এসি সংরক্ষিত কামরা থেকে নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার ৩৬ ঘন্টা পর উদ্ধার হল কোচবিহারের সেই মহিলা যাত্রী।

মালদা, ০৩ জুলাই ।    এসি সংরক্ষিত কামরা থেকে নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার ৩৬ ঘন্টা পর উদ্ধার হল কোচবিহারের সেই মহিলা যাত্রী। রহস্যজনকভাবে ওই মহিলা যাত্রী শিয়ালদহ স্টেশন সংলগ্ন এলাকার একটি পরিত্যক্ত জায়গা থেকেই উদ্ধার হয় বলে দাবি পরিবারের। এরপরই রেল পুলিশ এবং স্থানীয় কিছু মানুষের সহযোগিতায় ওই গৃহবধূ তার পরিবারের কাছে ফিরে আসতে পেরেছেন। তবে ওই মহিলা যাত্রীর শরীরে থাকা প্রায় এক লক্ষ টাকার সোনার অলংকার লুট হয়েছে বলে অভিযোগ পরিবারের। মঙ্গলবার রাতে পুরো ঘটনাটি নিয়ে নতুন করে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। রেল পুলিশের নিরাপত্তা নিয়ম বিস্তর অভিযোগ করেছেন উদ্ধার হওয়া ওই মহিলা যাত্রীর পরিবার।

    ওই মহিলা যাত্রীর নাম নীলিমা রায় বর্মণ (২৩)। তার স্বামী রাজু রায় বর্মণ (৩০)।  তাদের পাঁচ বছরের একটি পুত্র  সন্তান রয়েছে। তার নাম  মায়াঙ্ক রায় বর্মন। তাদের বাড়ি কোচবিহার জেলার দিনহাটা ব্লকের ঝুড়িপাড়া এলাকায়। দিনহাটার প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত রাজু রায় বর্মণ।  গত রবিবার ধুপগুড়ি স্টেশন থেকে ডাউন ব্রহ্মপুত্র মেলে দিল্লি যাওয়ার উদ্দেশ্যে রাজুবাবু তার পরিবার নিয়ে দিল্লি যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলেন।

    মঙ্গলবার রাতে নীলিমা রায় বর্মণ নামে ওই মহিলা যাত্রী শিয়ালদহ থেকে একটি ট্রেনে করে ফারাক্কা স্টেশনে এসে নামেন। সেখান থেকেই ওই মহিলার পরিবারের লোকেরা তাকে মালদা টাউন স্টেশনে নিয়ে আসেন। এরপর রাতেই কোচবিহারের উদ্দেশ্যে তিস্তা-তোর্সা এক্সপ্রেস ট্রেনে করে রওনা দেয় নীলিমাদেবী ও তার পরিবারের লোকেরা।  তবে এই ঘটনার পিছনে দুষ্কৃতীদের লুটপাটের উদ্দেশ্য ছিল বলেই ওই মহিলা রেল পুলিশকে জানিয়েছে। তাকে অজ্ঞান করে পরিত্যক্ত কোন একটি এলাকায় ফেলে রাখা হয়েছিল বলেও অভিযোগ।

    মঙ্গলবার রাতে মালদা টাউন স্টেশনে রেল পুলিশের কাছে উদ্ধার হওয়া নীলিমাদেবীর স্বামী রাজুবাবু জানিয়েছেন,  সোমবার ভোরে তার স্ত্রী দিল্লিগামী ব্রহ্মপুত্র মেল ট্রেনের এসি সুপারফাস্ট কামরা থেকে হঠাৎই গায়েব হয়ে যায়। এই ঘটনার পিছনে দুষ্কৃতীদের ছিনতাই এবং স্ত্রীকে অপহরণের অভিযোগ তোলা হয়েছিল। বিভিন্ন স্টেশনে স্ত্রীর খোঁজ খবরও চালানো হয় ।কিন্তু তার কোনো খোঁজ মেলে নি।

