মোবাইল টাওয়ার বসানোর নাম করে লক্ষ লক্ষ টাকার প্রতারণা

নিজস্ব প্রতিবেদক:- আবারও সক্রিয় সাইবার প্রতারণা। মোবাইল টাওয়ার বসানোর নাম করে লক্ষ লক্ষ টাকার প্রতারণা। মোবাইল টাওয়ার বসানোর নাম করে প্রতারণা চক্রের পর্দা ফাঁস করল বাঁকুড়া জেলা পুলিশ। গ্রেফতার করা হয় তিন যুবককে। জানা যায় ওই তিন যুবকের নাম শীর্ষেন্দু দে, বিবেকানন্দ মন্ডল এবং অভিজিৎ সরকার। শীর্ষেন্দু দে নামে গ্রেফতার হওয়া ওই যুবক সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। জানা যায় বিবেকানন্দ মন্ডল দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার অশোকনগর থানা এলাকার বাসিন্দা, অভিজিৎ সরকার দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার নিউ টাউন থানাএলাকার বাসিন্দা এবং শীর্ষেন্দু দে কলকাতার মানিকতলা থানা এলাকার বাসিন্দা। তাদের কাছ থেকে ১৪ টি মোবাইল ফোন এবং বিভিন্ন একাউন্ট সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় নথিপত্র উদ্ধার হয়েছে। তিনজনের এই বিষয়ে বৃহস্পতিবার বাঁকুড়া জেলা পুলিশ সুপারের দপ্তরে একটি সাংবাদিক সম্মেলন করা হয়। এদিন উপস্থিত ছিলেন বাঁকুড়া জেলা পুলিশ সুপার বৈভব তিওয়ারি, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিবেক ভার্মা, ডিএসপি ডিএনটি সুপ্রকাশ দাস, বিষ্ণুপুরের এসডিপিও কুতুবুদ্দিন খান সহ পুলিশ আধিকারিকরা।পুলিশ সূত্রে জানা যায় জয়পুর থানার বংশী চন্ডিপুরের বাসিন্দা, রাহুল বটব্যাল নামে এক ব্যক্তিকে টাওয়ার বসাবার প্রলোভন দেখানো হয়। সেইমত তার কাছ থেকে বিভিন্ন ধাপে প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ ওঠে একদল প্রতারকের বিরুদ্ধে। প্রতারণার শিকার হয়েছেন তিনি বুঝতে পেরে আর দেরি না করে তড়িঘড়ি রাহুল বাবু ৭ই জুলাই বাঁকুড়া জয়পুর থানা তে একটি লিখিত আকারে অভিযোগ দায়ের করেন। শুরু হয় তদন্ত। তারপরই পুলিশ প্রথমে অভিযান চালিয়ে উনিশে জুলাই তিনজন যুবককে গ্রেফতার করে। তাদের বিষ্ণুপুর আদালতে তোলা হলে বিচারক সাত দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন। ওই তিনজন যুবককে জিজ্ঞেসাবাদ করে সন্ধান মিলে একটি সাইবার জালিয়াতি চক্রের। সেই চক্রের হদিশ পেয়ে কলকাতার বিরাটী সংলগ্ন একটি কল সেন্টার থেকে আরও তিন যুবককে বুধবার রাতে গ্রেফতার করে বাঁকুড়া জেলা পুলিশ।এই বিষয়ে সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে বাঁকুড়া জেলা পুলিশ সুপার বৈভব তিওয়ারি জানান গত ৭ জুলাই জয়পুর থানায় একটি সাইবার ক্রাইম এর অভিযোগ দায়ের করেছিলেন রাহুল বটব্যাল নামে এক ব্যাক্তি। তার কাছে জিও এবং এয়ারটেল টাওয়ার বসানোর নাম করে ফোন এসেছিল। তারপর বলা হয় এক থেকে দেড় লক্ষ টাকা বাড়ির মালিক ভাড়া পাবেন তাদের জায়গায় ওই টাওয়ার বসানোর পরিবর্তে। এই টোপ দিয়ে একের পর এক নথিপত্র নেওয়া হয়। তারপর বিভিন্ন টোপ দেখিয়ে প্রায় ১৫ লক্ষ টাকার প্রতারণা করা হয়। ওই টাকা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এর মাধ্যমে ট্রান্সফার করা হয়। তারপরেই প্রতারণার শিকার হয়েছেন রহুলবাবু বুঝতে পেরে অভিযোগ দায়ের করেন জয়পুর থানায়। অভিযোগ পাওয়ার মাত্র তদন্তের অগ্রগতির স্বার্থে বাঁকুড়া জেলা পুলিশের ডিএসপি ডিএনটির নেতৃত্বে একটি স্পেশাল তদন্ত টিম গঠন করা হয়। শুরু হয় তদন্তের অগ্রগতি। আর তাতেই হাতেনাতে মেলে সাফল্য। কয়েকদিন আগে উনিশে জুলাই তিনজন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়। তারপর তাদের জেরা করে আরও তিনজনের নাম বেরিয়ে আসে। বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের সাহায্য নিয়ে কলকাতা এয়ারপোর্ট পুলিশ স্টেশনের মধ্যে বিরাটী বলে একটি জায়গা থেকে একটি কল সেন্টারের খোঁজ পাওয়া যায়। সেই কল সেন্টার থেকে আরও তিনজন যুবক কে গ্রেফতার করা হয়েছে। জানা যায় সেই কল সেন্টারের মাধ্যমে বিভিন্ন জায়গায় প্রতারণা হত। তাদের কাছ থেকে চৌদ্দটি মোবাইল বেশকিছু ব্যাংক একাউন্টের প্রয়োজনীয় নথিপত্র বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ ।মূলত যেখানে বেকার যুবকদের জন্য কাজের সন্ধান দেওয়া হয় এরকম অ্যাপ বা ওয়েবসাইটকে ব্যবহার করে এই সমস্ত প্রতারকরা। তারপর সেখান থেকে নাম্বার এবং নথিপত্র সংগ্রহ করে সেই সব বেকার যুবকদের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে সেই সমস্ত কল সেন্টারে ইন্টারভিউর মাধ্যমে চাকরি দেওয়া হয়। তারপর তাদের দিয়ে এই ধরনের বিভিন্ন প্রতারণামূলক কল করানো হয়। তারপর টাওয়ার বসানোর নাম করে বিভিন্ন ধাপে টাকা আদায় করে এই সমস্ত প্রতারকরা।