|
---|
নতুন গতি নিউজ ডেস্ক: নবান্নে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করলেন দিল্লির কৃষি আন্দোলনের প্রধান মুখ রাকেশ টিকায়েত। জয়ের জন্য অভিনন্দন জানাচ্ছেন, রাকেশে বার্তা এমনটাই। কিন্তু বৈঠকের মাহাত্ম্য স্রেফ এতটুকুই নয়। বরং মুখ্যমন্ত্রীর কাছে রাকেশে টিকায়েত যে আর্জি রাখলেন, তাতে তিনি ভবিষ্যতে বিরোধী ঐক্যের সেতুবন্ধনের চাণক্য হয়ে উঠলে অবাক হওয়ার থাকবে না। রাকেশের আর্জি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই কৃষি আন্দোলনের সমর্থক মুখ্যমন্ত্রীদের একজোট করুন। তাঁদের ঐক্যমতের বার্তা পৌঁছে যাক দিল্লির আন্দোলনকারীদের কাছে। এমনকি দিল্লির গদি ওল্টাতেও যে মমতার নেতৃত্বই ভরসা তা বোঝাতেও কার্পণন্য করলেন না রাকেশ টিকায়েত। স্পষ্ট বললেন, “মমতা দিদি বিজেপিকে হারিয়ে বাংলাকে বাঁচিয়েছে, এবার বিজেপি তাড়িয়ে দেশকে বাঁচাবেন।” অর্থাৎ মুখ্যমন্ত্রীত্বের জন্য অভিনন্দনের পাশাপাশি মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়কে দিল্লিতেও পেতে চাইছেন রাকেশ।
রাকেশে অনুরোধে সাড়া দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যয়ও। মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় বৈঠক থেকেই বলেন, সমস্ত বিরোধী মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে কথা বলার জন্য আমাকে অনুরোধ করেছেন রাকেশ টিকায়েত। আমি সবার সঙ্গে কথা বলব, দেখা যাক একটা ভার্চুয়াল মিটিং করা যায় কিনা। আমাদের সম্মিলিত বার্তা দিল্লি যাবে। এই কথোপকথনে পরিষ্কার রাকেশ আসলে বাইরে থেকে একটি এমন শক্তি হিসেবে কাজ করছেন, যা গোটা দেশের বিরোধি স্বরকে দিল্লিতে একজোট করতে পারেন। আর তাঁর এই সাঁকো বাধার কাজটিই সবচেয়ে বেশি বেগ দিতে পারে মোদি সরকারকে। পাশাপাশি মাইলেজ দিতে পারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সহ অন্যান্য মোদি সরকারের বিরোধীদের। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুযোগ, জানুয়ারি মাসের পর থেকে কৃষক আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কেন্দ্র কথাই বলেনি। তাঁর স্পষ্ট প্রশ্ন, তিনটে বিল বাতিল করলে কী ক্ষতি হবে ?
উল্লেখ্য, মুখ্যমন্ত্রী এদিন বুঝিয়ে দেন কৃষি আন্দোলনের পাশেই আছেন তিনি। ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটটি তুলে এনে তিনি বলেন, “আমরা কৃষক আন্দোলনের পক্ষে আছি। আমি নিজে গণআন্দোলন শুরুই করি সিঙ্গুরের কৃষি আন্দোলন দিয়ে। ২৬ দিন অনশন করে ছিলাম। আমাদের রাজ্যে আইন করা আছে ,কৃষকের জমি কাড়া যাবে না। এই আইন গোটা দেশের রোল মডেল। যতদিন না পর্যন্ত দাবি দাওয়া পূরণ না হয়. ততদিন আমরা এই আন্দোলনের পক্ষে থাকব।”
এ দিনের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন যশবন্ত সিং-ও। যশবন্ত সিং বলেন, “WTO তো যখনই কৃষি নিয়ে আলোচনা হয়েছে তখনই ভারতে কৃষির কর্পোরেটাইজেশানের কথা বলেছেন অনেকে। কিন্তু আমরা এর বিরোধিতাই করে এসেছি। বারবার বলা হয়েছে কৃষি শুধু পেশা না, একটা পরম্পরা। কিন্তু ভারত সরকারই এখন যে পথে হাঁটছে তাতে আমরা আর আগের মতো অটল থাকতে পারছি না। তাই এটা রুখে দেওয়া প্রয়োজন। তিনটি কালাকানুন বাতিলের বিষয়টি আমরা ভারতীয় কৃষকদের সঙ্গেই আছি।”
আগামী দিনে দেশের কৃষকদের অস্তিত্বের স্বার্থেও রাকেশ টিকায়েতরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদক্ষেপ চাইছেন। বৈঠকে উপস্থিত আরেক কৃষক নেতা যুথবীর সিংয়ের দাবি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কৃষকদের জন্য এমন একটা ব্যবস্থা করুন যাতে তা গোটা দেশে তা রোল মডেল হয়। রাকেশ টিকায়েত-যুথবীর সিংদের অভিযোগ, কৃষকরা এখন উৎপাদিত ফসল বিক্রির জায়গা পায় না। এই কারণে মধ্যস্বত্বভোগীরা তাদের শোষণ করে। মমতার কাছে তাঁদের আর্জি উৎপাদক যাতে ন্যায্য মূল্য পায় সেই ব্যবস্থা করুন তিনি।