দেশ জুড়ে কৃষি বিল নিয়ে বিরোধিতার পরেও সিদ্ধান্তে অনড় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি

নতুন গতি ওয়েব ডেস্ক :বিতর্কিত কৃষি আইনের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে যখন বিক্ষোভের আঁচ বাড়ছে, তখন চাষিদের ‘অপমান’ করার অভিযোগে বিরোধীদের দিকে আঙুল তুললেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মঙ্গলবার উত্তরাখণ্ডের নমামি গঙ্গের আওতাধীন ছ’টি প্রকল্প উদ্বোধন করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘কিছু মানুষ বিরোধিতা করবেন বলেই বিরোধিতা করছেন।’ চাষের কাজে অত্যাবশ্যক যন্ত্রপাতিতে আগুন লাগিয়ে প্রতিবাদ যে কৃষকের অসম্মানের সামিল সে কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দাবি, বিরোধীরা আদপেই চাষি-দরদি নন। এ প্রসঙ্গে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক ও কালো টাকার প্রসঙ্গও টানেন তিনি। বিরোধীরাও অবশ্য চুপ করে বসে নেই।

     

    কৃষি বিল পাশের পর দিন দেশে ফেরেন সনিয়া ও রাহুল গান্ধী। প্রথম কয়েক দিন সরকার-বিরোধী আন্দোলন নিয়ে কোনও কথা না বললেও সোমবার দলের অবস্থান স্পষ্ট করেছিলেন সভানেত্রী সনিয়া৷ তাঁর নির্দেশেই দেশের কংগ্রেসশাসিত রাজ্যগুলিতে নতুন কৃষি আইনকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে পাল্টা রাজ্যভিত্তিক আইন তৈরির প্রয়াস শুরু হয়েছে৷ এর ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই রাহুল যে ভাবে দেশের কৃষক সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন এবং তাদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন, তাতে কংগ্রেস যে মরিয়া হয়ে আসরে নামার চেষ্টা করছে, তা স্পষ্ট।

     

    মঙ্গলবার দেশের বিভিন্ন প্রান্তের কৃষকদের সঙ্গে ভিডিয়ো কনফারেন্সে কথা বলেন রাহুল৷ সেখানেই তিনি দলের নীতি স্পষ্ট করেন৷ রাহুলের অভিযোগ, ‘নতুন কৃষি আইন হল সর্বনাশা আইন৷ দেশের কৃষকদের মেরুদণ্ড ভেঙে দিতে চাইছে কেন্দ্র৷’ তাঁর দাবি, ‘নোটবন্দি, জিএসটির মতোই নতুন কৃষি আইন হল কালা কানুন, যেখানে ঠান্ডা মাথায় দরিদ্র কৃষকদের বুকে ছুরি বসানোর পরিকল্পনা করছে মোদী সরকার৷’

     

    কংগ্রেস সূত্রে জানা গিয়েছে, পাঞ্জাবে বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি অমৃতসরে একটি কৃষক সমাবেশে বক্তৃতাও দেবেন রাহুল৷ এই বিক্ষোভ সমাবেশের পরেই বিজেপি শাসিত রাজ্য হরিয়ানাতেও একই ধরনের বিক্ষোভ দেখাতে পারেন রাহুল৷ তবে হরিয়ানার বিজেপি সরকার সেই বিক্ষোভ সমাবেশের অনুমতি দেয় কি না, সেদিকেই লক্ষ্য রাখছে রাজনৈতিক মহল৷

     

    এই বিক্ষোভের পিছনে কৃষকদের মূল উদ্বেগ হলো, নয়া আইনের জেরে ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য (এমএসপি) মার খেতে পারে। তাতে প্রধানমন্ত্রীর যুক্তি, ‘দেশে এমএসপিও থাকবে, পাশাপাশি কৃষকেরা যেখানে ইচ্ছে সেখানে ফসল বিক্রি করতে পারবেন।’ এর পরেই বিরোধীদের সম্পর্কে তাঁর মন্তব্য, ‘আসলে এতে ওঁদের কালো টাকা উপার্জনের আরও একটি পথ বন্ধ হয়ে গেল। তাই সহ্য হচ্ছে না।’ মোদীর সংযোজন, ‘চাষিদের এহেন স্বাধীনতা পছন্দ নয় ওঁদের। তাই এমএসপি নিয়ে কৃষক সম্প্রদায়কে ভুল বোঝানো হচ্ছে।’

     

    এদিনই আবার পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দিয়েছেন কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য। তাঁর আর্জি, সংবিধানের ২৫৪/২ ধারাকে হাতিয়ার করে নয়া কৃষি আইনের পাল্টা আইন তৈরি করুক রাজ্য সরকার। নতুন কৃষি আইনের ফলে কৃষক ও কৃষি ব্যবস্থার কী ক্ষতি হবে, তাও চিঠিতে ব্যাখ্যা করেছেন তিনি।