নদী ভাঙ্গন কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে, আতঙ্কে মুরার‌ইয়ের উত্তর রামচন্দ্রপুর

নিজস্ব সংবাদদাতা: বর্ষাকালে পাগলার জলের আওয়াজে হৃদয়টা বারবার নাড়া দিয়ে উঠে এই বুঝি ভাসিয়ে নিয়ে গেল গ্রাম। সারারাত জেগে থাকতে হয়। জানিনা এই দুর্ভোগের শেষ কোথায় কথাটা বলতে বলতেই চোখের কোনে জল মাজু বেওয়ার। উনি কথা বলার চেষ্টা করলেও কথা যেন বারবার আটকে যাচ্ছিল। প্রকৃতির তাণ্ডবের কাছে এবং প্রশাসনের অসহযোগিতার কারণেই ভোগান্তির শেষ নেই বীরভূম জেলার পাইকর থানার ( মুরার‌ই-২৯৪ বিধানসভা) আমডোল পঞ্চায়েতের উত্তর রামচন্দ্রপুরের মানুষের। উত্তর রামচন্দ্রপুর গ্রামটির পাশ দিয়ে গেছে এই পাগলা নদী। বর্ষার সময় ভয়ঙ্কর তাণ্ডবের রূপ ধারণ করে এই নদী। অর্পণ দাস, বরুণ মালদের কথায় চোখের সামনে দেখেছি বাড়িঘর ভেসে যেতে, নদীর পাড় ভেঙে রাস্তাঘাট নদীর জলে মিশে যেতে, দিনের পর দিন ধানক্ষেত জলের তলায় ডুবে থাকতে কিন্তু আমরা অসহায়।

    এগ্রামে পারাপারের একমাত্র উপায় হল নৌকা। নদীতে যখন জল আসে সারা গ্রাম ডুবে যায়,নদীর ধারে যে বাড়িগুলো অবস্থিত প্রতিবছরই বাড়িগুলো ভাঙতে থাকে। 2013 সালে নদীর ধারে পাথর বাঁধাইয়ের জন্য একটি প্রোজেক্ট শুরু করা হয়েছিল কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে সেই প্রজেক্ট বন্ধ হয়ে আছে।গ্রামবাসীরা কাজ বন্ধ হওয়ার কারণ জানতে চাইলে কন্টাকটার জানান টাকা শেষ হয়ে গেছে তাই কাজ করতে পারবোনা বলেই কাজ বন্ধ, গ্রামবাসীরা অনেক জায়গাতে যোগাযোগ করেও সেই কাজ আর চালু করতে পারেনি। তবে বর্তমানে যা পরিস্থিতি নদীর ধার বাঁধাই না করলে গ্রামটির একাংশ যেকোনো মুহূর্তে নদীর তলায় চলে যেতে পারে। নলহাটি ইরিগেশন দপ্তরের আধিকারিক সুজয় দাসের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান আমাদের কাছে যা টাকা ছিল সেই টাকা দিয়ে কিছুটা কাজ করা হয়েছিল। বর্তমানে নতুন করে প্রোজেক্ট না হওয়া পর্যন্ত এখন আর কাজ করা সম্ভব নয়।

    উত্তর রামচন্দ্রপুর গ্রামে আমাদের প্রতিনিধিরা গিয়ে বিষয়টি দেখে আসেন। সেখানকার মানুষ বর্তমানে যে সমস্যা গুলো রয়েছে সেগুলো তাদের জানান সেই সমস্যাগুলো তুলে ধরা হলো।

    ১/ বন্যার সময় পানীয় জলের দারুন সমস্যা রয়েছে, শৌচালয় গ্রামে নেই বর্ষার সময় শৌচকর্ম খুবই কষ্টকর। তাছাড়া রয়েছে প্রচন্ড জোঁকের উপদ্রব।

    ২/গ্রামের 70 টি বাড়ি যেকোনো মুহূর্তে নদীর তলায় চলে যেতে পারে, বেশিরভাগ বাড়ি ভগ্নপ্রায়। মাথার উপরে ছাদ টুকু পর্যন্ত নেই।

    3/যতদিন নদীতে জল থাকে এই গ্রামের বাচ্চারা স্কুলে লেখাপড়া করতে যেতে পারে না তাদের অভিভাবকের দাবি নৌকাতে করে পারাপার করতে হয়, প্রতি পদে পদে বিপদ থাকে আমরা আমাদের প্রিয় সন্তানদের এভাবে ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারিনা।

    4/গ্রামের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে একটি নদী পারাপারের জন্য সেতুর দাবি করে আসছে কিন্তু সেই সেতু স্বাধীনতার এত বছর পরেও গড়ে উঠেনি। গ্রামের কেউ অসুস্থ হলে বা কোন কারণে বাজারে আসতে হলে প্রায় ২১ কিলোমিটার পথ বাঁক দিয়ে আসতে হয়।

    5/ বরুণ মাল, মিনতি রবিদাস, মনোজ দাস, অর্পণ দাস,মাজু বেওয়াদের বাড়ি দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে স্থানীয় ব্লক সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিকদের সাথে তারা যোগাযোগ করলে আধিকারিক তাদের ত্রিপল না দিয়েই তাড়িয়ে দেন এবং যথেষ্ট অসম্মান করেন বলে অভিযোগ।

    6/”নুন আনতে পান্তা ফুরায়”অবস্থা এখানকার মানুষদের , এমনিতেই কাজ হারিয়েছেন তারা, বর্তমানে গৃহবন্দী তার উপরে বাড়িঘর ভেঙে পড়ছে কিন্তু প্রশাসনের তরফ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো সহযোগিতা পাইনি।