সংখ্যালঘু মনে চাপা ক্ষোভ: রমজানের মধ্যেই তিন দফার ভোট পশ্চিমবঙ্গে

জাকির হোসেন সেখ, নতুন গতি, কলকাতা: রমজান মাসে লোকসভা নির্বাচনের তারিখ ঘোষণায় মুসলিমদের মধ্যে বেশিরভাগই  অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। রমজান মাসকে বাদ রেখে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেই ভালো হতো বলে তাঁরা মনে করছেন।

    আগামী ৫ কিংবা ৬ই মে থেকে সম্ভাব্য রমজান মাস শুরু হবে। আর পশ্চিমবঙ্গে ৬, ১২ এবং ১৯ মে শেষ তিনদফার ভোট। রোজা চলাকালীন ভোট দিতে হবে ভেবে বেশিরভাগ মুসলিমের মনে   অসন্তোষ। প্রসঙ্গত, পশ্চিমবঙ্গে ১১ এপ্রিল থেকে ১৯ মে পর্যন্ত সাত দফায় হবে লোকসভার ভোট।

    গতকালই এ প্রসঙ্গে মুখ খুলেছেন পশ্চিমবঙ্গের পৌর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী তথা কোলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম, দৈনিক ‘পুবের কলম’ পত্রিকার সম্পাদক ও রাজ্যসভার সাংসদ  আহমদ হাসান ইমরান, পশ্চিমবঙ্গের জনশিক্ষা প্রসার ও গ্রন্থাগার মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী, নাখোদা মসজিদের ইমাম শফিক কাশেমি, তৃনমূল বিধায়ক ডাঃ নুরুজ্জামান, সারা বাংলা সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, লেখক প্রাবন্ধিক এম এ সামসুদ্দিন, সাপ্তাহিক নতুন গতি পত্রিকার সম্পাদক ইমদাদুল হক নুর, পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বিরোধী দলনেতা কংগ্রেসের আব্দুল মান্নান, সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য মুহাম্মদ সেলিম, পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতির সভাপতি একেএম ফারহাদ, জামায়াতে ইসলামী হিন্দের রাজ্য সভাপতি মুহাম্মদ নুরুদ্দিন, রাজ্য জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের সাধারণ সম্পাদক মুফতি আব্দুস সালাম সহ বহু বিশিষ্টজন।

    কংগ্রেসের আব্দুল মান্নান ছাড়া সকলের প্রায় একই অভিমত। সকলেই বলেছেন,  ‘রমজান মাসে ভোট না হলেই ভালো হত। ভোট হল গনতন্ত্রের উৎসব। রোজাদারদের অবশ্যই অসুবিধা হবে নির্বাচন কমিশনকে এটা ভেবে দেখা উচিত ছিল। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের এই সিদ্ধান্ত দুঃখজনক হলেও মেনে নেয়া ছাড়া উপায় নেই। ‘

    সাথে সাথে সকলে একথাও বলেছেন যে, ‘দুর্গাপুজো কিংবা নবরাত্রির মতো যে কোন হিন্দু উৎসবের সময়েও ভোট হ‌ওয়া উচিত নয়। নাগরিকদের ধর্মীয় চেতনাকে অবশ্যই মর্যাদা দিতে হবে।’

    কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান বিপরীতে হেঁটে বলেছেন, ‘রমজানে ভোট হলে কোন‌ও অসুবিধা নেই। এর আগেও রমজান মাসে ভোট হয়েছে।’

    আব্দুল মান্নান যাই বলুন, এর আগে রমজান মাসে ভোট হয়েছে ২০১৩ সালে পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত ভোট। তাও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তীব্র আপত্তি থাকায় মামলা গড়িয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত। এবং শেষমেষ সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশেই হয়েছিল রমজান মাসে পঞ্চায়েত ভোট।

    গত ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচন‌ও রমজান মাসে করার ইচ্ছে ছিল রাজ্য নির্বাচন কমিশনের। তাই নিয়েও তৃনমূল সরকারের তীব্র আপত্তি আর রমজান মাসে কোন মতেই ভোট না করার অনুরোধ নিয়ে নাখোদা মসজিদের ইমাম মহম্মদ শফিক কাশেমী সহ আঞ্জুমান ইত্তেহাদ ই মিল্লাতের মতো অনেক সংগঠন বারবার নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছিলেন বলেই রুখে গিয়েছিল রমজান মাসে ভোট ।

     

    পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও মাদ্রাসা শিক্ষা দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী গিয়াসউদ্দিন মোল্লার কোন প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি গতকাল। দুপুরে  নতুন গতি পত্রিকার পক্ষ থেকে ফোন করতেই তিনি ফোন ধরেন। বললেন, এখন তিনি কলকাতার বাইরে। আগামী কাল বেলা দশটায় নিজের কেন্দ্রে ফিরবেন। রমজান মাসে ভোট প্রসঙ্গ নিয়ে প্রশ্ন করতে বললেন, ‘খুব‌ই দুঃখজনক ব্যাপার।  বিজেপি সরকারের আমলে মুসলমানদের কোন উৎসব অনুষ্ঠানের মর্যাদাই দেয় না এরা। ইচ্ছে করলে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনও ব্যাপারটা সহানুভূতির সাথে দেখতে পারতো। এখন দুঃখের সঙ্গে  বিষয়টা মেনে নিতে হবে।’