নির্বাচনের আঙিনায় দেশের তরুণরা কেন এত উদাসীন?

মহম্মদ সাইফুল্লাহ, চাঁচল: নির্বাচন দরজায় কড়া নাড়ছে,দেশের তরুণরা কি ঠিক করতে পেরেছে যে তারা কাকে ভোট দেবে?দেশের প্রকৃত শিক্ষিত মানুষের অবস্থা শোচনীয়।বর্তমানে সমাজ থেকে রাজনীতি প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই শিক্ষিত মানুষেরা সব কিছু থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন,অন্যথায় অযোগ্য মানুষেরা নির্বাচিত হচ্ছে দেশ চালানোর কাজে।দেশে প্রতিনিয়ত বেকার সমস্যা বেড়ে চলেছে, চাকরি না পাওয়ার কারণে।আবার যাঁরা চাকরি পেয়েছেন তাঁরা উপযুক্ত পারিশ্রমিক পাচ্ছেন না, সমাজে অযোগ্যরাই সর্বেসর্বা।প্রকৃত শিক্ষিত মানুষের এই দেশে কোনো সম্মান নেই।অযোগ্য নেতা-নেত্রীদের অযৌক্তিক কার্যকলাপ দেশ ও সমাজকে পিছনের সারিতে দাঁড় করাচ্ছে।খুব সহজেই ধর্মীয় ভাবাবেগকে কাজে লাগিয়ে রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীগণ মানুষের সাথে অনৈতিকতা করে চলেছে l ভোট পাওয়ার যোগ্য তারাই, যারা প্রকৃত শিক্ষিত মানুষকে সম্মান করতে একটুও পিছপা হয় না, বেকারত্বের অবসান করে বেকার যুবকদের চাকরি দেয়, চাকরি জীবিদের উপযুক্ত হারে বেতন বৃদ্ধি করে, সমাজে মেয়েদের ইজ্জত রাখে ইত্যাদি বিষয়ে হাতেনাতে কাজ করবে।দেশের তরুণ প্রজন্মকেই এগিয়ে আসতে হবে উপযুক্ত প্রাথী বাছায়ে।

    তরুণ প্রজন্ম নীরবে চোখের সামনে ঘটে যাওয়া ভুলকে কখনও প্রশয় দেয় না।স্বভাবজাত তরুণরা ভুল শুধরাতে গর্জে উঠে।কিন্তু এই উপমহাদেশের তরুণদের সামনে বছরের পর বছর ধরে অন্যায় হয়ে আসলেও তারা নীরব।দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থার ধূলিসাৎ হওয়ার পরেও তারা নীরব।নির্বাচন ঘিরে অযোগ্য প্রাথীদের ভিড় তরুণদের মনে কি এখনও নাড়া দেয় না? বর্তমান ভারতে শতকরা প্রায় পঁয়ষট্টি জন তরুণ যুবক-যুবতি।এই তরুণ প্রজন্মের হাতেই ভবিষ্যতের স্টিয়ারিং ; এরাই দিতে পারে কলুষমুক্ত দেশ, এরাই নতুন পৃথিবী গড়ার কারিগর। তারুণ্য যৌবন কালের একটি উদ্দীপনার নাম। তারুণ্য বলতে বোঝায় সকল ধরনের জটিলতার চুটকি মেরে সমাধান।জীবন স্রোতের প্রতিকুলে পাড়ি দিয়ে জয় ছিনিয়ে নেওয়ায় তরুণদের ধর্ম। তারুণ্য একটি অদম্য শক্তি উদাহরণ।তারুণ্য একটি অপরাজেয় ক্ষিপ্ত ঝড়। তারুণ্য দৃপ্ত শপথে বিশ্বাসি। তারুণ্য এক অসাধ্য সাধনের কারিগর,সাধ্যের মধ্যে দিয়ে নীরবে অতিক্রম তারুণ্যের ধর্ম নয়। অফুরন্ত প্রাণ শক্তি আর নব সৃষ্টির উম্মাদনা-ই তারুণ্যের গৌরব। চেতনাদৃপ্ত তরুণরা যখন জেগে ওঠে তখন সকল প্রতিবন্ধকতার সব চড়াই-উৎরাই পেড়িয়ে তারা জয় ছিনিয়ে আনতে সক্ষম হয়।প্রতিটি যুবক-যুবতি’র মধ্যে ভবিষ্যতের নেতা-নেত্রী লুকিয়ে আছে, যা প্রছন্ন ও অস্পষ্ট অবস্থায় আছে।তরুণরায় পারবে ঘুনে ভরা দূষিত সমাজকে কলুষমুক্ত করা।এই তরুণরাই পারবে নির্বাচনের মাধ্যমে যোগ্য প্রাথীকে বেছে নিতে ও সরকার গঠন করতে।রাজনীতি, ধর্ম, সমাজ, শিক্ষা ইত্যাদি বিষয়ে যুবকদের অবদান প্রশ্নাতীত। শুধুমাত্র তরুণ-প্রজন্মই পারে জাতিকে একটি শান্তির ও কলুষহীন সমাজ উপহার দিতে। বর্তমান ঘুণেধরা এই সমাজের সাম্প্রদিকতা, দ্বিচারিতা, শিক্ষাহীনতা, অশ্লীলতা, নগ্নতা, বেহায়পনা, নির্লজ্জতা ও ব্যভিচার যুবসমাজই পারে দূর করতে। যুবকরাই পারে অজ্ঞতা, কুসংস্কার, ভীরুতা ও বাতিলের কালো থাবা থেকে জাতিকে মুক্ত করে অন্ধকারের বদ্ধ দুয়ার উমুক্ত করতে।

