|
---|
মুহাম্মদ নাজমুস সাহাদাত, ফুরফুরা শরীফ: সম্প্রতি ভারতের পশ্চিমবাংলার বহু প্রাচীন জাঙ্গীপাড়ার বালিয়া বাসন্তি গ্রাম বর্তমানে ফুরফুরা শরীফ নামে পরিচিত ও ভারতের দ্বিতীয় মুসলিম তীর্থভূমি এই ফুরফুরা শরীফ । ঐতিহাসিক এই তীর্থভূমিতে আগমন উলিল আমর মোজাদ্দেদে যামান আমীরে শরীয়ত আবু বকর সিদ্দিকী আল কুরাইশী (রহঃ) যিনি ইসলামের প্রথম খলীফার বংশধর ছিলেন। তিনি ভারতের পশ্চিমবাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইসলামী শরীয়ত তরীকত প্রচার, ওয়াজ-নসিহত, মসজিদ ও মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা, পত্রপত্রিকা প্রকাশ ও শিক্ষা বিস্তারে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা অবদান রেখেছেন সৈয়দ আবু বকর সিদ্দিকী । সকলেরই সুপরিচিত হুগলি জেলার জাঙ্গীপাড়ার ফুরফুরা পশ্চিমবঙ্গের মুসলিমদের একটি প্রসিদ্ধ পীঠস্থান ।
এই পুণ্যভূমি কেবলমাত্র তীর্থস্থানই নয়, উভয় বঙ্গ আসামের ধর্মীয় শিক্ষাদীক্ষা কেন্দ্র হিসেবেও প্রসিদ্ধ। আজকের মত অতীতেও শিক্ষা-দীক্ষার কেন্দ্র হিসাবে বিবেচিত হতো এই ফুরফুরা । তৎকালীন যুগে সংস্কারক সৈয়দ আবু বকর সিদ্দিকী আলকোরায়েশী সুদূর মক্কা শরীফ ও মদীনা শরীফ থেকে শুরু করে পশ্চিমবঙ্গ, বাংলাদেশ, আসাম ও অন্য আরও স্থানে তাঁর খলিফাগণ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছেন বিভিন্ন প্রান্তে । এই ঐতিহাসিক মুসলিম তীর্থভূমিতে ১৩১ তম বাৎসরিক বাংলা সন ২১, ২২, ২৩ শে ফাল্গুন ফুরফুরা শরীফে ঐতিহাসিক ঈসালে সওয়াবে ওয়াজ নসিহত, জিকির ও দোয়ার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয় । এই ঐতিহাসিক ইসালে সওয়াব শুরুর দিন থেকেই বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষের ব্যাপক ঢল দেখা যায় ফুরফুরায় । রাজ্যসহ আসাম ত্রিপুরা এবং ওপার বাংলা থেকেও অগণিত অনুসারীগণ ফুরফুরা শরীফের ঈসালে সাওয়াবে আসেন ।
ফুরফুরার দরবার শরীফে আসা তীর্থযাত্রীদের মধ্যে জবের আলি , আব্দুল মালেক, গোলাম ইয়াসদানি, নুর মুহাম্মদ , গোলাম আমির হামজা, সাহিদুল ইসলাম রা জানান, আমরা এই ঈসালে সওয়াবে দীর্ঘ প্রায় ১০-১২ বছর ধরে আসছি । ফুরফুরা শরীফে এলে আমাদের মনের তৃপ্তি পায়, মূলত ফুরফুরা শরীফ আসার কারণ আত্মার শুদ্ধিরকরণ । ফুরফুরা শরীফে আমাদের একটা আত্মার সংযোগ আছে , তাই হাজারো কাজের মধ্যেও আমরা সব কাজ ফেলে দিয়ে ছুটে আসি ফুরফুরা শরীফে।
এখানে এসে প্রথমে দাদা হুজুর পীর (রহঃ)-র মাজার সহ অন্যান্য মাজারগুলিও জিয়ারত করি ।
মালদা জেলা থেকে মুহাম্মদ গোলাম রাব্বানী বলেন , আমরা ফুরফুরা শরীফের দাদা হুজুর ও পাঁচ হুজুর সহ সকল আওলাদদের অনুসরণ করি । ঈসালে সওয়াব ছাড়াও সারা বছরের বিভিন্ন সময় আমরা দরবার শরীফে যিয়ারাত এর উদ্দেশ্যে ছুটে আসি । আমরা ফুরফুরা শরীফে এলে যেন এক মনের মধ্যে থেকে অনন্য শান্তি ও মনে তৃপ্তি জোগায় ।
উল্লেখ্য , এই ৩ দিন ঐতিহাসিক ইসালে সওয়াবে বিভিন্ন রাজ্য এবং জেলা থেকে প্রায় ৭০ লক্ষ অনুসারীদের সমাগম হয়ে থাকে। তাদের সুবিধার্থে প্রত্যেক বছরের মতো এই বছরেও ফুরফুরা শরীফ আহলে সুন্নাতুল জামাতের উদ্যোগে বিনামূল্যে চিকিৎসা শিবির , পানীয় জল, কেক-বিস্কুট বিতরণ সহ থাকা খাওয়ার সুব্যবস্থা করা হয় । এছাড়াও বিভিন্ন সহায়তা কেন্দ্র করা হয় । দাদাহুজুরের প্রীয় পৌত্র পীরে কামেল আলি আকবর সিদ্দিকীর পুত্র পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকী ও পীরজাদা নাওসাদ সিদ্দিকী ও তার অনুগামীদের সাহায্যার্থে ফুরফুরা শরীফ থেকে প্রায় ৬ কি.মি. দূরে ১০০ বিঘা জমির উপরে গড়ছেন পীর আবু বকর সিদ্দিকী নলেজ সিটি। বিগত দু’বছর ধরে সেই নলেজ সিটির মাঠেও ওয়াজ নসিহত মাহফিল অনুষ্ঠিত হয় । যেখানে দাদা হুজুরের বড়ো স্বপ্ন ছিল জ্ঞানের শহর গড়ার তারই লক্ষ্যে সেই স্বপ্ন বাস্তবে রুপ দিচ্ছেন পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকী ও পীরজাদা নাওসাদ সিদ্দিকী সহ সকল অনুগামীরা ।
ফুরফুরা শরীফের উলিল আমর মুজাদ্দিদ জামান হযরত আবু বকর সিদ্দিকী (রাঃ)-র চতুর্থ প্রজন্ম পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকী জানান , ফুরফুরা শরীফ পৃথিবীর ধর্মীয় তীর্থভূমি ও ধর্মীয় শিক্ষা ও সংস্কৃতির এক অনন্য পীঠস্থান । এই তীর্থভূমিতে শুধু মুসলমান নয় সকল ধর্ম-বর্ণের মানুষের আনাগোনা হয় । এই তীর্থভূমিতে রয়েছে আমাদের পীর ও মুরশিদ দাদা হুজুর সৈয়দ আবু বকর সিদ্দিকী আলকোরায়েশী রহঃ । তাঁর নির্দেশে প্রতিবছর ২১, ২২, ২৩ শে ফাল্গুন ইসালে সওয়াবে ওয়াজ নসিহত , জিকির ও দোয়া খায়ের হয় । এই ঈসালে সওয়াবে ভারত ও বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রায়ই লক্ষ্য কোটি মানুষের সমাগম হয়।