-১ নং ব্লক চত্বরে পার্থেনিয়াম নিধন ও স্বচ্ছতায় হাত লাগালেন বিডিও অনির্বাণ বসু ও জয়েন্ট বিডিও মধুরিমা চক্রবর্তীসহ ব্লক সভাপতি কোয়েল দাস, ভূমি কর্মাধ্যক্ষ আদিত্য দাস, ত্রাণ কর্মাধ্যক্ষ ওয়েফ,মৎস্য কর্মাধ্যক্ষ নুরুল, সিইও আব্দুল রফ ও ব্লক কর্মী সাইদুল ইসলাম ।
হরিশ্চন্দ্রপুর – ১ ব্লকের উদ্যোগে বিষাক্ত পার্থনিয়াম আগাছা নিধন কর্ম সূচি শুরু হয় ব্লক চত্বর ও তার পারিপার্শ্বিক স্থানে।
বিডিও অনির্বাণ বসু বিজ্ঞানীক ভাবধারায় ঘন্টা খানেক প্রশিক্ষণের পর থেকে বিষাক্ত পার্থনিয়াম আগাছা নিধনের কর্মসূচি শুরু হয়। ব্লক চত্বর থেকে পার্থেনিয়াম নাশের অভিযান শুরু করেন বিশিষ্ট জনেরা। বিডিও অনির্বাণ বসু পার্থেনিয়াম সম্পর্কে বিস্তারিত জানান-
‘পার্থেনিয়াম একটি উদ্ভিদ; একটি আগাছার নাম। যে কোনো প্রতিকূল পরিবেশে বাঁচতে সক্ষম এই আগাছা। বিশেষ করে ফসলের খেত কিংবা রাস্তার দুধারে জন্মে থাকে। আগাছাটিকে বেঁচে থাকতে হলে কোনো ধরনের যত্ন-আত্তির প্রয়োজন পড়ে না। খুব সহজেই প্রকৃতিতে খাপ খাইয়ে নিতে পারে। এটি আমাদের দেশের নিজস্ব উদ্ভিদ নয়, এসেছে মেক্সিকো থেকে। ছড়িয়ে পড়েছে গোটা উপমহাদেশে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, আফ্রিকা, চীন, পাকিস্তান, নেপাল ও ভারতে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। সে সুবাদে আমাদের দেশেও এসেছে। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী জেলার রাস্তার দুধারে বেশি নজরে পড়ে। এছাড়াও দেশের অন্যান্য জেলায় কমবেশি দেখা যায়। তবে এখনো ফসলের খেতে দেখা যায়নি। এটি ছড়িয়েছে কয়েকভাবেই। গরুর গোবর, গাড়ির চাকার সঙ্গে লেপটে, সেচের মাধ্যমে এবং জুতার তলার কাদার সঙ্গে লেপটে ছড়িয়ে পড়েছে।
এ গাছ সাধারণত এক থেকে দেড় মিটার উচ্চতার হয়। অসংখ্য শাখা; ত্রিভুজের মতো ছড়িয়ে থাকে। ছোট ছোট সাদা ফুল হয়। ঠিক যেন ধনেগাছের ফুল। হঠাত্ করে দেখলে যে কেউ ভুল করবেন ধনে ভেবে। গাছটির আয়ুষ্কাল মাত্র তিন-চার মাস। আয়ুুষ্কালের মধ্যে তিনবার ফুল ও বীজ দেয় গাছটি। ফুল সাধারণত গোলাকার, সাদা, পিচ্ছিল হয়। এ গাছ তিন-চার মাসের মধ্যে ৪ হাজার থেকে ২৫ হাজার বীজের জন্ম দিতে সক্ষম।
