বিশ্ব হিজাব দিবস

আসিফ রনি, নতুন গতি, বহরমপুর :-আজ ১ ফেব্রুয়ারি পালিত হচ্ছে ‘বিশ্ব হিজাব দিবস’। ২০১৩ সাল থেকে দিবসটি উদযাপিত হয়ে আসছে। দিবসটি পালনের জন্য নিউইয়র্কে বসবাসরত বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নাজমা খান ইন্টারনেটভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগের সাইটগুলোতে প্রথম আহবান জানান। মুসলিম-অমুসলিম নির্বিশেষে সকল নারীদের প্রতি নাজমার আহবানে সাড়া দিয়ে ২০১৩ সালের ১ ফেব্রুয়ারি বিশ্বের প্রায় ৫০টি দেশের বিভিন্ন ধর্মের নারীরা দিবসটি পালনে এগিয়ে আসে। এরই ধারাবাহিকতায় এবার বিশ্ব হিজাব দিবস ১৪০টির বেশী দেশে পালিত হচ্ছে।

    নাজমা খান মাত্র ১১ বছর বয়সে বাংলাদেশ থেকে আমেরিকায় গিয়েছিলেন। প্রেক্ষাপট হিসেবে নাজমা বলেন, তিনি যখন হিজাব মাথায় স্কুলে যেতেন, তখন তাকে অনেক অপমান ও লাঞ্ছনার শিকার হতে হতো। তিনি আরও বলেন, আমেরিকাতে হিজাবকে সাধারণত এখানে নারীর প্রতি নিপীড়ন এবং বৈষম্যের প্রতীক হিসেবে দেখা হয় এবং এজন্য তাকেও অনেক বৈষম্যের শিকার হতে হয়। আর এই বৈষম্যের অবসান ঘটানোর উদ্দেশ্য নিয়েই তিনি তার অমুসলিম বোনদেরকেও হিজাব পরার অভিজ্ঞতা শেয়ার করে বাস্তবেই এটা কি কোনো নিপীড়ন কি না তা পরখ করার আহবান জানিয়ে হিজাব দিবসের ডাক দেন।

    নাজমা মনে করেন, হিজাব পরিধান করার জন্য যে মুসলিম হতেই হবে এমন কোনো কথা নেই। হিজাব মূলতঃ শালীনতার জন্য পরিধান করা হয়। তাই তিনি এটা পরিধান করায় কোনো সমস্যা দেখেন না। তার এই কথায় ব্যাপক সাড়া মেলে। ফলে দেখা যায়, হাজারো অমুসলিম নারী হিজাব পরে দিবসটি পালন করেন। হিজাবকে অনেকে দেখেন নারীদের অবদমন ও বিভাজন সৃষ্টির প্রতীক হিসেবে। নানা বিতর্ক মোকাবেলায় হিজাব দিবসের ডাক দেন নাজমা। অমুসলিম ও মুসলিম নারীদের যারা সচরাচর হিজাব পরেন না, তাদের অনেকের মনোযোগ আকর্ষণ করেন তিনি। তিনি বলেন, মানুষের পোশাক ও বেশ দেখে বিচার-বিবেচনা করা ঠিক নয়, এ বিষয়টি প্রমাণের জন্য এ দিবস একটা মোক্ষম সুযোগ। অমুসলিম নারীরা যদি মাত্র এক দিনের জন্য হলেও হিজাব পরেন, তাহলে মুসলিম নারীদের আর এ ধরনের বৈষম্যের শিকার হতে হবে না।

    ইসলাম ধর্মে হিজাব খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কোরআন ও হাদিসের বহু জায়গায় হিজাবের কথা উল্লেখ রয়েছে। তবে হিজাব শুধু মহিলাদের প্রতি নয় কোরআনে পুরুষদের প্রথমে হিজাবের কথা বলা হয়েছে। এই কারণ কোরআন থেকে জানা যায় যে হিজাব মহিলাদের সম্মান ও সুরক্ষা দেয়। দেশে শিশু ধর্ষণ, গণধর্ষণসহ সামাজিক অপরাধ বেড়ে গেছে। মেয়েরা পাশবিকতার শিকার হচ্ছেন। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ দিতে পারে হিজাব। হিজাব মূলত নারীর সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে এবং তাদের হিংস্রতার হাত থেকেও রক্ষা করে। বর্তমান সমাজে যে অনাচার চলছে, সংস্কৃতি ও নারী স্বাধীনতার নামে অশ্লীলতার নৃত্য চলছে তা থেকে রক্ষা করতে পারে হিজাব।

    বিশ্বের যে সমস্ত দেশগুলোতে বিশেষ করে আরব দেশগুলোতে সেখানে হিজাব লক্ষ্য করা যায়। সে দেশে গুলোতে পাশ্চাত্য ও আমাদের দেশের তুলনায় ধর্ষণ পরিমাণ খুবই কম।
    বর্তমানে পশ্চিমা বিশ্বের যে সমস্ত মানুষ গুলো ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করছে তাদের বেশিরভাগই নারী। তারা যে জিনিসটার প্রতি লক্ষ্য রেখে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করছে সেটি হচ্ছে হিজাব। কারণ তারা নিশ্চিত হয়েছে যে হিজাবে তারা সুরক্ষা এবং সম্মান পায়।

    পরিশেষে বলতে চাই: হিজাব তো কোন ধর্মের প্রতিক হতে পারে না। হিজাব ধর্ম, বর্ণ, জাত সকল নারীর সৌন্দর্য, নারীর স্বাধীনতা। হিজাব পরলেই আমরা সহজেই মুসলিম বলে ফেলি কিন্তু কেন এত ধর্ম দিয়ে বিভাজন সৃষ্টি করা হয়? যে কোন ধর্মের মেয়েটি তার নিরাপত্তা,তার সৌন্দর্য,তার স্বাধীনতার জন্য হিজাব পরতেই পারে। হিজাব কি শুধু মুসলিম নারীদের একার পরার অধিকার আছে? যদি নাই থাকে তাহলে কেন হিজাব দিয়ে ওমুক ধর্ম,ওমুক অপরাধ নির্দেশ করা হবে ?
    এবার বিশ্ব হিজাব দিবসের স্লোগান:

    হিজাব ইজ মাই ফ্রিডম
    হিজাব ইজ মাই প্রটেকশন
    হিজাব ইজ মাই চয়েস
    হিজাব ইজ মাই কভার