    দেশজুড়ে অযোগ্য নেতা-নেত্রীদের উচ্চ পদলাভ ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে সমাজ ও দেশকে।বাড়ীর প্রভু অযোগ্য হলে সেই পরিবার কখনও কল্যাণকর স্থানে পৌঁছাতে পারে না;ঠিক একই রকম ভাবে দেশের নেতৃত্বাধীন ব্যাক্তিবর্গ অযোগ্য হলে সেই দেশ কখনও উন্নত বিশ্বের কাতারে নাম লেখাতে পারে না।ভারতীয় উপমহাদেশের অবস্থা ঠিক এরকমই, অযোগ্য নেতৃত্বের নেতৃত্বাধীন।গণতান্ত্রিক অধিকার বলে অযোগ্য নেতৃত্বের অপ্রাসঙ্গিক ও অবান্তর সিদ্ধান্তের ছোঁবলে আপার দেশবাসী বিধ্বস্ত হচ্ছে।অযোগ্য ব্যাক্তির বিভিন্ন উচ্চ পদাধিকারের গতি ধামাতে একমাত্ৰ তরুণ প্রজন্মই পারবে। যোগ্য নেতৃত্ব ও কর্মতৎপরতার মাধ্যমে উন্নত দেশ গঠন এবং দেশের উন্নতি-অগ্রগতির ধারাকে অব্যাহত রাখতে যুবকদের ভূমিকার কোনো বিকল্প নেই। এ জন্য তাদেরকে উপযুক্ত জ্ঞানার্জনের মাধ্যমে যোগ্য হতে হবে। যাবতীয় ত্রুটি-দুর্বলতা ও আলস্য-তন্দ্রা দূর করে সাহসি হতে হবে। নৈরাশ্য ও হতাশাকে পদদলিত করে পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙ্গে সম্মুখপানে এগিয়ে যেতে হবে দৃঢ়তার সঙ্গে।দেশের নির্বাচন ঘিরে যে অন্যায় হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে।

