ডিউটিতে যোগ দিয়েছিলেন পায়ে হেঁটে কিন্তু বাড়িতে কফিনবন্দি দেহ এল জওয়ানদের কাঁধে

নিজস্ব প্রতিবেদক:- ডিউটিতে যোগ দিয়েছিলেন পায়ে হেঁটে কিন্তু বাড়িতে কফিনবন্দি দেহ এল জওয়ানদের কাঁধে। জাতীয় পতাকায় মোড়া কফিনমনদির নিথর দেহটা গ্রামে ঢুকতেই কান্নায় ভেঙে পড়ে গোটা গ্রাম। এইতো ১০ ই জুন চঞ্চল ছেলেটা বাড়ি থেকে কর্মস্থলের দিকে রওনা দিয়েছিল কিন্তু আজ বৃহস্পতিবার কফিনবন্দি হয়ে সহকর্মীদের কাঁধে চেপে এলো নিজের প্রিয় জন্মভূমিতে। বাঁকুড়া এক নম্বর ব্লকের গোড়াবাড়ির বাসিন্দা অমিত সিট। ২০০৬ সালে যোগ দিয়েছিলেন ভারতীয় সিআরপিএফ বাহিনীতে। বাড়িতে রয়েছেন স্ত্রী ছোট্ট দুই কন্যা , মা, বাবা, ভাই, ভাইয়ের স্ত্রী এবং ভাইয়ের এক পুত্র। সিআরপিএফ সূত্রে জানা যায়, অমিত সিট ছিলেন ৯৮ ব্যাটেলিয়ানের সিআরপিএফ কনস্টেবল। ১০ই জুলাই কর্তব্যরত অবস্থায় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন অমিত। তড়িঘড়ি তাকে শ্রীনগরের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দীর্ঘ চিকিৎসার পর জীবন যুদ্ধের সাথে লড়াইয়ে হার মানেন অমিত। ১৩ ই জুলাই শ্রীনগরের হাসপাতালে মারা যান তিনি। তারপর সেখান থেকে দিল্লি হয়ে প্রথমে দমদম এবং বৃহস্পতিবার সকাল নটা নাগাদ তার কফিনবন্দী দেহ নিয়ে আসা হয় তার গোড়াবাড়ির বাড়িতে। তার গ্রামবাসীরা তাদের গ্রামের ছেলেকে একটিবার দেখার জন্য ভিড় করেন তার গ্রামের বাড়িতে।গ্রামের সেই হাসি খুশির ছেলেটা আজ ফিরেছে কফিনবন্দি হয়ে। সিআরপিএফ জওয়ানদের পক্ষ থেকে দেহ নিয়ে যাওয়া হয় গোড়াবাড়ির তার বাড়িতে সেখানে কিছুক্ষণ রেখে তারপর গোড়াবাড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন একটি প্রাঙ্গনে যথাযোগ্য মর্যাদায় সম্মান জ্ঞাপনের জন্য গ্রামবাসীদের পক্ষ থেকে তৈরি করা হয়েছিল একটি মঞ্চ। সেখানে সিআরপিএফ আধিকারিক এবং জওয়ানরা পুষ্প স্তবক দিয়ে সম্মান জ্ঞাপন করেন তাদের সহকর্মীকে। তারপর গ্রামবাসীরা পুষ্প স্তবকের মাধ্যমে সম্মান জ্ঞাপন করেন তাদের গ্রামের ছেলে অমিতকে।চোখের জলে ভারাক্রান্ত হয়ে মা ,বাবা, স্ত্রী এবং ছোট্ট দুই কন্যাও সম্মান জানান অমিতকে। সেখান থেকে অমিতের দেহ নিয়ে যাওয়া হয় স্থানীয় পাতাকোলা শ্মশানে। সেখানে সিআরপিএফ জওয়ানরা গান স্যালুটের মাধ্যমে তাদের সহকর্মীকে শেষ শ্রদ্ধা জানান। চোখের জলে শেষ বিদায় জানান গোড়াবাড়ি গ্রামের বাসিন্দারা। গোটা গ্রাম জুড়ে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। অমিত সিটের এক সহকর্মী হাবলদার তপন দত্ত বলেন অমিত এর আগেও একবার অসুস্থ হয়েছিলেন। তাদের ব্যাটেলিয়ান চিকিৎসায় ঠিক হয়ে যায়।পেটের ব্যথায় অসুস্থ হয়ে হাসপাতলে ভর্তি হয় অমিত। শারীরিক অবস্থার অবনতী হয় । পরপর পাঁচটি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয় অমিত কে। শ্রীনগর থেকে এয়ার বাসে করে দিল্লি নিয়ে যাবার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু অবস্থার অবনতী এতটাই হয়েছিল যে তাকে এয়ার বাসে করে দিল্লি পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছিল না। তারপর ইমারজেন্সি ইনজেকশন দিয়ে তাকে শ্রীনগর শহরের সবথেকে বড় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত ১৩ জুলাই রাত একটা সময় শ্রীনগরের হাসপাতালেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে অমিত। ছেলে হিসেবে অমিত খুবই ভালো ছিল। কর্তব্য পরায়ণ এবং একনিষ্ঠ সৈনিক ছিলেন অমিত।