|
---|
আলিপুরদুয়ার: জয়গাঁর মঙ্গলবাড়ির বাসিন্দা রাহুল এবছর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে। ব্যবসায় দারুণ ঝোঁক। স্বপ্ন, একদিন বিজনেস টাইকুন হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করবে। কিন্তু আর পাঁচজন পরীক্ষার্থীর মতো গরম ভাত-ডাল খেয়ে পরীক্ষা দিতে যাওয়ার ভাগ্য দলসিংপাড়া শ্রী গণেশ বিদ্যালয়ের এই ছাত্রটির নেই। অভাবের সংসারে কোনওমতে দুমুঠো খেয়ে পরীক্ষা দিতে যাওয়া। ফিরে এসে সঙ্গে সঙ্গে বেরিয়ে পড়তে হয় রোজগারের আশায়। চায়ের ঠ্যালাগাড়ি নিয়ে পাড়ার মোড়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ক্রেতার অপেক্ষা। তারপর রাতে বাড়ি ফিরে দুমুঠো মুখে দিয়ে মোমবাতির আলোয় বইয়ের পাতায় স্বপ্নপূরণের খোঁজ। রাহুলের বিশ্বাস, একদিন এভাবেই তার লক্ষ্যপূরণ হবে।
মা-বাবা ছাড়াও রাহুলের দুটি বোন রয়েছে। বাবা রজতকুমার বাসফোর নিরাপত্তারক্ষীর কাজ করেন। মা গৃহবধূ। এক বোন সপ্তম শ্রেণিতে, অপরজন অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে।
বাবা যে টাকা পান, সে টাকায় সংসার চলে না। ওই টাকায় তিনজনের পড়াশোনার খরচ চালানো শক্ত। তাই সংসারের হাল ফেরাতে রাহুল ছোটবেলা থেকেই রোজগারের খোঁজে নেমেছে। সুখের মুখ দেখতে খেলাধুলার বয়সে দোকানে কাজও করতে হয়েছে। কিন্তু পড়াশোনাও থেমে থাকেনি। সারাদিন কাজ করেও রাতের বেলা মোমবাতির আলোয়, কথনও বা টর্চ জ্বালিয়ে পড়াশোনা করেছে। এই করে ৬০ শতাংশ নম্বর পেয়ে রাহুল মাধ্যমিক পাশ করেছে। এখন লক্ষ্য উচ্চমাধ্যমিক। রাহুল বলে, একদিন বড় ব্যবসায়ী হব। পরিবারের দুঃখ ঘোচাব। তার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করতে হবে জানি। পড়াশোনা করতে হবে। তার জন্য আমি প্রস্তুত। বাবাকে একটু বিশ্রাম দিতে চাই। ছোটবেলা থেকে লোকটাকে লড়ে যেতে দেখছি। এখন বাকি লড়াইটা আমিই লড়ব। এখন চায়ের ব্যবসা দিয়ে শুরু করেছি। পরবর্তীতে ব্যবসা আরও বাড়বে এই আত্মবিশ্বাসটুকু আমার রয়েছে।