|
---|
নিজস্ব সংবাদদাতা-বিরোধীদের তীরে কার্যত দিশেহারা শাসক দল। কখনো রাজপথে মানুষের অধিকার ফিরিয়ে দিতে, আবার কখনো অত্যাচারিত মানুষের হয়ে প্রতিবাদ করতে পার পার পথে গর্জে উঠছে বামেরা। বাংলায় আসন প্রাপ্তি শূন্য ঠিকই তবু মেজাজটা হারায়নি! বামফ্রন্টের প্রতিষ্ঠা দিবসে তাই বিচ্ছিন্ন ভাবে বেজে উঠল হারানো সুর!
সারা ভারত ফরওয়ার্ড ব্লকের 80 তম প্রতিষ্ঠা দিবসে দুবরাজপুর কর্মী-সমর্থকরা যে ক্যাসেট মাইকে বাজিয়ে চললেন, তাতে রয়েছে তৃণমূলের ‘অপশাসনে’র কথা! বাংলার সর্বনাশের কথা। যেখানে বলা হচ্ছে, ‘শাসক দলের অত্যাচারে শ্রমিক কাঁদছে, কৃষক কাঁদছে…’! সকাল থেকেই দুবরাজপুর ফরওয়ার্ড ব্লক পার্টি অফিসে সাজো সাজো রব। নেতাজির আদর্শকে বাঁচিয়ে রাখতে বহু মানুষের ভিড়। নেতাজির মত ও পথে নতুন করে ভারত বর্ষ গড়ার ডাক দিয়েছে বামফ্রন্ট নেতৃত্ব। আজকের এই প্রতিষ্ঠা দিবসে উপস্থিত ছিলেন দুবরাজপুর লোকাল কমিটির সাধারণ সম্পাদক স্বপন মুখার্জি, সভাপতি রমাকান্ত ভট্টাচার্য এছাড়া দুবরাজপুরের বহু সংস্কৃতি প্রেমী মানুষ ও প্রথম শ্রেণীর নেতৃত্ব।
স্বপন বাবু বলেন আমরা শিল্পপতিদের জন্য রাজনীতি করি না আমাদের রাজনীতি খেটে খাওয়া দিনমজুর ভাইদের জন্য। সমাজে অত্যাচারিত মানুষদের পাশে থাকার জন্য। নেতাজির আদর্শকে বুকে করে নিয়ে আমরা আবার এগিয়ে যেতে চাই। যে অশুভ শক্তি বাংলাকে ক্রাশ করতে চাইছে আমরা সেটা কখনোই হতে দেবো না। বেকারত্ব আজকে মহামারীর আকার ধারণ করেছে, সমাজকে কোণঠাসা করে দিচ্ছে বর্তমান শাসক দল আমাদের সবাইকে হাতে হাত রেখে এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। তিনি আরো বলেন সত্তরের দশক নানা কারণে বাংলার রাজনীতিতে চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে। এই সত্তরের দশকেই দেশে অভ্যন্তরীণ জরুরী অবস্থার অবসানের পর লোকসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে সারা দেশের মতো পশ্চিমবাংলাতেও কংগ্রেস পর্যুদস্ত হয়।
১৯৭৭ সালে কেন্দ্রে প্রথম অ-কংগ্রেসী জনতা সরকার গড়ে ওঠে। সেই বছরেই রাজ্য বিধানসভাগুলির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে পশ্চিমবাংলায় বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে বামফ্রন্ট সরকার তৈরি হয়। এই সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো ১৯৭৭সালের আজকের দিনেই।
১৯৭০ থেকে ’৭৭ সালের মধ্যে বাংলায় গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে পঙ্গু করে নৈরাজ্যের রাজত্ব গড়ে উঠেছিলো। সেই সময়ে কমিউনিস্ট ও বামপন্থীরা শাসক ও শোষকদের হাতে আক্রান্ত হয়েছেন, খুন হয়েছেন এবং সাজানো মামলার শিকার হয়ে জেল জীবন কাটিয়েছেন। ঐ সময়কালে শ্রমিক, কৃষক, কর্মচারী-সহ সমাজের সব অংশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করা হয়েছিলো। এই প্রেক্ষাপটে ২১শে জুন বামফ্রন্ট গড়ে ওঠার পর তৎকালীন বামফ্রন্ট সভাপতি কমরেড প্রমোদ দাশগুপ্ত ও মুখ্যমন্ত্রী কমরেড জ্যোতি বসু রাজ্যের বামপন্থী নেতা-কর্মী ও জনগণের কাছে বিরোধীদের সম্পর্কে কোনো প্রতিহিংসার মনোভাবের দ্বারা পরিচালিত না হতে আবেদন করেছিলেন।
বামফ্রন্টের প্রতিষ্ঠা দিবসে একথা দৃঢ়ভাবে বলা যায় যে, মানুষের ঐক্য, সংহতি, সম্প্রীতি রক্ষায় বামফ্রন্ট সরকারের উদ্যোগ এবং জনকল্যাণমূলক কর্মসূচী-সহ ঐ সরকারের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মধারা নজির সৃষ্টি করেছিলো আর ভবিষ্যতেও করবে।