    ইতিহাসের পাতা উলটালে সন্ধান পাওয়া যাবে যুবকদের দ্বারা পৃথিবী উপকৃত হয়েছে এবং পৃথিবীতে উত্তম আদর্শ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে-এমন শত শত উদাহরণ।পৃথিবীর বিভিন্ন বড় বড় বিপ্লবের ইতিহাস দেখলে তরুণদের উপস্থিতির হার অনেক বেশি।যেমন চীন বিপ্লবে চীনের হাজার হাজার যুবকদের উপস্থিতি পরিলক্ষিত হয়, ফরাসি বিপ্লবে ফ্রান্সের যুবকদের অবদান কে অস্বীকার করতে পারে?পার্শ্ববর্তী বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলনে যুব-শহীদের রক্তের দাগ এখনো তরতাজা বাঙালির প্রাণে।ভারতের স্বাধীনতার যুদ্ধেও লক্ষ লক্ষ যুবকের আত্মত্যাগ ও আমৃত্যু লড়াই ছাড়া ভারত স্বাধীন হত না।সর্বোপরি বলা যায় পৃথিবীর বিভিন্ন গণ আন্দোলন তরুণদের ছাড়া সম্ভব হয়নি।যৌবনকালটি অত্যন্ত মূল্যবান ও মর্যাদাপূর্ণ। পৃথিবীর ইতিহাসে প্রতিটি আন্দোলনের সাফল্যের পেছনে রয়েছে তরুণ সমাজের আত্মত্যাগ। তরুণদের রক্তের বিনিময়ে ভেঙ্গে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়েছে অসংখ্য অযোগ্য নেতৃত্বের নেতৃত্ব। আজও ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে আছে তরুণদের আত্মত্যাগের বহু স্মৃতিমূখর ইতিহাস।দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ নির্মাণের ক্ষেত্রে যুব সমাজের বাস্তবদর্শী আশা-আকাঙক্ষার সূত্রপাত ঘটাতে হবে।

    সপ্তদশ নির্বাচনের দামামা বাজতে শুরু করেছে উপমহাদেশের আকাশ জুড়ে।শহর থেকে গ্রামে নির্বাচন নিয়ে তর্ক সর্বত্র।স্বভাব বসত প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও অনেক অযোগ্য প্রাথী মনোনয়ন পত্র পেশ করবেন।জেলায় জেলায় তৃণমূল স্তরে হেভিওয়েট নেতা মন্ত্রীরা অযোগ্য প্রাথীর হয়ে চপার নিয়ে প্রচারে আসবেন,এবং আবারও তরুণ প্রজন্মকে দেশের সব চেয়ে বড় শক্তি আখ্যায়িত করে, তাঁদের কর্মসংস্থানে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা কথা বলে,তরুণ সমাজকে বোকা বানিয়ে পাঁচ বছরের জন্য উধাও হয়ে যাবেন।অযোগ্য প্রাথীরাও মাইক হাতে সিংহের মতো গর্জন করে বলবেন-“আমরা যদি সরকার গঠন করে দেশের সেবা করতে পারি, তাহলে আমি এটা দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে পারি, ২০২৪ সালের মধ্যে দেশে কোনো ক্ষুধা-দারিদ্র্য,হত্যা, ধর্ষণ, বেকারত্ব ইত্যাদি থাকবে না এবং দেশকে আমরা আরও উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাব।”এই বক্তব্য শুনে বোকার মতো শিক্ষিত তরুণরাও হাত তালি দেবে।কিন্তু দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বাঁধা বা কণ্টককে সমূলে উপড়ে ফেলার এইতো সময়।তরুণরাই পারবে সাম্প্রদায়িকতার বিষ ছড়ানো মহীরুহ কে সমূলে উৎপাটন করতে।সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনকে আন্দোলন রুপে নিয়ে এগিয়ে এসে সমাজ ও দেশকে কলুষমুক্ত করার এখনি উপযুক্ত সময় ।অযোগ্য প্রাথীরা কোন ক্রমেই যেন দেশ চালানোর দায়ভার না পায় ,সেদিকে তরুণদের লক্ষ্য রাখতে হবে।সপ্তদশ নির্বাচনে প্রতিটি তরুণ যদি যোগ্য প্রাথীকে ভোট দেয় তবে যোগ্য শাসক পেতে বেশি কাঠখড় পোড়াতে হবে না দেশকে।