সমুদ্রের মতো গর্জন করছে ভাটরা বিল

    ৩০ জুলাই, মালদা: হঠাৎ করে দেখলে দীঘা বলেই ভ্রম হওয়াটা স্বাভাবিক। সকাল সন্ধ্যা উৎসাহী মানুষের ভিড়। কেউ ভাঙ্গা ঢেউয়ে স্নান করতে ব্যস্ত। তো কেউবা ব্যস্ত সেলফি তুলতে। পুরাতন মালদার সাহাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ভাটরা বিলের ছবিটা এখন এরকমই। সপ্তাহ তিনেক আগেও যেখানে ছিল সবুজ ধান ক্ষেত সেখানে এখন আদিগন্ত জলরাশি। বিলের জল কুল ছাপিয়ে দক্ষিণ ভাটরা গ্রামের কাছে চলে এসেছে। কয়েক বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এই বিল এখন জেলার মানুষের কাছে আকর্ষনের কেন্দ্রবিন্দু। এমনকি বাইরে থেকে জেলায় ঘুরতে আসা মানুষও এখন ভিড় করছেন ভাটরা বিলে। যদিও ধানের জমি এই বিলের জলে তলিয়ে যাওয়ায় সংকটে পড়েছেন স্থানীয় কৃষকরা।

    পুরাতন মালদার সাহাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ভাটরা গ্রাম। এই গ্রামের পাশেই রয়েছে ভাটরা বা শান্তিপুর বিল। প্রায় ৪ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এই বিল। শান্তিপুর, মাধাইপুর, মোরগ্রামের মত গ্রামগুলির লাইফ লাইন এই বিল। বিলের চারিদিকেই ফসলের ক্ষেত। বিলের জল সেচ করেই শুখা মরশুমে চাষ করেন কৃষকেরা। তবে বর্ষার মরশুম শুরু হতেই রূপ বদলাতে থাকে ভাটরা বিল। জল বাড়তে থাকায় কূল ছাপিয়ে তা ছড়িয়ে পড়ে চাষের জমিতে। আয়তনে বাড়তে বাড়তে এখন বিলটি প্রায় দক্ষিণ ভাটরা গ্রাম ছুঁয়ে ফেলেছে। প্রায় সাগরের চেহারা নিয়েছে বিল। বড় বড় ঢেউ দেখতে ভিড় করছেন শয়ে শয়ে মানুষ। সমুদ্রের মতো গর্জন করে ভেঙে পড়া ঢেউয়ে স্নান করতে ভিড় ক্রমেই বাড়ছে। অনেকে সপরিবারে কাটিয়ে যাচ্ছেন একটা দিন। কেউ সেলফিতে ধরে রাখতে চাইছেন মূহূর্ত। মোথাবাড়ি থেকে সপরিবারে এসেছিলেন নীলাংশু রায়। তিনি জানালেন, “এটাকে ছোটোখাটো দীঘা বলা যেতে পারে। আমি প্রতিবারই এই বিল দেখতে আসি। এবারে বিলের সৌন্দর্য যেন আরো বেশি।” কোনদিনও দীঘা দেখেননি ইংরেজ বাজারের বছর আশির কুসুমবালা রায়। তবে দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাতে এদিন নাতির হাত ধরে এসে উপস্থিত হয়েছিলেন ভাটরা বিলে। তিনি জানালেন,” আর কদিন বাঁচবো জানিনা।টিভিতে দীঘা দেখেছি। খুব যাওয়ার ইচ্ছে হতো। তবে কোনোদিন যাওয়া হয়নি । আজকে নাতির হাত ধরে এখানে এসেছি। একদম দিঘার মতোই মনে হচ্ছে।” বিলের ধারে বিকেলে আড্ডা জমাচ্ছেন স্কুল কলেজের পড়ুয়ারাও। তবে এত কিছুর পরেও আক্ষেপ থাকছেই স্থানীয় কৃষকদের। বলরাম দাস, হেমন্ত রায়ের মতো কৃষকরা জানালেন,” বহু মানুষ বিল দেখতে আসছেন, ভালোই লাগছে। তবে ওই বিলের জলেই তো তলিয়ে গেছে আমাদের কয়েকবিঘার ফসল।”