ভারত চীন সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছে বিদেশমন্ত্রীর মন্তব্যে যুদ্ধের জল্পনা তুঙ্গে

নতুন গতি ওয়েব ডেস্ক:পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ভারত-চীন সম্পর্ক গভীর সঙ্কটের মধ্যে রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন। শনিবার তিনি এক অনুষ্ঠানে ওই মন্তব্য করেন।চীনের উদ্দেশ্যে এস জয়শঙ্কর আরও বলেন, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় (এলএসি) স্থিতাবস্থা পরিবর্তন করার বিষয়টি একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়। চীন যদি সীমান্ত বিষয়ক দ্বিপক্ষীয় চুক্তির প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকে, একমাত্র তাহলেই স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসতে পারে।

    এস জয়শঙ্কর বলেন, ‘স্বাভাবিক অবস্থা ফেরাতে দু’দেশের মধ্যে হওয়া চুক্তির প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে হবে। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় স্থিতাবস্থা পরিবর্তনের করার যেকোনও প্রকার চেষ্টাই মেনে নেওয়া যায় না। তিন দশক ধরে ভারত-চীনের সীমান্ত বিষয়ক চুক্তি নিয়ে কোনওরকম সমস্যা হয়নি। সীমান্তে শান্তি বজায় ছিল। কিন্তু অতিমারী ছড়িয়ে পড়ার সময় থেকেই ভারত-চীন সম্পর্কে গভীর সঙ্কট তৈরি হয়েছে।’

    কয়েক মাস আগে পূর্ব লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় ভারত ও চীনা সেনাদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে ২০ ভারতীয় সেনা জওয়ান নিহত হয়েছিলেন। তারপর থেকে ভারত ও চীনের মধ্যে কূটনৈতিক ও সামরিক সম্পর্ক উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। এর প্রভাব পড়েছে বাণিজ্যিক সম্পর্কেও। দেশজুড়ে চীনা পণ্য বয়কটের ডাক দেওয়াসহ শতাধিক চীনা অ্যাপ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

    সম্প্রতি নয়াদিল্লি সফরের সময়ে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী মাইক পম্পেও ভারতের পাশে থাকার বার্তা দিয়ে চীনকে টার্গেট করে বলেন, ভারতের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ওয়াশিংটন সব সময়ই নয়াদিল্লির পাশে থাকবে। যে কোনও রকমের ‘বিপদ’ থেকে রক্ষা করতে একযোগে কাজ করবে দুই দেশ।

    মাইক পম্পেও’র ওই বার্তার পরেই গত বুধবার চীন সাফ জানিয়ে দিয়েছে, ‘সীমান্ত সমস্যা ভারত ও চীনের দ্বিপক্ষীয় সমস্যা। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা থেকে সেনা সরাতে এবং স্থিতাবস্থা ফেরাতে কূটনৈতিক ও সামরিক স্তরে আলোচনা চলছে। নিজেদের মধ্যে ওই সমস্যা সঠিকভাবে মেটানোর ক্ষমতা রয়েছে নয়াদিল্লি ও বেজিংয়ের। সেখানে তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপের কোনও সুযোগ নেই।’

    অন্যদিকে, সম্প্রতি ফ্রান্সের প্যারিসে একটি অনুষ্ঠানে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বলেছেন, ‘কয়েক দশকের মধ্যে চীনের সঙ্গে সীমান্তে সব চেয়ে ভয়ঙ্কর সঙ্কটের মোকাবিলা করেছে ভারত। গোটা বিষয়টি ‘পরিণত ভাবে ও দৃঢতার’ সঙ্গেই ভারত মোকাবিলা করেছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। এরপরেই এবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী এস জয়শঙ্করের মন্তব্য প্রকাশ্যে এলো।

    এ প্রসঙ্গে আজ রবিবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল মাতিন ‘পুবের কলম’কে বলেন, ‘এটা ঠিকই যে, এই বছরকে বিশ্ব রাজনীতিতে টুয়েন্টি ফার্স্ট সেঞ্চুরিকে বলা হয় দ্য সেঞ্চুরি অফ এশিয়া। এশিয়ার যে বড় সম্ভাবনা আছে, এশিয়ার দেশ যেমন চায়না, ভারত ও দক্ষিণ এশিয় দেশগুলো, আমার মনে হয় আমেরিকার হস্তক্ষেপে সেই সম্ভাবনা কোথাও না কোথাও থমকে যায়। একটা নয়া ওয়ার্ল্ড অর্ডারের যে ধারণা ছিল, কোনোভাবেই একমাত্র শক্তি, একটা সুপার পাওয়ার কর্তৃত্ব করবে না। সেজন্য আমার মনে হয় ভারত ও চীনের দ্বিপক্ষীয় বিষয়গুলো মিটিয়ে নেওয়া উচিত এশিয়া মহাদেশের জন্য এবং নয়া গ্লোবাল ওয়ার্ল্ড অর্ডার তৈরি করার জন্য। ভারত ও চীনের মধ্যে যদি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ঠিক হয়ে যায় তাতে দুই দেশের জন্য রাজনৈতিক স্থিতাবস্থা, ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে সবকিছুতেই সুবিধা হবে।’