ঝড়ের দাপটে একের পর এক গাছ ভেঙে বিপর্যয়! অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে শহর কলকাতা

নিজস্ব সংবাদদাতা : গাছ বিপত্তি তিলোত্তমায়। একের পর এক। শনিবার কালবৈশাখীর সময় ৯০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ের দাপটে একের পর এক গাছ ভেঙে বিপর্যয়! অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে শহর কলকাতা। তারপরই আবার ‘বিনা মেঘে বজ্রপাতে’র মত বৃহস্পতিবার সকালে এক টেলি অভিনেত্রীর চলন্ত গাড়ির উপর ভেঙে পড়ল গাছ। অভিঘাতে গাড়িটি পুরো দুমড়ে-মুচড়ে যায়। তুবড়ে যাওয়া গাড়িতে বরাতজোরে প্রাণে বাঁচেন অনন্যা গুহ নামে ওই অভিনেত্রী ও তাঁর বাবা। প্রাথমিকভাবে পুলিস মনে করছে, গোড়া আলগা হওয়ার দরুণ ভেঙে পড়ে গাছটি। এখন প্রশ্ন উঠছে, কলকাতা শহরে এমন বিপজ্জনক গাছ কতগুলি রয়েছে? আর তাতে যে উত্তর সামনে আসছে, তা আরওই ভয়াবহ ও আতঙ্কের।

    প্রাথমিকভাবে জানা যাচ্ছে যে, কলকাতা শহরের বুকে এই মুহূর্ত ঠিক কতগুলি গাছ বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে। তার কোনও সুনির্দিষ্ট তথ্য-ই নেই পুরসভার কাছে। পুর সূত্র বলছে, কলকাতা শহরের ফুটপাথে থাকা সিংহভাগ গাছ-ই বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে। মূলত কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, শিমুল এই গাছগুলো অত্যন্ত নরম। সেইসঙ্গে এদের শিকড়ও মাটির গভীরে নয়। শিকড় অগভীর হওয়ার জন্য, এই গাছগুলি অত্যন্ত সহজেই উপড়ে যেতে পারে। কিন্তু সব গাছ কেটে ফেলাও সম্ভব নয়। তবে আয়লার পর থেকে শহরে নতুন যে গাছ বসানো হয়েছে, সেখানে এই গাছগুলো বাদ দেওয়া হয়েছে। এখন মূলত নিম, দেবদারু, মহুল এই ধরনের গাছগুলি বসানো হচ্ছে। পার্কে ফলের গাছ বসানোতে জোর দেওয়া হয়েছে।

    এখন প্রশ্ন হল কেন এই অবস্থা? তাতে যে কারণগুলি উঠে আসছে-

    ১) অপরিকল্পিত নগরায়ন। পেভার ব্লক দিয়ে ফুটপাথ বাঁধিয়ে দেওয়া হয়েছে। গাছের গোড়া থেকে ৫ ফুট ছাড় না দিয়েই গোড়া শুদ্ধু পেভার ব্লক দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। এই পেভার ব্লক বসানোর জন্য প্রথমে বালি এবং তারপর সিমেন্টের স্তর তৈরি করতে হয়। এরফলে গাছের গোড়া বালি-সিমেন্টে ব্লক হয়ে যাচ্ছে। গাছের মূল যারজন্য শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে পারছে না।

    ২) কলকাতার ফুটপাথের নীচ দিয়ে টেলিফোন, CESC-র মত ইউটিলিটি সার্ভিসের তার গেছে। ফলে গাছের মূল বা শিকড় মাটির গভীরে পৌঁছতে পারছে না।

    ৩) পুরসভার নিজস্ব কর্মীর অভাবে গাছ ছাঁটাইয়ের দায়িত্ব কন্ট্রাক্টরদের দেওয়া হয়েছে। ফলে বৈজ্ঞানিকভাবে যেভাবে ক্যানোপি আকারে ছাঁটাই করা উচিত, তা হয় না। তার ফলে গাছ বড় হওয়ার সাথে তাল মেলাতে পারে না।

    ৪) যত্ন এবং সচেতনতার অভাব। ছোটো গাছ বসানো হয়। কিন্তু তারপর তার আর সঠিক যত্ন নেওয়া হয় না। যেমন রাস্তার ধার ধরে দেখা যাবে খাঁচা র মধ্যে গাছ। গাছ বড় হয়ে গেছে, কিন্তু খাঁচা যেগুলো চারাগাছ বাঁচাতে দেওয়া হয়েছিল সেটা রয়ে গিয়েছে। কোথাও সেই খাঁচা গাছের গায়ে ফুটে থাকে। কোথাও আবার সেগুলো ডাস্টবিন হয়ে যায়। গাছ ঠিকমত বেড়ে উঠতে না পেরে বেঁকে যায়।

    এই সবকিছু মিলিয়ে কলকাতায় গাছের সার্বিক চিত্রটা বিপজ্জনক। একটুতেই যা ভেঙে পড়তে পারে। ঝড়ে না পড়লেও, গোড়া আলগা বা নরম হয়ে থাকে। তারপর কোনও একসময় সেটি উপড়ে পড়ে।