|
---|
নিজস্ব সংবাদদাতা : প্রয়োজন নেই কবিতার স্নিগ্ধতা, কবিতা তোমায় দিলাম আজকে ছুটি। ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়, পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি।। কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের ছাড়পত্র কবিতার এই লাইনটি যে কতটা তাৎপর্যপূর্ণ তা আমরা সকলেই জানি। আর আমরা এও বিশ্বাস করি ইহজগতে ক্ষুধার থেকে বড় ধর্ম ও অন্নর থেকে বড় ঈশ্বর বোধহয় কিছু নেই। একজন ক্ষুধার্ত মানুষের মুখে যদি কেউ অন্ন তুলে দেয় তাহলে সেই অন্নদাতা মানুষটি একজন ক্ষুধার্তের কাছে ভগবানের সমান।
রূপোলী পর্দার ছায়া ছবির নায়কের মতো রাত নামলেই একদল ছেলে বেরিয়ে পড়ে রাস্তায়। তবে এদের হাতে বন্দুক দড়ির বদলে থাকে খাবার টিফিন কৌটো। বাসস্ট্যান্ড থেকে শুরু করে অন্ধকার গলির মোড় যেখানেই অসহায় ক্ষুধার্ত মানুষ দেখতে পায় তারা তাদের কাছে পৌঁছে যায় খাবারের কৌটো হতে।মাস সাতেক আগে শেখ করিম আলী নামক আরামবাগের এক যুবক নিজের উপার্জনের কিছু টাকা বাঁচিয়ে শুরু করে সর্বহারা মানুষদের মুখে দুমুঠো অন্ন তুলে দেওয়ার কাজ। তার সেই কাজকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে একে একে তার বন্ধুরাও যোগ দেয় তার সঙ্গে। করিম আলী এ বিষয়ে জানান, তিনি একজন পেশাদার ফুটবলার বিভিন্ন ক্লাবের টুর্নামেন্টে খেপ খেলতে গিয়ে যা আয় হয় তারই একটি অংশ তিনি ব্যয় করেন এই সর্বহারা মানুষগুলির জন্য। পরবর্তীতে তার বাকি বন্ধুরাও তার দিকে সাহায্যের হাত বাড়ায়।তাঁরা সবাই মিলে স্থির করে নিজেদের উপার্জনের থেকে তারা একটা অংশ এক জায়গায় একত্রিত করে সেই টাকা থেকে সর্বহারা মানুষদের জন্য অন্নের ব্যবস্থা করবে।
সেই মতেই রোজ রাতের বেলা নিজেদের কাজ শেষ করে তারা বেরিয়ে পড়েন অসহায় মানুষগুলির খোঁজে। ঘন্টাখানেক ধরে গোটা আরামবাগে খোঁজাখুঁজি করে যাদেরকে তারা দেখতে পায় তাদের কাছে পৌঁছে যায় খাবার থলি হাতে। এই মানুষগুলোর জন্যই আরামবাগে প্রতিদিন রাতে দু’মুঠো অন্ন মুখে তুলতে পারে জীবনের সবকিছু হারিয়ে যারা বসে রয়েছে পথের ধারে সেই মানুষগুলি। এক কথায় বলা যেতে পারে সর্বহারা মানুষদের মাসিহা হলেন করিম আলী, শেখ সুরোজ ও তাদের বন্ধুরা।