শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধাচরণ করা যাবে না দিল্লি নেতৃত্বের বার্তা

নতুন গতি নিউজ ডেস্ক: শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধাচরণ করা যাবে না। রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের উদ্দেশ্যে আপাতত এটাই দিল্লি নেতৃত্বের বার্তা। রাজ্য বিজেপি-র একাংশ বলছে, প্রয়োজনে প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের মধ্যে কৈলাশ বিজয়বর্গীয়, শিবপ্রকাশ, অরবিন্দ মেননদেরও নিশানা করা যেতে পারে, কিন্তু শুভেন্দুতে নৈব নৈব চঃ। হাওড়া টাউন বিজেপির সভাপতি, ২৮ বছর ধরে সংঘ ও দল করা সুরজিৎ সাহা-কে দল থেকে বহিষ্কার করে এই বার্তাই দিলেন অমিত শাহ, জেপি নাড্ডারা। এমনটাই মনে করছে রাজ্য বিজেপির একাংশ।

    বিজেপির রাজ্য দফতরে পুরভোটের বৈঠকে জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে তৃণমূলের যোগসাজোশ নিয়ে শুভেন্দুর করা মন্তব্যকে মেনে নিতে না পেরে প্রকাশ্যে পাল্টা তোপ দেগেছিলেন সুরজিৎ। দলের অভ্যন্তরীন বিষয়ে সরসরি নেতৃত্বের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রকাশ্যে, সংবাদমাধ্যমে করে গুরুতর শৃঙ্খলাভঙ্গ করেছেন সুরজিৎ। এমনটাই মনে করছে বিজেপি-র একটা অংশ। তাঁর শাস্তি প্রসঙ্গে স্বাভাবিকভাবেই চর্চা শুরু হয়েছে। আর সেই চর্চায় যে সব বিষয়গুলি উঠে এসেছে…

    ১. সুরজিৎ সাহা শৃঙ্খলাভঙ্গ করে থাকলে, তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের কোন সুযোগ না দিয়ে সরসরি বহিস্কার করা হল কেন? সেক্ষেত্রে তাকে শোকজ বা কারণ দর্শানোর সুযোগ দেওয়া যেত। নিদেনপক্ষে সাসপেন্ড করা যেত। তা না করে তাঁকে যেভাবে সরসরি বহিস্কার করা হল, সেটা প্রশ্নাতীত নয়।

    ২. শৃঙ্খলাভঙ্গের শাস্তি একেক জনের ক্ষেত্রে একেক রকম হবে কেন? বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি তথা প্রাক্তন রাজ্যপাল তথাগত রায় প্রতিনিয়ত দিলীপ ঘোষ, কৈলাশ বিজয়বর্গীয় বা অরবিন্দ মেননদের উদ্দেশ্যে যেসব ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক আক্রমন ফেসবুক, ট্যুইটারে এমনকী প্রকাশ্যে সংবাদমাধ্যমে করে চলেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে কেন কোনও পদক্ষেপ করছে না বিজেপি? এক্ষেত্রে রাজ্যে সভাপতি বা রাজ্য বিজেপির শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির মত, তথাগত রায়ের বিরুদ্ধে তাঁরা পদক্ষেপ করতে পারেন না। এটা কেন্দ্রের বিষয়।

    কিন্তু, বিজেপির একাংশের মতে, তথাগত রায় প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি হলেও, দলে এখন তিনি একজন সাধারণ সদস্য মাত্র। ২৮ বছর ধরে দলের প্রতি আনুগত্য দেখানো সংঘের সদস্য, বর্তমান জেলা সভাপতিকে যদি শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে তাঁকে আত্মপক্ষ সমর্থনের কোন সুযোগ না দিয়ে তড়িঘড়ি বহিস্কার করা যায়, তাহলে কোন যুক্তিতে দলের কাছে একজন ‘সাধারণ সদস্য’ হয়ে ধারাবাহিক ভাবে একই আচরণ করার পরেও পার পেয়ে যান? তাহলে কি তথাগতর নিশানাকে মদত দিচ্ছে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতৃত্বের একাংশ? সেই কারনেই তথাগত রায় নিশ্চিন্তে একের পর এক তোপ দেগে চলেছেন দিলীপ ঘোষ শিবিরের দিকে।

    বিজেপির একাংশের দাবি, একটু চোখ, কান খোলা রাখলেই বোঝা যাচ্ছে, আসল রহস্যটা কোথায়? সোশ্যাল মিডিয়াতে একটু নজর দিলেই দেখা যাবে, বিরোধী দলনেতা হওয়ার পর শুভেন্দু অধিকারীকে রাজ্য বিজেপি-র অন্যতম সম্ভবনাময় লড়াকু নেতা বলে প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়েছিলেন তথাগত রায়। তথাগতর আশীর্বাদ নিতে দক্ষিণ কলকাতায় তাঁর বাড়িতে ছুটেও গিয়েছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। আর, সাম্প্রতিক কালে নির্বাচনে গো হারা হারার পর, হেস্টিংসে নতুন রাজ্য সভাপতির সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানে সুকান্ত মজুমদার, শুভেন্দুর পাশে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন তথাগত। শুধু তাই নয়, রাজ্য সভাপতি হিসাবে সুকান্ত মজুমদারের নাম ঘোষনার পরেই, ওই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানানোর ছলে সদ্য প্রাক্তন রাজ্য সভাপতির শিক্ষাগত যোগ্যতাকে কটাক্ষ করেছিলেন তথাগত।

    অনেকেরই মনে আছে, তথাগতর সেই ট্যুইট যেখানে তিনি লিখেছিলেন, অনেকদিন পরে দল একজন শিক্ষিত ব্যক্তিকে রাজ্যের দায়িত্ব দিল। নিজের ফেসবুক পেজেও একাধিকবার নতুন রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারকে একজন প্রকৃত শিক্ষিত, রুচিশীল ও প্রগতিশীল তরুণ নেতা হিসাবে মন্তব্য করেছেন তথাগত রায়।

    ‌বিজেপির একাংশ বলছে, এই কারনেই কি তথাগতরা ছাড় পেয়ে যাচ্ছেন বর্তমান রাজ্য নেতৃত্বের কোপ থেকে? রাজনৈতিক মহলের মতে, এটাই যদি কারণ হয়,তাহলে তা রাজ্য বিজেপির ভবিষ্যতের জন্য ভয়ঙ্কর। কারণ, এর অর্থ একটাই, কোন নেতার বিরুদ্ধে কথা বললে যদি এই মাশুল গুনতে হয় দলের পদধিকারীকে, তাহলে সেই দলে আর যাই থাক গণতন্ত্রের কোন ছায়া থাকতে পারে না। যার হাতে ক্ষমতা, তাঁকে না মানলে দলই করা যাবে না, এটা বিজেপির মত দলের পক্ষে ঘোর অশনি সংকেত বলেই তাঁদের মত।