আগাছাটি অত্যন্ত ভয়ংকর। গবাদি পশু চরানোর সময় গায়ে লাগলে পশুর শরীর ফুলে যায়। এ ছাড়াও তীব্র জ্বর, বদহজমসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়। আর পশুর পেটে গেলে কেমন বিষক্রিয়া হতে পারে তা অনুমেয়। শুধু পশুই নয়, আগাছাটি মানুষের হাতে পায়ে লাগলে চুলকে লাল হয়ে ফুলে যায়। পাশাপাশি ত্বক ক্যানসার সৃষ্টি করে। আক্রান্ত মানুষটির ঘনঘন জ্বর, অসহ্য মাথাব্যথা ও উচ্চ রক্তচাপে ভুগতে থাকে। এমনকি মারাও যেতে পারে। ভারতের পুনেতে পার্থনিয়ামজনিত বিষক্রিয়ায় ১২ জন মানুষ মারা যাওয়ার রেকর্ড রয়েছে এই পর্যন্ত। এতসব ভয়ংকর বিষয়াদি জানতে পেরে পরিবেশবিদেরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। আতঙ্কিত হয়েছেন কৃষিবিদরাও।
কৃষিবিদরা এ আগাছা নিয়ে বেশ শঙ্কিত। তারা এটিকে বিষাক্ত আগাছা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। এটি শুধু বিষাক্তই নয়; যে কোনো ধরনের ফসলের ব্যাপক ক্ষতিও করে। প্রায় ৪০ শতাংশ ফসল কম ফলে যদি কোনো খেতে পার্থেনিয়াম থাকে। এসব ক্ষতিকর দিকগুলো পর্যালোচনা করে কৃষিবিদরা গাছটি পুড়িয়ে ফেলতে পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু সেক্ষেত্রেও সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন : এটি কেউ কাটতে গেলে ব্যক্তির হাতে-পায়ে লাগতে পারে। পোড়াতে গেলে ফুলের রেণু দূরে উড়ে বংশবিস্তার ঘটাতে পারে। আবার ব্যক্তির নাকে, মুখেও লাগতে পারে। তাতে করে তিনি মারাত্মক বিষক্রিয়ায় পড়তে পারেন। এ ক্ষেত্রে খুব সতর্কতার সঙ্গে প্রথমে গাছটিকে কাটতে হবে। হাতে গ্লাভস, চোখে চশমা থাকলে ভালো হয়। পা ভালোমতো ঢেকে রাখতে হবে। মোটা কাপড়ের প্যান্টের সঙ্গে বুটজুতা পরা যেতে পারে, সঙ্গে মোটা কাপড়ের জামাও পরতে হবে।
গাছকাটা হলে গভীর গর্তে পুঁতে ফেলতে হবে। এ ছাড়াও রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় আগাছানাশক ব্যবহার করে এ গাছ দমন করা যায়। সেক্ষেত্রে ডায়ইউরোন, টারবাসিল, ব্রোমাসিল ৫০০ লিটার পানিতে মিশিয়ে হেক্টরপ্রতি প্রয়োগ করতে হবে। আবার প্রতি হেক্টরে দুই কেজি ২.৪ সোডিয়াম লবণ অথবা এমসিপি ৪০০ লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করেও এ আগাছা দমন করা যেতে পারে।
সবচেয়ে ভালো হচ্ছে জৈবিক প্রক্রিয়ায় দমন করলে। তাতে করে ক্ষতির সমূহ সম্ভবনা নেই বললেই চলে। এই পদ্ধতিতে নানা ধরনের পাতাখেকো অথবা ঘাসখেকো পোকার মাধ্যমে পার্থেনিয়াম দমন করা সম্ভব।
তবে সুখবরটি হচ্ছে আমাদের দেশে এখনো পার্থেনিয়ামের বিষক্রিয়ায় কেউ আক্রান্ত হননি। গবাদি পশুর ব্যাপারেও সে ধরনের উদ্বেগজনক খবর আমাদের কানে এসে পৌঁছায়নি। কাজেই আমাদের উচিত এখনই সতর্ক হওয়া— যেসব জেলায় পার্থেনিয়ামের সন্ধান পাওয়া গেছে সেখানে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা মাধ্যমে কৃষকদের অবহিত করা এবং গাছ নিধনের জন্য পরামর্শ দেওয়া। তাতে করে এই বিষাক্ত আগাছা থেকে রেহাই পাওয়া যেতে পারে।