বিজ্ঞাপনের ভুয়ো টোপ থেকে সাবধান !

মহঃ মফিজুর রহমান, নতুন গতি : যদি পকেট ফাঁকা করে হতাশায় নিজের মাথায় হাত বোলাতে না চান, তাহলে বিজ্ঞাপনের ভুয়ো টোপ থেকে সাবধান ! আর যদি পকেটের টাকা ও শ্রম নষ্ট করে হতাশায় নিজের মাথায় হাত বোলাতে চান, তাহলে বিজ্ঞাপনের ভুয়ো টোপকে বলুন ‘ওয়েলকাম’ ! বর্তমানে টেলিভিশন, সোশাল মিডিয়া, সংবাদপত্র বা অন্য কোন মাধ্যমে আকর্ষণীয় কিংবা লাভজনক বিজ্ঞাপন দেখে লাফ দেওয়ার আগে সাবধানতা অবলম্বন করা প্রয়োজন । কারণ সব বিজ্ঞাপনই যে সঠিক, তা নয় । একশ্রেণির মুনাফালোভী মানুষ কিংবা ‘কোম্পানি’ বিজ্ঞাপনে আকর্ষণীয় বা লাভজনক টোপ দিয়ে থাকে । যা আদতে সম্পূর্ণ ভুয়ো এবং অবাস্তব । আবার কিছু বিজ্ঞাপনের টোপ আংশিক সত্য হলেও সম্পূর্ণ সঠিক নয় ।

    এখন বিভিন্ন মিডিয়ার রমরমা বাজারে বিজ্ঞাপনের চরিত্র বদলে গিয়েছে । বদলে গিয়েছে লোক ঠকানোর কৌশলও । আর এই দুইয়ের জাঁতাকলে পড়ে প্রতারিত হচ্ছেন আমজনতা । সর্বস্বান্তের তালিকায় সুশিক্ষিতদের সংখ্যাটাও কিন্তু কম নয় । কখনও এক ফোনে ব্যাঙ্ক, রেল, বিমানবন্দরে চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি ; আবার কখনও পরীক্ষায় না বসেই সদ্য বছরে উচ্চ নম্বরসহ ডিএলএড, বিএড, মাস্টার ডিগ্রি, পিএইচডি করে দেওয়ার প্রলোভন ! কখনও আবার অল ইন্ডিয়া ওপেন চ্যালেঞ্জসহ মাত্র এক ঘন্টায় চাকরি-বাকরি, মামলা- মোকদ্দমা নিষ্পত্তি করে দেওয়ার ১০০% গ্যারান্টি । আবার কখনও ক্রিমের মাধ্যমে কালো মানুষকেও মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে সিনেমার নায়ক-নায়িকাদের মত ফর্সা সুন্দর করে দেওয়ার হাতছানি !

    দৈনন্দিন এমন হরেক রকমের আকর্ষণীয়, চোখ ধাঁধানো, হৃদয় কোমল করা বিজ্ঞাপনে সাধারণ মানুষের অবস্থা আজ দিশাহারা । লোভে পড়ে লাফ দিয়ে থাকেন অনেকেই । পরে যখন শুভবুদ্ধির উদয় হয়, তার আগে যা হওয়ার হয়ে যায় অর্থাৎ পকেটের টাকা খুইয়ে সর্বস্বান্ত !
    সত্যিই কী এক ফোনে চাকরি পাওয়া সম্ভব ? বিজ্ঞাপনে যে এক ফোনেই চাকরির টোপ দেওয়া হয়, সে বিষয়ে যথেষ্ঠ সন্দেহ থাকাটা যুক্তিহীন নয় । কারণ এক ফোনেই চাকরি নিশ্চিত হলে পশ্চিমবঙ্গসহ গোটা দেশে কেউ বেকার থাকতো কি ? প্রতিদিন ওই ধরনের যতগুলি বিজ্ঞাপন দেখা যায় এবং সেগুলিতে যত পদ সংখ্যা উল্লেখ থাকে, সবগুলি পদ একত্রে করলে হয়তো লাখ ছাড়িয়ে যাবে ! মাইনের অঙ্কটাও কিন্তু কম থাকে না । তাহলে দেশে বেকারত্ব এত বাড়ছে কেন ?

    তথ্যভিজ্ঞ মহলের মতে, আসলে বেকারত্ব পশ্চিমবঙ্গ তথা গোটা দেশে একটা বড় সমস্যা । যার সম্পূর্ণ সমাধান আজ পর্যন্ত কোনো সরকারই করতে পারেনি । এমতাবস্থায় এক ফোনেই চাকরি পাওয়ার সুযোগ প্রায় সব বেকারই লুফে নিতে চান । ফলে এই সুবর্ণ সুযোগকেই কাজে লাগাচ্ছে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীরা । মজার কথা হল অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিজ্ঞাপনে দেওয়া ফোন নম্বরে ফোন করলেই প্রার্থীকে একটা নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে বলা হয় । লোভে পড়ে হাজার হাজার প্রার্থী সেটাই করেন । অধিকাংশ ক্ষেত্রে অভিযোগ ওঠে, টাকা দেওয়ার কিছুদিন পরে প্রার্থীরা বুঝতে পারেন তাদের আমও গেল, ছালাও গেল । সুতরাং চাকরি তো হলই না, আবার মোটা অঙ্কের টাকাও গেল । প্রতিবেদনে উল্লিখিত অন্যান্য বিজ্ঞাপনগুলিও সন্দেহের উর্দ্ধে নয় । এমন বিজ্ঞাপনগুলি যে সবটাই সঠিক, সরল মনে এই রকম ভাবার কোনো যুক্তি নেই । অধিকাংশ ক্ষেত্রে এইসব অপরাধীরা অধরাই থেকে যায় ! কারণ এইসব অপরাধীদের ধরতে পুলিশ প্রশাসনের আঠারো মাসে বছর হয় !

    সাইবার ক্রাইম বিশেষজ্ঞদের মতে, ঠকবাজিদের পায়ে বেড়ি পরানোর মত কড়া ব্যাবস্থা না থাকায় পশ্চিমবঙ্গসহ গোটা দেশে এদের বাজার রমরমা । তাই এই ধরনের বিজ্ঞাপন গুলিকে বিধিনিষেধের আওতায় আনা আজ অত্যন্ত জরুরী বলেই মনে করছেন সাইবার ক্রাইম বিশেষজ্ঞগণ । যদিও স্রেফ কথার জালে জড়িয়ে সমাজ মানসিকতাকে দ্রুত যারা নিজেদের নিয়ন্ত্রনে এনে মুনাফা লুঠেরার তাণ্ডব চালাচ্ছে, তাদের হাত থেকে বাঁচা কঠিন হলেও অসম্ভব নয় । তাই আকর্ষণীয়-চোখ ধাঁধানো বিজ্ঞাপন দেখে লোভে পড়ে লাফ দেওয়ার আগে নিজের সচেতন মনের কষ্টিপাথরে যাচাই করে নিন বিজ্ঞাপন গুলির সত্যতা ।
    ** উল্লেখিত ভুয়ো বিজ্ঞাপনটি বহুল প্রচলিত কয়েকটি সংবাদপত্রে দেওয়া হয়েছিল । পরে প্রতারকরা পুলিশের হাতে ধরা পড়ে ।