পরিবেশ রক্ষাকে অগ্রাধিকার দিয়ে একগুচ্ছ মডেল গ্রাম তৈরি করবে পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদ

নিজস্ব সংবাদদাতা : পরিবেশ রক্ষাকে অগ্রাধিকার দিয়ে একগুচ্ছ মডেল গ্রাম তৈরি করবে পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদ।জেলা পরিষদের সহ–সভাধিপতি দেবু টুডু জানান, জেলায় ২,২১৪টি গ্রাম রয়েছে। তার মধ্যে ভাগীরথী–লাগোয়া ১৯টি পঞ্চায়েত–সহ জেলার ৫০০টি গ্রামকে প্রথম ধাপে ‘মডেল ভিলেজ’ হিসেবে গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এগুলির কাজ শেষ হলে ধাপে ধাপে সব গ্রামকেই মডেল হিসেবে গড়ে তোলা হবে। একেকটি মডেল ভিলেজ তৈরি করতে খরচ ধরা হয়েছে ২০ লাখ টাকা। পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের টাকায় কাজটি হবে জেলা পরিষদের তত্ত্বাবধানে। কী থাকবে মডেল ভিলেজগুলিতে? জানা গেল, গ্রামগুলির আবর্জনা সংগ্রহের জন্য পঞ্চায়েতগুলির কর্মীরা বাড়ি বাড়ি যাবেন। পচনশীল ও অপচনশীল বর্জ্য সম্পর্কে গ্রামবাসীদের সচেতন করে আলাদা জায়গায় রাখার ব্যবস্থা হবে। গ্রামগুলি হবে প্লাস্টিক বর্জ্যমুক্ত। ভবিষ্যতে প্লাস্টিক ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট প্রকল্প তৈরির পরিকল্পনাও রয়েছে। পরিকল্পনার অঙ্গ হিসেবে প্লাস্টিক গলিয়ে মণ্ড তৈরি করে বিক্রি করা হবে। যে মণ্ড থেকে বিভিন্ন জিনিস তৈরি হবে। নিকাশি ব্যবস্থা সুচারু করা হবে। পানীয় জলের সুরাহা হবে। রাস্তাগুলি আবর্জনামুক্ত করা হবে। আবর্জনা সংগ্রহের জন্য গ্রামগুলিতে ই–রিকশা দেওয়া হবে। আবর্জনা থেকে জৈব সার তৈরি করে সমবায়ের মাধ্যমে বিক্রি করা হবে। জেলার ৩৩টি পঞ্চায়েতে ইতিমধ্যেই সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট প্রকল্প তৈরি হয়েছে। গবাদি পশুর মল যাতে রাস্তায় পড়ে না থাকে, সে ব্যাপারে নিশ্চিত করা হবে। শৌচাগারহীন কোনও বাড়ি থাকবে না। গ্রামের রাস্তার পাশেও শৌচালয় থাকবে। এছাড়া ভাগীরথী–লাগোয়া গ্রামগুলির দূষিত জল যাতে নদীতে না পড়ে, সে জন্য দূষিত জল পরিস্রুত করে নদীতে ফেলার পরিকল্পনাও রয়েছে।‌ পরিষেবা ও পরিকাঠামোগতভাবে শহরের নাগরিক সুবিধা যাতে গ্রামগুলিও পায়, পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদ তার জন্য উদ্যোগী হওয়ায় খুশি গ্রামাঞ্চলের বাসিন্দারা। মাস দুয়েকের মধ্যেই ‘মডেল ভিলেজ’ তৈরির কাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। মডেল ভিলেজ তৈরি হলে কর্মসংস্থানও হবে। কারণ প্রতিটি বাড়িতে গিয়ে আবর্জনা সংগ্রহের জন্য কর্মী নিয়োগ করতে হবে। এছাড়া মডেল ভিলেজগুলিতে সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট প্রকল্প তৈরি হলে সেগুলি পরিচালনার জন্যও কর্মীর দরকার হবে। টোটো, বালতি ও অন্যান্য সামগ্রী কেনার জন্য যে অর্থ ব্যয় হবে, তা পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের পাওয়া টাকা থেকেই আসবে। প্রকল্পটি জেলা পরিষদের হলেও প্রকল্প রূপায়ণে সংশ্লিষ্ট গ্রামপঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতিগুলির সহযোগিতা নেওয়া হবে। গ্রামাঞ্চলের সবথেকে বড় সমস্যা হল, দূষিত জলের প্রকোপ। নিকাশি ব্যবস্থা ঠিকঠাক না থাকায় যত্রতত্র দূষিত জল ছড়িয়ে থাকে। মডেল ভিলেজগুলিতে তা যাতে না হয়, সে জন্যও পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। মডেল ভিলেজগুলিতে দূষণ ছড়ানো আটকাতে বায়োগ্যাসের প্লান্ট তৈরি হবে। জেলা পরিষদের সহ–সভাধিপতি দেবু টুডুর কথায়, ‘মডেল ভিলেজ তৈরির জন্য যে সমস্ত পরিকল্পনা রয়েছে, তা রূপায়িত হওয়ার পর একদিকে যেমন আরও কিছু গ্রামকে ‘মডেল’ হিসেবে গড়ে তোলা হবে, তেমনি মডেল ভিলেজগুলিকেও আরও উন্নত করার জন্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘মমতা ব্যানার্জি চাইছেন গ্রামের মানুষও যেন আধুনিক পরিষেবা ও দূষণমুক্ত পরিবেশ পান। সেই চাওয়াকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রূপায়ণের পথে এগোচ্ছে আমাদের জেলা পরিষদ।’ এমনিতেই সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট প্রকল্পে রাজ্যের অন্য জেলাগুলির তুলনায় অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে পূর্ব বর্ধমান। এমনকী প্লাস্টিক ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট প্রকল্প তৈরির পরিকল্পনাও রয়েছে জেলায়। তাতে গ্রামের যত্রতত্র বা নালা–নর্দমা থেকে প্লাস্টিক সংগ্রহ করে সেগুলিকে রি–মডেলিং করার পরিকল্পনা রয়েছে। এর আগে জেলার ১৩টি গ্রামকে চিহ্নিত করা হয়েছে। সেগুলির নাম দেওয়া হয়েছে ‘রাইজিং ভিলেজ’। এগুলি আসলে মডেল ভিলেজ গঠনের দিকে একধাপ এগিয়ে গিয়েছে। জানা গেল, এই ১৩টি গ্রামকে পুরোপুরিভাবে মডেল ভিলেজ গড়ে, সেগুলিকে সামনে রেখে বাকি গ্রামগুলিকে মডেল হিসেবে গড়ে তোলা হবে।