ভোটের কথা ভেবেই কি বাড়ানো হলো ফ্রি রেশনের মেয়াদ?

নতুন গতি নিউজ ডেস্ক: বিরোধীদের দাবি মেনে বিনামূল্যে রেশনের সময়সীমা আরও কয়েক মাস বাড়িয়ে দিল কেন্দ্র। লকডাউনের কথা মাথায় রেখে দেশের মানুষকে বিনামূল্যে রেশন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল নরেন্দ্র মোদী সরকার। তার মেয়াদ চলতি মাসেই শেষ হতে বসলেও, কেন্দ্রের তরফ থেকে নতুন কোনও ঘোষণা হয়নি। দেশের বর্তমান আর্থিক পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে বিনামূল্যে রেশন ব্যবস্থা চালু রাখার পক্ষেই সওয়াল করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ দেশের বিভিন্ন বিরোধী রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ। প্রকাশ্যে না-বললেও, বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলি থেকেও একই দাবি উঠেছিল। সেই দাবিকেই শেষ পর্যন্ত মান্যতা দিল কেন্দ্র।

    বুধবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর জানিয়েছেন, এদিন কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে ফ্রি রেশনের মেয়াদ আরও চার মাস বাড়ানো হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর ফলে ২০২২ সালের মার্চ পর্যন্ত প্রতি মাসে মাথাপিছু ৫ কেজি খাদ্যশস্য দেওয়া হবে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনার পঞ্চম দফায় বিনামূল্যে রেশন দিতে কেন্দ্রের খরচ হবে ৫৩৩৪৪.৫২ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে মোট ১৬৩ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য বিলি হবে। কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমর টুইট করে জানিয়েছেন, কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের ফলে প্রায় ৮০ কোটি মানুষ উপকৃত হবেন।

    বছর ঘুরলেই উত্তরপ্রদেশ-সহ পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা ভোট। ২০২৪-এর লোকসভা ভোটের আগে এটাকে সেমিফাইনাল ম্যাচ হিসেবেই দেখছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। তার আগে ফ্রি রেশনের মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্তের পিছনে ভোটের অঙ্ক কাজ করছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা বহু দিন থেকেই দাবি করে আসছেন, দেশে করোনার গ্রাফ এখন নিম্নমুখী। মোদীর ক্যারিশমায় দেশের অর্থনীতি ক্রমশ ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। তাই বিনামূল্যের রেশন প্রকল্প তুলে দেওয়ার ভাবনাচিন্তা শুরু করে দিয়েছিল কেন্দ্র। এটা তুলে দিলে কেন্দ্রের ঘাড় থেকে আর্থিক বোঝা অনেকটাই কমবে। সেক্ষেত্রে পেট্রল-ডিজেলের দাম কমাতে সুবিধা হবে। কিন্তু ভোট বড় বালাই! ফলে বিজেপির অন্দরেই ফ্রি রেশন চালু রাখার পক্ষে জোরালো দাবি ওঠে। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয় বিজেপির জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকেও। তার কারণ, এ রকম একটি জনমোহিনী প্রকল্প হঠাৎ করে তুলে নিলে জনমানসে তার বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। সে জন্যই নরেন্দ্র মোদী সরকার ফ্রি রেশন চালু রাখতে একপ্রকার বাধ্য হলো বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।

    অল ইন্ডিয়া ফেয়ার প্রাইস শপ ডিলার্স ফেডারেশনের সম্পাদক বিশ্বম্ভর বসু বলেন, ‘আমরা সংগঠনের তরফে কেন্দ্রীয় সরকারকে চিঠি দিয়ে ফ্রি রেশন চালু রাখতে অনুরোধ করেছিলাম। আমাদের সংগঠনের সভাপতি তথা তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় প্রধানমন্ত্রীকে এই মর্মে চিঠি দিয়েছিলেন। পশ্চিমবঙ্গ সরকার আগেই ঘোষণা করেছে, কেন্দ্র বিনামূল্যে রেশন দিক না দিক রাজ্য সরকার পশ্চিমবঙ্গের মানুষকে নিখরচায় রেশন দিয়ে যাবে। কেন্দ্রীয় সরকারও সেই পথেই পা বাড়াল। আমরা কেন্দ্রের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছি।’ সৌগত বলেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছিলাম। যে কারণেই মেয়াদ বাড়াক না-কেন, এতে গরিব মানুষের উপকার হবে। কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তে আমি খুশি।’