    রাজুবাবুর বক্তব্য,  মঙ্গলবার দুপুরে স্ত্রী নীলিমাদেবী তাকে অচেনা একটি মোবাইল নম্বর থেকে ফোন করে বলে শিয়ালদহ স্টেশন সংলগ্ন একটি পরিত্যক্ত জায়গায় সে পড়েছিল অচৈতন অবস্থায়। কিছু মানুষ তাকে উদ্ধার করে। তার জ্ঞান ফেরার পর ঘটনা সম্পর্কে এলাকার মানুষদের জানায় । এরপর রেল পুলিশের হাতে ওই মহিলাকে তুলে দেওয়া হয় । পুলিশের সহযোগিতায় রাজুবাবুকে ফোন করেন। এরপরই উত্তরবঙ্গগামী একটি ট্রেনে ওই মহিলাকে তুলে দেওয়া হয় রেল পুলিশের পক্ষ থেকে । ফারাক্কা স্টেশন নীলিমাদেবী আসার থেকে তাকে নিয়ে মালদা টাউন স্টেশনে চলে আসেন পরিবারের লোকেরা।

    যদিও এদিন নীলিমাদেবীর অস্পষ্ট ভাষায় রেল পুলিশকে বলেছেন,  ব্রহ্মপুত্র মেলের শৌচাগারে যাওয়ার সময় হঠাৎ তাকে কেউ বা কারা মুখে রুমাল চাপা দিয়ে অজ্ঞান করে ফেলে । এরপর তার কোনও হুঁশ ছিলো না । যখন তার জ্ঞান ফিরে তখন জানতে পারে শিয়ালদহের কোনও একটি এলাকায় এসে পড়ে রয়েছে । তার হাতের সোনার বালা, নাকের ,কানের ,গলার চেইন সহ প্রায় সাত থেকে আট ভরি অলংকার ছিল।  যা দুষ্কৃতীরা লুট করেছে ।

    যদিও নীলিমা রায় বর্মণ নামে ওই মহিলা যাত্রীর কথায় অনেক অসংলগ্ন রয়েছে বলে মনে করছে তদন্তকারী রেল পুলিশের আধিকারিকেরা।  রেল পুলিশের এক কর্তা জানিয়েছেন , ব্রহ্মপুত্র ট্রেনটি শিয়ালদহ যায় না ।  তা সত্ত্বেও ওই মহিলা যাত্রী কিভাবে শিয়ালদহ এলাকায় গেল। এরপরে শিয়ালদহের কোথা থেকে সে উদ্ধার হয়েছে সেই ঠিকানা পরিষ্কার করে জানাতে পারে নি । রেল পুলিশের সহযোগিতা পেলে পুলিশ অবশ্যই মালদা অথবা বারহারোয়া স্টেশন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতো। এক্ষেত্রে কিছুই করা হয় নি। যে মোবাইল নম্বর থেকে ওই মহিলা তার পরিবারকে ফোন করেছিল সেই মোবাইল নম্বরের বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

    মালদা টাউন স্টেশনের জিআরপি’রা আইসি ভাস্কর প্রধান জানিয়েছেন,  যেহেতু ওই মহিলার পরিবারটি মালদা টাউন এবং বারহারোয়া জিআরপি’র কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছিলেন। দুটি এলাকা থেকে পৃথক ভাবে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। ঘটনার পিছনে দুষ্কৃতীদের ছিনতাই করে অপহরণ করার বিষয়টি কতটা সত্য সেটিও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।  তবে এই মুহূর্তে সবকিছুই অস্পষ্ট রয়েছে। প্রকৃত তদন্ত না হলে এখনই কিছু বলা সম্ভব হচ্ছে না।

    ছবি ——   মহিলা যাত্রী উদ্ধারের ঘটনায় মালদা টাউন স্টেশনে রেল পুলিশ ও পরিবারের লোকেরা।