|
---|
নতুন গতি ওয়েব ডেস্ক: মধ্য প্রদেশের সংস্কৃতি মন্ত্রী ও বিজেপি নেত্রী ঊষা ঠাকুর মাদ্রাসায় সন্ত্রাসবাদী তৈরি হয় বলে বিতর্কিত ও আপত্তিকর মন্তব্য করায় তাঁর বিরুদ্ধে এফআইআর ও তাঁকে বরখাস্ত করার দাবি তুলেছে জমিয়ত উলামা হিন্দ। মধ্য প্রদেশ জমিয়তের সভাপতি হাজী হারুন ওই দাবি জানিয়েছেন।
বুধবার হিন্দি টিভি চ্যানেল ‘আজতক’-এ দেওয়া সাক্ষাৎকারে মধ্য প্রদেশ জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের সভাপতি হাজী হারুন মন্ত্রীসভা থেকে মন্ত্রী ঊষা ঠাকুরকে বরখাস্ত করা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, ‘উষা ঠাকুরের বক্তব্য অত্যন্ত আক্ষেপজনক। তিনি (উষা ঠাকুর) মাদ্রাসার সাথে সন্ত্রাসবাদ যুক্ত করেছেন। সন্ত্রাসবাদের কোন ধর্ম নেই, কোনও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে সন্ত্রাসবাদী শিক্ষা দেওয়া হয় না।’
জমিয়তে দাওয়াতুল মুসলেমিনের মেন্টর এবং বিশিষ্ট আলেম মাওলানা ক্বারী ইসাহক গোরা মধ্য প্রদেশের মন্ত্রী ঊষা ঠাকুরের বক্তব্যকে ‘ঘৃণার রাজনীতি’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘ঊষা ঠাকুর এখানে এসে দেখতে পারেন যে এখানে কী ধরণের শিক্ষা দেওয়া হয়। তাহলে এখানকার পড়াশোনা সম্পর্কে তিনি নিশ্চিত হবেন এবং তাঁর বিদ্বেষও দূর হবে, অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধও আসবে।’
‘ঊষা ঠাকুরের মতো মানসিকতার অধিকারী ব্যক্তিরা কেবল বিদ্বেষ ছড়ানোর জন্য এ জাতীয় অভিযোগ করেন ও বিবৃতি দেন। সুপ্রিম কোর্টের এ জাতীয় লোকেদের বিষয়টি আমলে নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত’বলেও মাওলানা ক্বারী ইসাহক গোরা মন্তব্য করেছেন।
গত মঙ্গলবার বিজেপি নেত্রী ও মধ্য প্রদেশের সংস্কৃতি মন্ত্রী ঊষা ঠাকুর এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘সবার শিক্ষা পাওয়ার অধিকার রয়েছে। দেশে সব শিশুর জন্য একই শিক্ষা ব্যবস্থা হওয়া উচিত। ধর্মনির্ভর শিক্ষা কেন চলবে? লক্ষ্য করে দেখবেন এ দেশের সব মৌলবাদী ও সন্ত্রাসী মাদ্রাসায় পড়ে বড় হয়েছে। জম্মু ও কাশ্মীরকে দেখুন, সন্ত্রাসীদের কারখানা বানিয়ে রেখেছে।’
তাঁর দাবি, মাদ্রাসা জাতীয়তাবাদ মেনে চলতে পারে না। সেজন্য তাদের বর্তমান মূলধারার শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া উচিত।
মন্ত্রী ঊষা ঠাকুর মাদ্রাসায় সরকারি সাহায্য বন্ধের সাফাই দিয়ে বলেন, ‘সরকারি সাহায্য বন্ধের কথাই বলছি। কেউ যদি নিজের উদ্যোগে ধর্মশিক্ষা দিতে চায় দিতে পারে। আমাদের সংবিধানে তার ছাড় রয়েছে। সম্প্রতি মাদ্রাসা বন্ধ করার ঘোষণা করে দেখিয়েছে অসম। জাতীয়তাবাদের পথে যা বাধা হয়ে দাঁড়াবে তা দেশের স্বার্থে বন্ধ করা উচিত’ বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
প্রসঙ্গে বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক ও শিশু সাহিত্যিক মুহাম্মাদ নুরুদ্দিন বলেন, ‘মধ্য প্রদেশের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী ও ইন্দোরের বিজেপি বিধায়ক ঊষা ঠাকুরের মন্তব্য উদ্যেশ্যপ্রণোদিত। তিনি বিভেদের রাজনীতিকে উসকে দিতে এ ধরণের কথা বলছেন। মাদ্রাসা সম্পর্কে বিজেপি নেতাদের মন্তব্যের কোন বাস্তব ভিত্তি নেই। মাদ্রাসা একটি ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। দেশ ও দুনিয়ার অনেক গুণী মানুষ মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেছেন। মাদ্রাসায় সন্ত্রাসবাদের শিক্ষা দেওয়ার কোনও প্রমাণ তাদের কাছে নেই। সেজন্য বিভেদসৃষ্টিকারী এ ধরণের মন্তব্যের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। আসলে মাদ্রাসা সম্পর্কে জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্য তিনি এ ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন। আমি ওই মন্তব্যের তীব্র নিন্দা জানাই। একইসঙ্গে ঘৃণার রাজনীতি না করে দেশের মূল সমস্যার দিকে নজর দিতে আহবান জানাচ্ছি।’
বিজেপিশাসিত মধ্য প্রদেশে আগামী ৩ নভেম্বর ২৮ আসনে বিধানসভার উপ-নির্বাচন হবে। ফল ঘোষণা হবে ১০ নভেম্বর। তার আগেই বিজেপি নেত্রী ও রাজ্যের মন্ত্রী মাদ্রাসা ইস্যুতে বিতর্কিত ও আপত্তিকর মন্তব্য করে মেরুকরণ ও বিভাজনের রাজনীতির মধ্যদিয়ে ভোট বাক্সে সুবিধা পাওয়ার চেষ্টা করছেন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।