আদালতের অভিনব নির্দেশে ট্রাফিকের দায়িত্ব সামলাচ্ছে ট্রাফিক আইন ভাঙা যুবকরাই

নতুন গতি নিউজ ডেস্ক। অবস্থায় বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানো, হেলমেটবিহীন বাইক চালানো এবং অন্যান্য ট্রাফিক বিধিভঙ্গের প্রতিরোধে নিয়মিত চলছে কলকাতা পুলিশের অভিযান এবং নজরদারি। সেই নজরদারি এবং ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের কাজে এখন দেখা যাচ্ছে কয়েকজন যুবককেও, যারা কেউই কলকাতা ট্রাফিক পুলিশে কর্মরত নয়।তাহলে এরা ট্রাফিক পুলিশের পাশে দাঁড়িয়ে নাকা তল্লাশিতে কিংবা ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করছে কেন? উত্তর পেতে গেলে দিনকয়েক পিছিয়ে যেতে হবে।

    গত ১৮ জুলাই আনন্দপুর রোডে তল্লাশির সময় একটি বাইক চোখে পড়ে কসবা ট্রাফিক গার্ডের অফিসার-ইন-চার্জ ইনস্পেকটর নীলেশ চৌধুরীর। বাইকে ৩ জন আরোহী। কারও মাথাতেই হেলমেট নেই। ওসি এবং পুলিশ ড্রাইভার ইমদাদুল আলি তাদের থামানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু বাইকটি দ্রুত গতিতে তাঁদের পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে যায়। বাইকের ধাক্কায় বাঁ হাতে চোট পান ইমদাদুল আলি। পালানোর সময় একজন পথচারীকেও ধাক্কা মারে সেই বাইক।

    ধাওয়া করে চৌবাগা রোডে হেরিটেজ কলেজের সামনে বাইকটিকে ধরে ফেলেন নীলেশ। পিছনের ২ জন আরোহী পালিয়ে গেলেও বাইক-চালক পালাতে পারেনি। নাম বিক্রান্ত সিং। মাদুরদহর বাসিন্দা বিক্রান্ত, ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ছাত্র। এই ঘটনাটির বিষয়ে আমরা আমাদের ফেসবুক পেজে একটি পোস্টও করেছিলাম।

    বিক্রান্তের কারাদণ্ডের নির্দেশ দেননি মাননীয় বিচারক। জামিন পেয়েছে সে।জামিনের শর্ত, প্রতি সপ্তাহে ৩ দিন রুবি ক্রসিং-এর কাছে কসবা ট্রাফিক গার্ডে তাকে হাজিরার নির্দেশ দিয়েছেন মাননীয় বিচারক।ওই ৩ দিন ৩ ঘন্টা করে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের কাজে সাহায্য করতে হবে বিক্রান্তকে। কারাদণ্ড হলে তার ভবিষ্যৎ প্রশ্নের মুখে পড়ে যেত। এখন, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের কাজে সাহায্য করার মধ্যে দিয়ে নিয়মানুবর্তিতার অত্যন্ত মূল্যবান শিক্ষা পাবে বিক্রান্ত,তার পরবর্তী জীবনের জন্য যা খুব জরুরি।

    কয়েক দিন আগের আর একটি ঘটনাতেও মাননীয় আদালতের এমনই নির্দেশ দিয়েছিলেন। গত ১৫ জুলাই রাতে, বুড়োশিবতলা এবং সত্যেন রায় রোডের মোড়ে নাকা তল্লাশি চালাচ্ছিল বেহালা থানা এবং জেমস লং সরণি ট্রাফিক গার্ডের পুলিশ। সেই তল্লাশির সময় হেলমেট ছাড়া মোটরবাইক চালানোর অপরাধে শিবেন্দু সিংহ নামের এক যুবককে জরিমানা করেন জেমস লং সরণি ট্রাফিক গার্ডের একজন সার্জেন্ট। শিবেন্দু সরশুনার বাসিন্দা। তখনকার মতো জরিমানা মিটিয়ে ফিরে গেলেও কিছুক্ষণ পরেই তার ২ বন্ধুকে নিয়ে ফের ঘটনাস্থলে ফিরে আসে শিবেন্দু। কেন জরিমানা করা হয়েছে, তা নিয়ে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের কর্মীদের সঙ্গে বচসা শুরু করে দেয় ৩ জন। এমনকি, পুলিশের কাজে বাধাও দেয় তারা। খবর পেয়ে বেহালা থানা থেকে ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছন অতিরিক্ত পুলিশকর্মীরা। শিবেন্দু ছাড়াও গ্রেপ্তার করা হয় তার ২ বন্ধু বিশ্বজিৎ মণ্ডল এবং প্রতিম পাইককেও। ৩ জনেই একটি কুরিয়র সংস্থায় ডেলিভারি বয়ের কাজ করে। বিশ্বজিৎ এবং প্রতিম টালিগঞ্জ সার্কুলার রোডের বাসিন্দা।

    পরের দিন, ৩ জনকেই শর্তসাপেক্ষে জামিন দেন মাননীয় বিচারপতি। শর্তটা কী? আগামী ৩ মাস সপ্তাহে ৩ দিন কলকাতা পুলিশকে নাকা তল্লাশির সময় সাহায্য করতে হবে তাদের। এছাড়া, তাদের নিয়মিত হাজিরা দিতে হবে বেহালা থানাতেও। ঐ নির্দেশের ফলেই এখন নিয়মিত নাকা তল্লাশির সময়ে হাজির থাকছে শিবেন্দু, বিশ্বজিৎ এবং প্রতিম। সাহায্য করছে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের কাজেও।

    মহামান্য আদালতের এই রায়কে স্বাগত।আশা,ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের কাজে সাহায্যের দায়িত্ব পেয়ে ওদের মনোভাব বদলাবে।সচেতন ও দায়িত্ববান নাগরিক হিসেবেই বাকি জীবন কাটাবে ওরা।