|
---|
নূর আহমেদ,মেমারি, ২৬ মার্চ ২০২৪ : মাঘের শীতের তীব্রতায় যখন প্রকৃতিসহ মনুষ্যকুল ও জীবজগৎ কাবু, ঠিক তখনই আগমন ঘটে ঋতুরাজ বসন্তের। ফাগুনের হাওয়ায় উৎসবের রঙে মেতে উঠে প্রকৃতি। শীতে বৃক্ষের পত্ররাজি ঝরে পড়ে, প্রকৃতিতে আসে স্তব্ধতা। বসন্তের আগমনে সেই আড়মোড়া ভেঙ্গে প্রকৃতি হয়ে উঠে সজীব। বসন্তের আগমনধ্বনি পাওয়া যায় গাছের নতুন কুঁড়িতে। এক অনিন্দ্য সজীবতা, উচ্ছ্বাস আর আনন্দের পূর্ণরূপ শোভিত হয় বসন্তে। বসন্ত বাংলা বছরের সর্বশেষ ঋতু হলেও বসন্তকে ঘিরেই যাবতীয় উচ্ছ্বাস বাঙালির।
সোমবার দোল পূর্ণিমা বা দোলযাত্রা এবং বাঙালির কাছে এই দোল পূর্ণিমা বা দোলযাত্রা বসন্ত উৎসব নামেও পরিচিত। সকাল থেকেই ছন্দ, সুরে রাজ্য জুড়ে চলছে বসন্তবরণ উৎসব। মেমারি স্পোর্টস অ্যান্ড কালচারাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে পূর্ব বর্ধমান জেলার মেমারি নতুন বাসস্ট্যান্ডে পালিত হলো মেমারি বসন্ত উৎসব।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানলগ্নে উপস্থিত ছিলেন সাহিত্যিক শুভাশিস মল্লিক, মেমারি পৌরসভার চেয়ারম্যান স্বপন বিষয়ী, ভাইস চেয়ারম্যান সুপ্রিয় সামন্ত, মেমারি বিধানসভার বিধায়ক মধুসূদন ভট্টাচার্য্য, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ্ আশিষ ঘোষ দোস্তিদার সহ অন্যান্যরা।
মেমারি স্পোর্টস অ্যান্ড কালচারাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৌরভা সাঁতরা জানান এদিন এই বসন্ত উৎসবের মধ্য দিয়েই মেমারিতে পথচলা শুরু করলমেমারি স্পোর্টস অ্যান্ড কালচারাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন। যার মূল লক্ষ্য মেমারি শহর তথা আশেপাশে এলাকার ক্রীড়া-সংস্কৃতি সম্পন্ন মানুষদের নিয়ে ভবিষ্যত প্রজন্মকে একটি সুন্দর সমাজ উপহার দেওয়।
নৃত্য, গান, আবৃত্তি, শ্রুতি নাটক, লোকসঙ্গীত, লোক নৃত্য, ব্যান্ডের গান সহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজনও করা হয় মেমারি বসন্ত উৎসবে। পাশাপাশি এই বসন্ত উৎসবে সামিল হলেন মেমারির বহু নাগরিকই।
মেমারি স্পোর্টস অ্যান্ড কালচারাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের কোষাধ্যক্ষ পায়েল শেঠ জানান, প্রায় ৬০ জন শিল্পী অংশগ্রহণ করেন মেমারি বসন্ত উৎসবে। এত কম সময়ের মধ্যে মেমারি বসন্ত উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে তবুও মেমারির নাগরিকদের যে উৎসাহ ও সহযোগিতা পেয়েছি তার জন্য সকলকে ধন্যবাদ।
আবৃত্তির পাঠশালা, বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী ইন্দ্রানী মুখোপাধ্যায়, সঙ্গীত গ্রুপ স্বেতস্না, অরুন নৃত্য সংস্থা, বাংলা ব্যান্ড লালন স্টিং, সোলমেটস, গ্রুভস ব্যান্ড ছাড়াও স্থানীয় শিশু-কিশোর-কিশো রীরা নৃত্য, সঙ্গীত, আবৃত্তি পরিবেশন করেন মেমারি বসন্ত উৎসবে।
মেমারি স্পোর্টস অ্যান্ড কালচারাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক ব্রততী ঘোষ আলি জানান, মেমারি শহরের প্রাণে প্রথম থেকেই ছিল সাহিত্য, সংস্কৃতি, ক্রীড়ার স্পন্দন। ছোট থেকেই ইছাপুর মাঠ, হাটপুকুর মাঠে যেমন বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতা থেকে শুরু করে ফুটবল, ক্রিকেটের সাথে যোগাসন, অ্যাথলেটিক্সের প্রশিক্ষণ দেখে এসেছি ঠিক তেমনই বিভিন্ন সংস্থা দ্বারা সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার সাথে সাথে সঙ্গীত, নৃত্য, আবৃত্তি, নাটক নিয়ে সাংস্কৃতিক চর্চা।
কিন্ত বর্তমান প্রজন্মের বেশিরভাগ আজ মোবাইলের নেশায় বুঁদ হয়ে আছে। মেমারির সকল প্রবীণ-নবীন ক্রীড়া সংস্কৃতি ব্যক্তিদের নিয়ে মেমারি স্পোর্টস অ্যান্ড কালচারাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রজন্মকে মাঠমুখী ও মঞ্চমুখী করায় আমাদের লক্ষ্য।
রংবেরঙের আবির ছাড়া কি আর বসন্ত উৎসব মানায়, তাই তাই এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী ছোট বড় সকলেই রংবেরঙের আবিরে একে অপরকে দিলেন রাঙিয়ে, একদিকে নৃত্য গান আবৃত্তি সহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অপরদিকে একে অন্যকে আবিরে রাঙিয়ে দেওয়ার ছবি, যেন মেমারির নতুন বাসস্ট্যান্ডের বুকে উঠে এলো এক টুকরো শান্তিনিকেতন। সমগ্র অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বিশিষ্ট বাচিক শিল্পী ব্রততী ঘোষ আলি ও নাট্য শিল্পী শ্যামল মজুমদার।