নকল ওয়েবসাইট তৈরি করে চাকরিপ্রার্থীর সঙ্গে প্রতারণা,বেঙ্গালুরু থেকে গ্রেপ্তার নাইজেরীয় নাগরিক।

নতুন গতি নিউজ ডেস্ক। পুলিশের সাইবার থানায় একটি গুরুতর অভিযোগ জমা পড়ে গত ৩ই এপ্রিল। হরিদেবপুরের বাসিন্দা অনিরুদ্ধ ভট্টাচার্য জানান,একটি বিদেশি কোম্পানিতে চাকরির জন্য আবেদন করে জালিয়াতির শিকার হয়েছেন তিনি।

    অনিরুদ্ধ পেশায় মেরিন ইঞ্জিনিয়ার।একটি বিদেশি জাহাজ কোম্পানির ওয়েবসাইটে চাকরির বিজ্ঞাপন দেখতে পান একদিন। বেশ মোটা মাইনে। অন্যান্য সুযোগ সুবিধাও ভালো। লোভনীয় চাকরির এই সুযোগ ছাড়তে না চেয়ে তিনি ই-মেইল মারফত যোগাযোগ করেন কোম্পানির সঙ্গে। মেইলের প্রত্যুত্তরও আসে দ্রুতই। কোম্পানির পক্ষ থেকে তাঁকে ২টি ফোন নম্বর দেওয়া হয়। সেই নম্বরে ফোন করার পর কোম্পানির মুখপাত্র সমস্ত নথি, কাগজপত্র মেইল মারফত পাঠাতে বলেন তাঁকে।

    এরপর কোম্পানির সেই মুখপাত্র চাকরির নিশ্চিত আশ্বাস দেন অনিরুদ্ধকে। শুধু অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার, ওয়ার্ক পারমিট, ভিসা ইত্যাদির জন্য খানিক খরচ হবে। সব মিলিয়ে ৯,২৫,২৩৮ টাকা। টাকার অঙ্কটা বেশ ভালোই। কিন্তু এমন চাকরির জন্য একটু খরচ তো হবেই।তা ছাড়া কোম্পানির ওয়েবসাইট দেখে, মুখপাত্রের সঙ্গে কথা বলে সামান্যতম সন্দেহও হয়নি অনিরুদ্ধর। সমস্ত টাকাই তিনি পাঠিয়ে দেন নির্দিষ্ট অ্যাকাউন্টে। কিছুদিনের ভিতরেই অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার, ওয়ার্ক পারমিট, ভিসা ইত্যাদি চলে আসে মেইলের মাধ্যমে। সবটা মিলিয়ে তখনও পর্যন্ত অস্বাভাবিক কিছুই খুঁজে পাননি অনিরুদ্ধ।

    কিন্তু এরপরই কোম্পানির দিক থেকে সমস্ত যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। অনিরুদ্ধ ফের সেই কোম্পানির ওয়েবসাইট সার্চ করে তাদের ই-মেইল অ্যাড্রেসে গোটা ঘটনাটি জানান। কোম্পানি প্রত্যুত্তরে জানায়, চাকরির এমন কোনো বিজ্ঞাপনই নাকি দেয়নি তারা। শুনে আকাশ থেকে পড়েন অনিরুদ্ধ। সন্দেহ হওয়ায় আগের মেইল অ্যাড্রেসটি খুঁটিয়ে দেখতেই ব্যাপারটা স্পষ্ট হয়ে যায় তাঁর কাছে। কোম্পানির ওয়েবসাইটে দেওয়া নতুন ই-মেইল অ্যাড্রেস আর আগের ই-মেইল অ্যাড্রেসটি আলাদা। তিনি বুঝতে পারেন, এর আগে যে ওয়েবসাইট দেখে তিনি যোগাযোগ করেছিলেন সেটি জাল। দেখে যেন আসল মনে হয়, এমনভাবেই তৈরি করা হয়েছিল সেটি।চোখের ভুলে, দেখার হেরফেরে, সামান্য অমনোযোগে এমনটা হয়েই থাকে অনেক ক্ষেত্রে।একটা ডট বা _চিহ্নের হেরফের।এমনকি ই-মেইল অ্যাড্রেসটাও জাল। প্রতারিত হয়েছেন বুঝতে পেরে সাইবার থানায় এসে অভিযোগ জানান অনিরুদ্ধ।

    অভিযোগ পেয়েই তদন্তে নেমে পড়ে সাইবার থানার বিশেষ টিম। সোর্সদের খবর দেওয়া হয়।অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যও নেওয়া হয়। জানা যায়,ওয়েবসাইটটি তৈরি করা হয়েছিল বেঙ্গালুরুতে। দ্রুত বেঙ্গালুরুতে রওনা দেয় সাইবার থানার বিশেষ টিম। সেখানে ঘাঁটি গেড়ে বসে থেকে গোয়েন্দারা চিহ্নিত(বিস্তারিত তদন্তপ্রক্রিয়া উহ্য থাক) জিগানি থানার অন্তর্গত উডল্যান্ড হাইটস নামের একটি অ্যাপার্টমেন্ট থেকে গ্রেপ্তার করেন এই ঘটনার চাঁইকে। নাম ইচেজোনা ইমানুয়েল ওনিয়েন্ডি ওরফে টোনি কেভিন। ২টি দেশের পাসপোর্ট উদ্ধার হয় তার কাছ থেকে। একটি নাইজেরিয়ার, অন্যটি ঘানার। ২টি পাসপোর্টে তার নামও আলাদা আলাদা। জেরায় জানা যায়, সে আদতে নাইজেরিয়ার নাগরিক।

    ইচেজোনার জিম্মা থেকে ২টি মোবাইল ফোন ও একটি ল্যাপটপও উদ্ধার করেন তদন্তকারী অফিসারেরা। এই ল্যাপটপের মাধ্যমেই সে নানা কোম্পানির নকল ওয়েবসাইট, ই-মেইল অ্যাড্রেস তৈরি করে প্রতারণার কারবার চালাত। মোবাইলগুলি ব্যবহৃত হত চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলার কাজে। নিখুঁত চিত্রনাট্য,কিন্তু শেষরক্ষা হল না। সাইবার থানার অফিসারদের মগজাস্ত্রে খেল খতম! তার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুঁটিয়ে দেখে প্রতারিতদের থেকে টাকা লেনদেনের প্রমাণও মিলেছে।

    মাননীয় আদালত ইচেজোনা ইমানুয়েল ওনিয়েন্ডির ২০ জুলাই অবধি পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।