জামালপুরের বিদ্যালয়ে চাষের সব্জি দিয়ে চলছে মিড ডে মিল।

লুতুব আলি, বর্ধমান, নতুন গতি : জামালপুরের বিদ্যালয়ে চাষের সব্জি দিয়ে চলছে মিড ডে মিল। পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর বিধানসভার অন্তর্গত তিনটি বিদ্যালয়ে চাষের সব্জি দিয়ে চলছে মিড ডে মিলের খাবার। গতানুগতিক শিক্ষা ব্যবস্থার বাইরে গিয়ে জামালপুরের তিনটি বিদ্যালয় তাদের নিজস্ব উৎপন্ন সবজি দিয়ে দুপুরের মিড ডে মিল চলছে। সরকারিভাবে প্রথাগতভাবে শিক্ষা ব্যবস্থা পরিচালিত হলেও জামালপুরের চৌবেড়িয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়, ঝাপান ডাঙ্গা সাবিত্রী দেবী বালিকা বিদ্যালয়, রেওরা প্রাথমিক বিদ্যালয় পরোক্ষভাবে কর্মকেন্দ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থা পরিচালিত করছে। গতানুগতিক শিক্ষা ব্যবস্থা ছাত্র-ছাত্রীদের একপ্রকার মেরুদন্ড ভেঙে দিচ্ছে। এই তিনটি বিদ্যালয়ে সাধারণভাবে পঠনপাঠনের সঙ্গে কর্মকেন্দ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থার পাঠ দিচ্ছে। এই তিনটি বিদ্যালয় তাদের নিজস্ব জায়গায় মিড ডে মিলের বিভিন্ন ধরনের সব্জি চাষ করছে। বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষিকারা, শিক্ষা কর্মীরা এ ব্যাপারে ছাত্রছাত্রীদের কাজে লাগিয়েছেন। মরশুমী সবজি পালং, মূলো, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ঢেঁড়স, উচ্ছে, বেগুন, পটল থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের সব্জি চাষ করছেন। শিক্ষা বিশেষজ্ঞদের অভিমত, কেবল পূর্ব বর্ধমান কেনো, সমগ্র রাজ্যে এই তিনটি বিদ্যালয় এক বৈচিত্রমুখী বার্তা দিচ্ছে। হাতে-কলমে শিক্ষাদান করে এই তিনটি বিদ্যালয় নজির সৃষ্টি করে চলেছে। এই বিদ্যালয়ে গুলিতে মিড ডে মিলের পাতে কোনদিন এঁচোড় চিংড়ি, কোনদিন শাক পোস্ত আবার কোনদিন ঢেঁড়স বা পাঁচ মিশালি সবজির তরকারি দিয়ে পড়ুয়াদের দুপুরের আহারের সামনে হাজির । পড়ুয়ার আনন্দদায়ক পাঠ ধানের সঙ্গে সঙ্গে আনন্দদায়কভাবে মিড ডে মিলের খাবার ও পাচ্ছে। এই ধরনের ব্যবস্থাপনা গড়ে ওঠার কারণে বিদ্যালয় গুলিতে ছাত্র-ছাত্রীদের উপস্থিতির হারও বেড়েছে। চৌবেড়িয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দিব্যেন্দু সেন শর্মা বলেন, তাঁরা বিদ্যালয়ে সবজির বাগান করে সেখানে নানা ধরনের সবজি ফলিয়েছেন এবং সেই সবজি দিয়েই মিড ডে মিল চালানো হয়। নিজেদের হাতে উৎপন্ন সতেজ শাক-সবজি ছাত্র-ছাত্রীরা পায়। বাজারি সবজি একপ্রকার বিষে ভরা। বাজার থেকে শাকসবজি কিনে আনলে কীটনাশক ওষুধের গন্ধ সরাসরি পাওয়া যায়। এই খাবার খেলে বিভিন্ন ধরনের উপকার তো দূরের কথা, বিভিন্ন ধরনের রোগের উপসর্গ দেখা যায়। রেওড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুদীপ্ত কুমার ঘোষ, সাবিত্রী দেবী বালিকা বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষিকা জয়তী আইচ মিত্র বলেন, বিদ্যালয়ে সবজি চাষ করে খরচের সাশ্রয় ও কিছুটা কম হয়। নিজেদের গাছের এঁচোড় থেকে বিভিন্ন পদের খাবার রান্নায় করায় ছাত্রছাত্রীরা আকৃষ্ট হচ্ছে। ছাত্র-ছাত্রীদের স্পেশাল নিউজ তৃষাণ হিসাবে অন্যান্য খাবারের সঙ্গে তাঁরা আখের রস ছাত্রছাত্রীদের খাওয়াচ্ছেন। প্রত্যহ খাবারের মেনুতে বৈচিত্র আনায় ছাত্রছাত্রীরা ভীষণ খুশি। জামালপুরের ব্লক সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক পার্থসারথি দে জানান, তাঁরা প্রতিটি বিদ্যালয়কে এ বিষয়ে উৎসাহ দিচ্ছেন যাতে কম বেশি সকলেই নিজেদের বিদ্যালয় কিচেন গার্ডেন করেন। এর জন্য সরকারি অনুদানও পাওয়া যায়। জামালপুরের এই তিনটি বিদ্যালয় তাদের নিজেদের বিদ্যালয়ে নিজেদের জায়গায় কিচেন গার্ডেন করে মিড ডে মিলে খাবারের জন্য সবজি চাষ করায় প্রশংসা করেন। জামালপুরের দুই অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক অনিন্দিতা সাহা ও রাজেন্দ্র প্রসাদ মাজি এই তিনটি বিদ্যালয়ের জন্য যথেষ্ট সুনাম করেন। তিনটি বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকা, শিক্ষা কর্মী এবং ছাত্র-ছাত্রীদের তাঁরা ধন্যবাদ জানান।