পূর্ত দপ্তরের জায়গা দখল করে বেআইনিভাবে ৪৯ টি দোকান ঘর তৈরি করে বিতর্কের মুখে পড়েছেন পুরাতন মালদা পুরসভার চেয়ারম্যান কার্তিক ঘোষ

মালদা, ২৬ জুন । পূর্ত দপ্তরের জায়গা দখল করে বেআইনিভাবে ৪৯ টি দোকান ঘর তৈরি করে বিতর্কের মুখে পড়েছেন পুরাতন মালদা পুরসভার চেয়ারম্যান কার্তিক ঘোষ । এমনকি পূর্তদপ্তর কর্তৃপক্ষ তাদের জায়গা দখলমুক্ত করতে নবনির্মিত দোকান ঘরগুলি ভেঙে ফেলার আর্জি জানিয়ে পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন। পাশাপাশি পুরসভার চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বেআইনি কাজকর্মের অভিযোগ তুলে পুরাতন মালদা টাউন কংগ্রেস সভাপতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি পাঠিয়েছেন। দুই দিকের এই অভিযোগ নিয়ে চরম অস্বস্তিতে পড়ে গিয়েছেন পুরসভার চেয়ারম্যান কার্তিক ঘোষ। তিনি জানিয়েছেন, কোথাও কোনো বেআইনি কাজ হয়নি । নিয়ম মেনে কাজ করা হয়েছে। লটারির মাধ্যমে দোকানগুলি বিলি করা হবে।

    উল্লেখ্য, মৌলপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের পাশে পুরসভার লিংক রোডের ধারে পরপর ৪৯ টি পাকা দোকান তৈরি করেছে পুরাতন মালদা পৌরসভা কর্তৃপক্ষ।  একেকটি দোকান প্রায় ২০০ স্কয়ার ফিট করে রয়েছে।  চেয়ারম্যান কার্তিক ঘোষের নেতৃত্বে এই দোকান গুলি তৈরি হয়েছে। কিন্তু ওই দোকান ঘরগুলি পূর্ত দপ্তরের জায়গার উপর করা হয়েছে বলে অভিযোগ । এব্যাপারে পূর্ত দফতরের কর্তাদের কোন অনুমতি নেওয়া হয় নি। তাই পূর্ত দপ্তর থেকে ওই বেআইনি দোকান ঘরগুলি ভেঙে জায়গা দখলমুক্ত করার জন্য পুলিশ সুপারের কাছে আর্জি জানিয়েছে।

    গত বছর ৮ আগস্ট পূর্ত দপ্তরের এসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার তাদের জায়গা দখলমুক্ত করার ব্যাপারে পুলিশ প্রশাসনের কাছে লিখিতভাবে জানায় । এরপর ১৪ আগস্ট অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার ওই জায়গা দখলমুক্ত করার ব্যাপারে প্রশাসনকে চিঠি দেয়।

    পূর্ত দপ্তরের মালদার এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার অংশুমান চট্টরাজ জানিয়েছেন , কিসের ভিত্তিতে পূর্ত দপ্তরের জায়গার উপর পুরসভা দোকান ঘরগুলি তৈরি করলো । সম্পূর্ণ বেআইনি ভাবে কাজ করা হয়েছে।  পূর্ত দপ্তরের ওই জায়গা দখলমুক্ত করার জন্য আমরা পুলিশ সুপার এবং জেলা প্রশাসনকে লিখিতভাবে জানিয়েছি।  কোনোভাবেই পূর্ত দপ্তরের জায়গার উপর দোকানগুলি চালু করতে দেওয়া  যাবে না। এর জন্য উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। পাশাপাশি  এব্যাপারে যা যা আইনত ব্যবস্থা নেওয়া দরকার, সেগুলো আমরা নেব।

    এদিকে তৃণমূল কংগ্রেসের পুরাতন মালদা টাউন কংগ্রেস সভাপতি বিভূতি ঘোষ বলেন, কার্তিক ঘোষ  চেয়ারম্যান হওয়ার পর থেকে বেআইনি কাজকর্ম করে যাচ্ছেন । এতে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। পূর্ত দপ্তরের জায়গা জোর করে দোকান করেছে চেয়ারম্যান । ওই দোকান গুলোর জন্য প্রচুর কাটমানি নিয়েছে চেয়ারম্যান। কেবলমাত্র ব্যক্তিস্বার্থে চেয়ারম্যান এই ধরনের অনৈতিক কাজ করছেন। কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি করেছেন তিনি‌ দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বলেই আমরা দলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে চিঠি লিখে জানিয়েছি।

    পুরসভার এক কাউন্সিলর তৃনমূলের সৌমেন সরকার বলেন, নিজের পকেটে ভরতে দুর্নীতির খেলায় মেতেছেন চেয়ারম্যান । পুরসভার বিওসি বৈঠকে দোকানঘর তৈরি নিয়ে কোনোরকম আলোচনা করা হয় নি । সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে তৈরি করা হয়েছে দোকানগুলি। দুর্নীতিগ্রস্ত চেয়ারম্যানের অপসারণের দাবি জানানো হয়েছে। এব্যাপারে দলনেত্রী মমতা ব্যানার্জি কাছে আমরা লিখিত অভিযোগ জানিয়েছি ‌।

    এদিকে পুরাতন মালদা পুরসভার চেয়ারম্যান তৃনমূলের কার্তিক ঘোষ বলেন , মৌলপুর এলাকার রাস্তার ধারে দোকানগুলি তৈরি হয়েছে। লটারির মাধ্যমে সেগুলি বিলি  করা হবে । এতদিন কোনো অভিযোগ হলো না। এখন কে কি অভিযোগ করছে জানি না।  তবে সবটাই মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন।পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া জানিয়েছেন,  আমি কয়েকদিন হল মালদা জেলা দায়িত্ব পেয়েছি। আগে কি অভিযোগ হয়েছে তা খতিয়ে না দেখে বলতে পারব না।  বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে।

    ছবি ——– পুরাতন মালদার মৌলপুর স্বাস্থ্য কেন্দ্রের রাস্তার ধারে পূর্ত দপ্তরের জায়গার উপর এই দোকান ঘর তৈরি নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে।