|
---|
নিজস্ব প্রতিনিধি, মালদা ঃ গোষ্ঠী লড়াইয়ে ছিন্নভিন্ন মালদার তৃণমূল কংগ্রেসের উপর নজর পড়েছে বিজেপির। তৃণমূলের নেতৃত্বাধীন ইংরেজবাজার পৌরসভার পৌরপ্রধান নীহার ঘোষের বিরুদ্ধে তৃণমূলেরই বেশিরভাগ কাউন্সিলর সম্প্রতি অনাস্থা প্রস্তাব পেশ করেছেন। এদের মধ্যে আছেন উপ পৌরপ্রধান বাবলা সরকারও। তৃণমূলের কাউন্সিলরদের এই প্রকাশ্য লড়াইকে হাতিয়ার করেই এবার তৃণমূলে থাবা বসানোর জন্য ওঁত পেতে আছে বিজেপি। যেকোনো মুহূর্তে একদল কাউন্সিলরকে দলে টেনে ইংরেজবাজার পুরসভা দখল করাই আপাতত বিজেপি’র পরিকল্পনা বলে রাজনৈতিক সূত্রে জানা গেছে। তৃণমূলের অনেক কাউন্সিলরই তলায় তলায় বিজেপির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখতে শুরু করেছেন বলেও ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে বিজেপির পক্ষ থেকে। একই অবস্থা ওল্ড মালদা পৌরসভাতেও। পাশাপাশি, জেলা জুড়ে তৃণমূলের অনেক রথী মহারথীই আপাতত বিজেপি’র দিকে পা বাড়িয়ে আছেন বলে তৃণমূলেরই প্রথম সারির অনেক নেতা গোপনে স্বীকারও করে নিচ্ছেন। নীহার ঘোষের আমলে পৌরসভার নিয়মিত মিটিং হয় না বলে অভিযোগ করেছেন তাঁর দলেরই কাউন্সিলররা। তাঁরা দাবী করেছেন, নিজের মর্জি মতো নীহার ঘোষ পৌরসভা চালান। মানুষ কোনো পরিসেবা পায় না। দলের কাউন্সিলরদের তিনি গুরুত্ব দেন না। তাই নীহারবাবুকে সরাতে তাঁরা একজোট হয়েছেন বলে ওই কাউন্সিলরদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
এদিকে আচমকাই মালদা জেলা পরিষদের মেন্টর পদ থেকে বিদায় নিয়েছেন কৃষ্ণেন্দু চৌধুরি। তবে তিনি নিজে পদত্যাগ করেছেন বলে দাবি করলেও জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে তাঁকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। ইংরেজবাজার পুরসভার চেয়ারম্যান নীহার ঘোষের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবে সই করার ২৪ ঘন্টার মধ্যে কৃষ্ণেন্দু চৌধুরির এই বিদায় রাজনৈতিক জল্পনা আরো তীব্র করেছে। সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে গিয়ে কৃষ্ণেন্দু প্রায় স্বীকারই করে নিয়েছেন যে বিগত নির্বাচনেই দেখা গেছে মানুষ রাজ্য সরকারের কাছ থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে। একই সাথে তিনি বলেন, ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে অনেক অনিয়ম নিয়ে তিনি বহুবার সরব হলেও কাজের কাজ কিছু হয় নি।
একই রকম বিতর্ক তৈরি হয়েছে ইংরেজবাজার পৌরসভার আরেক কাউন্সিলর আশীষ কুন্ডুকে নিয়েও। ডিস্ট্রিক্ট প্রাইমারী স্কুল কাউন্সিলের চেয়ারম্যান থেকে তিনি পদত্যাগ করেন। কিন্তু তাঁর দলের অনেক নেতা নেত্রী দাবী করেন যে আশীষবাবুকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছে কারণ তাঁর নামে নাকি গাদাগাদা অভিযোগ ছিল। আবার নির্বাচনে লড়বেন না বলে জানিয়েছেন তৃণমূল নেতা বাবলা সরকারও। তারও আগে জেলা কমিটি ঘোষণা হওয়ার পরেই তীব্র বিদ্রোহ শুরু হয়ে যায় মৌসম নূরের বিরুদ্ধে। শেষ পর্যন্ত ক্ষোভের আঁচ পেয়ে মৌসম নূরের কমিটি বাতিল করে দেয় তৃণমূল রাজ্য নেতৃত্ব। কালিয়াচক ২ ব্লক থেকে রতুয়া ১ ব্লক জেলার প্রায় সর্বত্রই তৃণমূলের ভিতরে চরম লড়াই শুরু হয়েছে গত একমাস ধরে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক তৃণমূল নেতা বলেন, মালদায় এই মুহূর্তে দল প্রবল সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। একে অপরকে হেনস্থা করতে উঠে পড়ে লেগেছে। যারা পুরানো তৃণমূল আর যারা পরে দলে এসেছেন তাদের মধ্যে সব সময় লড়াই লেগে আছে। একজন আরেকজনের দুর্বলতা মিডিয়াকে জানিয়ে দিয়ে বিপদে ফেলছে। বেশিরভাগ তৃণমূল নেতাই এখন তিতিবিরক্ত। তারই সুযোগ নিতে চাইছে বিজেপি। বিজেপির জেলা সহ সভাপতি অজয় গাঙ্গুলি পরিস্কার করে বলেন, কৃষ্ণেন্দু চৌধুরি দুর্নীতি পরায়ন কিনা সেটা ভিন্ন বিষয়। কিন্তু তিনি বলছেন যে দুর্নীতির প্রতিবাদ করেছেন। সেইজন্যই তাঁর পদ গেল কিনা সেটা দেখতে হবে। ইংরেজবাজার পৌরসভার আর্থিক কারণে লড়াই লেগেছে তৃণমূলের ভিতরে। অনেক রাঘব বোয়াল বিজেপির সাথে তলায় তলায় যোগাযোগ করছে। কাকে কখন দলে নেওয়া হবে আর কাকে নেওয়া হবে না সেইসব পরে দেখা যাবে। কিন্তু খুব তাড়াতাড়ি ইংরেজবাজার ও ওল্ড মালদা পুরসভা দখল করে বিজেপি পরিচ্ছন্ন পরিসেবা দিবে মানুষকে।